STORYMIRROR

ANKIT ROY

Classics Others

4.1  

ANKIT ROY

Classics Others

মা'কে....একটি বিষণ্ণ দুপুরে

মা'কে....একটি বিষণ্ণ দুপুরে

2 mins
386



ছিল সে এমনই দুপুর এক,

যবে প্রকৃতির দিকে চেয়ে 

অবাক হয়েছিলাম প্রথমবার।

এমন শ‍্যামলীময় গালিচ, তাতে

স্বর্ণচাঁপা রোদেদের পরাগ এসে পড়লে

চোখে ভেসে ওঠে জন্মেকার ভোর-

এমন সুনীল আকাশে 

পেঁজা পেঁজা মেঘেদের উড়নি উড়িয়ে 

আনমনা মন ছুটে বেড়ায়

ছেলেবেলার দামাল পায়ে;

এমনই ধন‍্য জন্মভূমি

বুকে যার উজাড় করা ভালোবাসা,

সবুজ আঁচলে যার সমস্ত বিপদের নিস্তার।

সেইদিন শালিখ-চড়ুই চড়ানো নিরিবিলি দুপুরে

মনে মনে বলেছিলাম-

"ও মা, তোকে বড়ো ভালোবাসি"।


মনে পড়ে একদিন রাতে

বুনো বায়সের কান ফাটানো চীৎকারে

খুব ভয় পেলে, মা আমার

অপার মমতা বুকে আগলে রেখেছিল আমায়।

তারপর বিপদ টলে গেলে

শূন্য চোখে দম নিয়েছিল বারকয়েক-

সেই ড‍্যাবড‍্যাবে দৃষ্টিতে

দেখেছিলাম শাবক হারানোর দুরাশা,

এখুনি যা স্তিমিত হয়েছে।


---   ---  ---   ---  ---  ---


সেই মমতাময়ী প্রকৃতির জল-হাওয়া খেয়ে 

সেই বিস্তৃত প্রান্তরে দিগন্তের দিকে 

ছুটতে গিয়ে দেখি:

আজ দুই দশক পরে আমি পরবাসী;

মা আমার সুদিগন্ত দূরে পড়ে আছে।

দূর থেকে ডাকি দুখিয়ারী সেই নিঃসঙ্গিনীকে,

পিছিয়ে যেতে গেলে

অদৃশ্য কিছু অন্ধকারের পোঁচে

মুখ জুড়ে নামে চিন্তার, যন্ত্রণার অমানিশা।


আমি ভাবি, সন্তান হারানোর শোকে

বিড়ম্বিত, পরাধীনা মাতৃভূমিতে

স্বাধীনতার পতাকা ওড়াব পুনর্বার।

স্মৃতিটুকু বুকে নিয়ে 

শব্দকোষে ডুব দিতেই দেখি:

উদ্বাস্তু ইতিহাসের 

বর্ণময় স্মৃতিকোঠা থেকে

 বহুবর্ণী এক ছায়াবৃতা,

আলো-আঁধারি মায়ায় 

আমায় সঙ্গ দিতে উদগ্রীব।

সে আমার পাছে পাছে চলে বহু বছর ধরে, 

আমারই চেতনার নিমগ্নতায় আশ্রয় তার।

আমার স্থবির হয়ে আসা 

স্বপ্নছেঁড়া গোলকধাঁধায়

সেই আমার একমাত্র ধ্রুবতারা।


---   ---  ---   ---  ---  ---


এইসব ভাবতে ভাবতে

সূর্যাস্তের দিকে মুখ করতেই দেখি:

শতাব্দী প্রাচীন আমার মাতৃভূমি আজ নিকটে।

মা আমার আজও বসে আছে দুঃখের জঞ্জিরে!

ধু ধু মরীচিকা আর খটখটে বুকে 

হয়তো আমায় আঁকড়ে ধরবে 

বিশ বছর আগে ছেড়ে চলে যাওয়া 

অপদার্থ সন্তানকে।


সমর্পিত কবিতাগুচ্ছ, 

গোধূলি বেলাকার ছায়া

আর আপোষহীন লড়াই বুকে 

আমি আরো জোরে পা চালাই।

দূর থেকে নিষ্ফল স্বপ্নদের

অভিমানী প্রেতাত্মারা আমায় চুমো খায়;

আমি শত চুম্বন অর্পণ করি জন্মদাত্রীকে।

প্রেত বলে: "এই গিরিখন্দর যদি পার হও,

পাবে মাতৃদর্শন-"

আপন ছায়াকে খন্দর পেরোতে দিলে

আমার কাঠ খোট্টা শরীরে অশরীরী বার্তা আসে।

আমি টলতে টলতে পড়ি মায়ের কোলে,

আমার দু'চোখ বেয়ে নেমে আসে

শৈশব খেলার মাঠ, পেটকাট্টি ঘুড়ি,

মাছরাঙা, জলপিপিদের আওয়াজ,

মায়ের আঁচলে হলুদের ছোপ...

আর ছুঁতে না পারা ছায়ার দিকে 

হাত বাড়াতেই দেখি:

কান্নার শিশুটিকে মা এবেলা জড়িয়ে রয়েছে বুকে!



Rate this content
Log in