বহুদূর
বহুদূর


তোমার বাড়িটা এখন অনেক দূর --
যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়ে উঠছে না ।
বাড়ির সামনেই একটা তুলসী গাছ লাগিয়েছিলাম
তোমার মায়ের তাতে সুবিধে হয় পুজো দিতে:
দোতলার বাঁকে সিঁড়িটা ভেঙেছিল একটু
সামলে চলো, রতন কে বোলো ঠিক করে দেবে ।
ঋতুর রঙে লাগানো পর্দাগুলো,
বসন্তের টা তো তোমার ভারী পছন্দ-
বড়ো ফুলদানির ফুলগুলো পাল্টিও কিন্তু মাঝে মাঝে,
হলঘরের ঝাড়বাতির যত্ন করে মনে করে ।
তোমার বাড়িটা এখন অনেক দূর --
যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়ে উঠছে না ।
সেবার কথা হয়েছিল জলছাদ হবে,
আর আমার ফুলের বাগানটা ছাদে নতুন ডিসাইন করে দেবে
অশোকের লালে গাছ টা ভরে গিয়েছে নিশ্চয়ই -
শেফালী তে পুজোর বার্তা আনে বয়ে। ..
সেই পূর্ণিমা রাতে সারারাতই প্রায় দুজনে ছাদে।.
রাতের প্রহরীর বাঁশি বাজছিল বারে বারে
তুমি বলতে বাড়িতে নাকি আমার সুবাস ঘোরে ।
তোমার বাড়িটা এখন অনেক দূর --
যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়ে উঠছে না ।
সেবার বাতাসিয়া লুপে কিছুক্ষণ আমায় খুঁজে পায়নি ভিড়ে
কি সাংঘাতিক তোমার চোখমুখের অবস্থা
আর শিলং গিয়ে পা ভাঙলো আমার,
তুমি পুরো সময়টা দিলে আমায় উজাড় করে।
বর্ষার রাতে বিদ্যুতের আলো আমি খুব ভয় পেতাম
আর তুমি বলতে অরে ও তো ও তো আকাশের হাসি:
খুব বৃষ্টিতে কিছুতেই অফিস যেতে চাইতে না তুমি -
অফিস ট্যুর থেকে ফিরে ছাড়বে না তুমি আমায় মোটেই ।
তোমার বাড়িটা এখন অনেক দূর --
যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়ে উঠছে না ।
তোমার তখন বারবার বিদেশপাড়ি,
কাজ, বাস্ততা, মেজাজটাও ঠিক থাকছে না;
সেবার তো বেশ কয়েক সপ্তাহ -
ফিরে এসেও রাইলে দূরে দূরে -
বাসন্তী পর্দা, অশোক ফুল, পূর্ণিমার বাগান,
অঝোর বৃষ্টি - আর আমার গন্ধ- সব থেকে তুমি দূরে।
মনের ঘর ভেঙেছি, গড়েছি বারবার
প্রশ্নের পাহাড় তুলে উত্তর পেয়েছি সমান্তরাল ।
(তবু) এখনো ঝমঝম বৃষ্টিতে মনের কোণে স্পর্শ
বাসন্তী রঙের ক্যানভাসে সব স্মৃতি
বিদ্যুতের আলো যেন আমায় দেখে বিদ্রুপ হাসে -
আর পূর্ণিমার রাতগুলো ভাসায় ভালোবাসায় ।
তোমার বাড়িটা এখন অনেক দূর --
যাবো যাবো করে আর বোধহয় যাওয়া হবে না ।