" বৈশাখ "
" বৈশাখ "
কবিতা # " বৈশাখ "
লেখা # প্রদীপ দে
হে বৈশাখ, তোমার নব আগমনের শুভক্ষনে,
সারা বঙ্গের প্রতি কোনে কোনে,
জেগে ওঠে এক উদ্যম শিহরণ,
ধরা মাঝে তব সৃষ্টি করে নতুন মানববন্ধন।
পাতায় পাতায় বাজে মর্মর ধ্বনি,
তব আনন্দেরও বাজে শঙ্খ বাণী,
হে বৈশাখ, তুমি এসেছ সবার দ্বারে,
বেনুকার মত সুরে সুরে আজ বাজিবে সবার ঘরে।
তুমি নাচিবে ছন্দে সাজিবে রঙ্গে,
নব উর্বশীর নব রূপাঙ্গে,
প্রতি ঘরে ঘরে সারাটি বঙ্গে।
হে বৈশাখ, তুমি যেন এই বঙ্গবাসির বহু সাধনার ধন,
তোমার আগমনে তাই তো সবার চঞ্চল আজি মন।
নতুন প্রীতির বন্ধনে আজ মত্ত বঙ্গমাঝে,
জীর্ন অন্ধ প্রাচীর ভাঙ্গিয়া নবনির্মিত সাঁজে।
মহাজন' তার জীর্ন খাতা জলাঞ্জলি দিয়ে,
নতুন খাতা কে করেছে গ্রহণ সিঁদূর পুষ্প নিয়ে।
নতুন বস্ত্র পড়েছে সবাই গাহিছে নতুন গান,
একে অপরের মাঝে যেন আজ বাধিয়াছে নব টান।
গতবছরের বেদনা দুঃখ সব স্নৃতি দিয়ে বলি,
নববর্ষের শুভক্ষণে করিতেছে সবে নবরূপে অঞ্জলি।
হে বৈশাখ, তুমি চার মহারূপে আস প্রতিবার ধামে,
হাসি দুঃখ-বেদনা স্মৃতি গেঁথে নিয়ে একখামে।
হে জীবন্ত-হে শৈশব হে নব বৈশাখ,
মানবের মনে তুমি যেন এক হাসিমাখা মৌচাক।
হে উড়ন্ত, হে দুরন্ত, দশ বছরের কিশোর বালক তুমি,
জ্বালা-যন্ত্রণা বুকে নিয়ে এক বিস্তর মরুভূমি।
ধু-ধু করে মাঠ ধুলিমাখা পথে উষ্ণ বায়ুর মাঝে,
সবকিছু নিয়ে মেতে থাকো তুমি আপন খুশির কাজে।
হে বিদ্রোহ, যেন বিশ বছরের যুবক,
হে মুক্ত হে শত্রু দমন নাশক,
তুমি ক্ষান্ত হও না জীবন নাশিয়া ভেঙ্গে দাও ভিটা বাড়ি,
তুমি সব কিছু লুটে শ্মশান বানিয়ে করো হুঁশিয়ার জারি।
চাই না তোমার ঔ কালো রূপ, চাই না কালবৈশাখি ঝড়,
বুকটা তাদের কাপে থরথর, যদি ভেঙ্গে যায় কুরে ঘর।
পাল তুলা মাঝি, জেলে ধরে মাছ শান্ত নদীর জলে,
পরিবার তাদের অনাহারে রবে তুমি উত্থাল হলে।
ফুটপাতে যার সম্বল ছিল একটি ছেড়া চাদর,
তুমি যদি সেটা কেড়ে নাও তবে, তোমায় করবে কেমনে আদর?
কম্পিত স্বরে জলভরা চোখে মিনতি করিছে সবাই,
হে বিদ্রোহ হে কাল বৈশাখ তোমায় করিতে চাহে যে বিদায়।
হে বৈশাখ, তুমি এসেছিলে মোরা হাসিয়াছি,
তুমি জ্বলেছ, মোরা জ্বলিয়াছি,
তুমি ক্ষেপেছ, মোরা কাঁদিয়াছি,
হে বৈশাখ, মোরা শুধু হাসি চায়
তুমি এসো নবরূপে সেজে,
দূঃখ-বেদনা বিদ্রোহ ভুলে এই পৃথিবীর মাঝে।
সুখ শান্তি গেঁথে চিরকাল জন্মিলে ভবপরে,
দেবতার মতো পূজিব সবাই মানবের মন্দিরে।