সব চরিত্র কাল্পনিক নয়
সব চরিত্র কাল্পনিক নয়
যাবতীয় ইনভেস্টিগেশন পর্ব মিটিয়ে লাগেজ প্যাকেজ নিয়ে ওয়ান স্টপ এয়ার ইন্ডিয়ার সিটে গিয়ে বসে নিজেক বেশ অচেনা বলে মনে হচ্ছিল সদ্য রিটায়ার্ড সরকারী কর্মচারী শিবানীর।
কিন্তু এটাই তো প্রথমবার না প্লেনে চড়া তার ;এর আগেও সে চড়ছে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফেরার পথে ,তবুও তখন তো এমনটা বলে মনে হয় নি তার ! তবে এইবার কেমন যেন বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে তার।
কলকাতা এয়ারপোর্ট ছাড়ার পর জানালার ধারে সিট পাওয়ায় শিবানী খুঁজতে থাকে বামনগাছি থেকে শিয়ালদহ যাবার ট্রেন লাইনটা। যে রেললাইনটা শিবানীর এক সময়ে চিরকাঙ্খিত ছিল।আজ সকলে তাকে সুখী বলে জানে৷ঝাড়া হাত-পা এখন সে।দু'মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে৷ শুধু কর্তা আর গিন্নির এই তিন কামরার ফ্ল্যাটঁটা এক এক সময় বড় নিঃসঙ্গ ,নির্জন বলে মনে হয় তার।
এই সুখটুকু কিনতে তাকে যে কতটা ত্যাগ ও পরিশ্রম করতে হয়েছে তার হদিস ক'জন জানে ।
বছর পঁয়ত্রিশ আগে ঐ সেইদিন যখন নাইট ডিউটি ছিল,আর মাঝপথে মানে ক্যান্টনমেন্টে ট্রেনের গণ্ডগোল৷প্রথম সন্তান পেটে তখন পাঁচ মাস হয়েছে সবে,সেই সময় ঐ ট্রেন থেকে খোয়ার উপর লাফ দিয়ে লাইন ধরে ধরে দমদম জংশনে এসে তারপর ভবানী ভবনে আসা,
সেই রাত টুকুর খবর আজ ক'জনকে জানাতে পেরেছে সে !
কিম্বা দেড় বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় সন্তানের আগমনে শরীরের ক্লান্তি ,খিদে ,অবসন্নতা যখন চরম তখন বাড়ির বড়-বউ বলে রাত বারোটার আগে দেওর ,ননদ ,জা'দের আর সর্বোপরি শ্বশুর শাশুড়ি কে ফেলে খেতে পারেনি সে কোন দিন ----সেই কথাই বা বাইরের লোকেরা তো দূর,নিজের সন্তান ও কি মনে রেখেছে কখনও !
প্লেনের জানালার কাচটা কেমন যেন ঝাপসা লাগছে এখন তার ।আর এই যে পাশের সিটে বসা তার নিকট প্রতিবেশী মানে কাছের মানুষ স্বামীটির কথাও না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যে কাহিনী ।দুই ননদ ,দুই দেওরের প্রতি সব রকম দায়িত্ব কর্তব্য করার পরেও যে মানুষটা ভুল রোগের শিকার হয়েছে জেনেও তাকে সন্তানদের থেকে আলাদা করে বাপের বাড়িতে রেখে গেল তিন মাস ----তাকেও তো বদলাতে কম দিন লাগে নি শিবানীর।আদ্যন্ত জমিদারী ছেড়ে সাউথ ক্যালকাটাতে বস্তির মতোন একটা বারো ঘর এক বাথরুমে কাটিয়েছে তারা বছর চোদ্দ,সে কষ্টকর দিনগুলো কি জীবনের পাতা থেকে মুছে দিতে পারবে কেউ ! নাহ্ আজ বড্ড বেশি সে নস্টালজিক হয়ে পড়ছে সে ।আর পিছনে তাকাবে না শিবানী।এখন শুধুই সুখের জীবন তার ।
আল্পস ,টেমস,স্যুইটজারল্যান্ড ,সুয়েজ খাল ,আইফেল টাওয়ার এখন তার প্রতীক্ষায় !