Debmalya Mukherjee

Children Stories Classics Fantasy

3  

Debmalya Mukherjee

Children Stories Classics Fantasy

কুলতলীর ময়নামাসি

কুলতলীর ময়নামাসি

3 mins
374



কুলতলির ময়নামাসি সেদিন উড়ে এল পলাশপুরে। পলাশপুরে গিয়ে পৌঁছোল শালিখদিদির কাছে।


-কী ব্যাপার ময়নামাসি হঠাৎ এলে যে হেথা?- শালিখদিদি বলল।


-কাজে এসেছি বোন, ভীষণ জরুরি কাজ। ছেলেটাতো বড়ো হয়েছে, বি এ পাশ করেছে একটা, বে থা তো দিতে হবে।


- ও এ তো খুবই ভালো খবর। তা মেয়ে ঠিক করে দিতে হবে, এই তো?- শালিখদিদি বলল।


ময়নামাসি বলল, তা যা বলেছিস্‌;


-তা তোমার ছেলের কী কী শখ আছে মাসি?


-সে গাইতে জানে, সে নাইতে জানে, সে ধুলোবালি মাখতে জানে। গোরুর পিঠে চড়তে জানে, মানুষ -খোকাদের ঠোকরাতে জানে।


-বাব্বা তবে তো দেখছি ছেলে অনেক কিছু শিখেছে- শালিখদিদি বলল।


-কার ছেলে তা তো দেখতে হবে।- বেশ গর্বের সঙ্গে বলল ময়নামাসি।তারপরই বলল, তা শুধু কথাই বলবি, না কিছু খেতে দিবি?


-কী খাবে বলো।-শালিকদিদি বলল।


-কী রেখেছিস শুনি?


-কেঁচো আছে, বাদামের খোসা আছে, আখের ছোবড়া আছে জ্যান্ত পোকামাকড়ও আছে।


ময়নামাসি বলল, কুলতলিতে আজকাল আমাদের অনেক নামডাক হয়েছে বুঝলি, আমরা একটু আধটু বড়োলোকও হয়েছি, কাজেই ফলের বিচিই দে, সেটা খাওয়াই ঠিক হবে। পোকামাকড় গরিবেরা খাক, কি বলিস?


শালিখদিদি বলল, তা যা বলেছ। বলেই তিনটি খেজুর-বিচি খেতে দিল ময়নামাসিকে।


চেটেপুটে তাই খেল ময়নামাসি। তার পর বলল, চল্‌ এবারে, মেয়ে দেখতে যেতে হবে।


শালিখদিদি ময়নামাসিকে নিয়ে উড়ে চলল কুসুমপাড়ায়। কুসুমপাড়ায় থাকে শালিকদিদির বন্ধু ময়নাদিদি। তাকে সবাই বলে কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।


কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি পলাশপুরের শালিখদিদিকে দেখে তো খুব খুশি।


পলাশপুরের শালিখদিদি বলল, তোর তো একটা মেয়ে আছে?


-হ্যাঁ তা তো আছে।


-ওর জন্য বিয়ের খবর নিয়ে এসেছি।-পলাশপুরের শালিখ বলল।


-এ তো খুবই ভালো খবর।- কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি বলল।


-এরই জন্য তো ময়নামাসি এসেছে। কুলতুলির ময়নামাসি। বড়ো উচ্চ ঘর ওদের, সাত পুরুষ ধরে ওরা ওখানে আছে, নিজস্ব ঘরবাড়ি। খেত-খামার চারদিকে রয়েছে, খাবারদাবারের কোন অভাব নেই। ওরই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায়।


-বাঃ এ তো খুবই ভালো খবর। তা কিছু মিষ্টিমুখ তো আগে করতে হবে। বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।


-না না তার দরকার নেই। পলাশপুরেই খেয়ে এসেছি- বলল ময়নামাসি।


-তা কি হয়? দুটো আখের ছিবড়ে দিচ্ছি , একটু চেখে দেখুন, একেবারে টাটকা। আজই আমার মেয়ে অনেক কষ্টে বাগান থেকে নিয়ে এসেছে।


তা শেষ পর্যন্ত আখের ছিবড়ে খেতেই হল ময়নামাসি ও পলাশপুরের শালিকদিদিকে।


ময়নামাসি বলল, তা এবার তোমার মেয়ে দেখাও।


কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি বলল, মেয়ে এখন সাজ করছে, সাজ শেষ হলেই নিয়ে আসব। তা আপনার ছেলে কী কী করে শুনি?


-কী আর করবে, এ বছর বি এ পাশ করেছে। নানা কাজে ওকে কখনো পলাশপুর, কখনও শিমুলতলি কখনও হাটতলায় যেতে হয়।ঘর পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। শুনছি ও নাকি কুলতুলির নেতা হবে। খাওয়াদাওয়ার কোনই অভাব নেই আমাদের ওখানে। গমের ক্ষেত আছে। কাজেই আমাদের ঘরে সবসময়ই খাবার মজুত থাকে। পোকামাকড় বড়ো একটা খাই না। আমরা এখন উচ্চঘর কি না!


-বাঃ এ তো ভালো খবর। আমার মেয়ে তবে সুখেই থাকবে, বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।


-হ্যাঁ, হ্যাঁ সুখে থাকবে বৈ কী! শুধু ঘর দেখবে আর বাচ্চাকাচ্চা সামলাবে।কাজকর্ম বিশেষ করতে হবে না, এটুকু বলতে পারি।


-হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছে ময়নামাসি। বলল পলাশপুরের শালিকদিদি। এরপর আরো দু-তিন কথার মধ্যেই ময়নামতি এসে পড়ল ওদের মাঝখানে।


ময়নামাসি বলল, তা তোমার নাম কী মা?


-টি-টি-টি, বলল ময়নামতি।


-বাহ্‌, কী কী কাজ করতে পারো?


-আখের মাঠ থেকে আখের ছিবড়ে আনতে পারি, জলে গিয়ে নাইতে পারি, কেউ বললে গাইতে পারি।


-আর কী কী পারো মা?


- মাসির বাড়ি যেতে পারি, পিসির বাড়ি যেতে পারি, রেলগাড়ির মাথায় চড়তে পারি, একলা একলা হাঁটতে পারি।


-বাহ্‌, খুব ভালো, বাহ্‌ খুব ভালো। এবার যেতে পারো মা।- বলল ময়নামাসি।


এরপর আলাদা করে কুসুমপাড়ার ময়নাদিদিকে বলল ময়নামাসি, তা বিয়েতে কী কী দিতে পারবে শুনি? আমার ছেলে তো বি এ পাশ করেছে, নেতাও হবে, ওর তো কিছু চাই।


-বেশ্‌, সজনাখালির মাঠ আমাদের নামে ছিল, ওটা তোমার ছেলের নামে করে দেব, কুসুমপাড়ার ঘাট তোমার ছেলের নামে করে দেব আর কুসুমপাড়ার ভোট তাও তোমার ছেলে পাবে, এটুকু বলতে পারি।


এসব শুনে ময়নামাসির খুবই আনন্দ হল। পলাশপুরের শালিখদিদিকে বলল, ভালোই হল, এবার ছেলেকে গিয়ে সব বলতে হবে। তুমি আমার জন্য অনেক করলে বোন।


-এ এমন আর কী! বলল পলাশপুরের শালিকদিদি।


-তোমাকে কিন্তু আমাদের সঙ্গে বরযাত্রী যেতে হবে। তোমার নিমন্ত্রণ রইল। যাবে তো?


নিশ্চয় যাব, বলল শালিকদিদি।


কুসুমপাড়ার ময়নাদিদিকে ময়নামাসি এবারে বলল, মেয়ে পছন্দ হয়েছে, এবারে যাই।


-আবার আসবেন, হাসিমুখে বলল কুসুমপাড়ার ময়নাদিদি।


-আচ্ছা। বলল ময়নামাসি।


বেলা গড়াল।


এরপর একজন উড়ে চলল কুলতলিতে আর একজন উড়ে চলল পলাশপুরে।


সূর্যঠাকুর তখন পশ্চিম আকাশে যাই যাই করছেন।



Rate this content
Log in