নবরাত্রি - ১ম দিন।
নবরাত্রি - ১ম দিন।
নবরাত্রি হল একটি হিন্দু উৎসব যা দেশে বছরে দুবার পালিত হয় - চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল) এবং শারদ মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর)। নবরাত্রি শব্দের অর্থ সংস্কৃতে নয়টি রাত এবং একটি উৎসব যা এই উভয় মাসে নয় দিন বিস্তৃত। এই নয়টি দিনের জন্য, নয়টি নবরাত্রির রঙ মনোনীত করা হয়েছে, প্রতিটির নিজস্ব নবরাত্রির রঙের তাত্পর্য রয়েছে। এছাড়াও, উত্সব যোগ করার জন্য, লোকেরা প্রায়শই নবরাত্রির রঙ অনুসারে বাড়িতে তাদের নবরাত্রি মন্দির সজ্জা করে । নবরাত্রি উদযাপন একটি উল্লেখযোগ্য স্থান ধারণ করে, বিশেষ করে ভারতীয় বাড়িতে ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নবরাত্রি নানাভাবে পালিত হয়। যাইহোক, হিন্দু দেবী কালী বা দুর্গার জয় হল নবরাত্রি উদযাপনের মূল ধারণা। নবরাত্রি সারা দেশে অগণিত নারীদের দ্বারা প্রিয় এবং লালিত হয়, যারা উপবাস করেন, নবরাত্রির সময় বাড়িতে বিশেষ খাবার এবং পানীয় তৈরি করেন । বাড়িতে নবরাত্রি উদযাপনের এই 9 দিনের মধ্যে তারা পোশাক পরে এবং বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে দেখা করে ।
আমরা যত রং দেখি সব রংই সবার পক্ষে প্রযোজ্য নয়। আবার প্রত্যেকেই মনের নির্দেশে সঠিক রংটিকে পছন্দ করে থাকি। এটি তার অবচেতন মনের ক্রিয়া। মানুষ যা কিছু করে তার অধিকাংশই অবচেতন মনের ক্রিয়া থেকে উৎপত্তি। প্রেম-বিবাহ-ভালবাসায় রঙের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নানা ভাবে নিজেদের ভালবাসার অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে। ভালবাসার অনুভব প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল রং। কিছু রং আমাদের সম্পর্ক ও রোম্যান্টিক অনুভূতিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
পেঁজা তুলোর মতো ভেসে চলা শরতের মেঘ, ঘন কাশবন, দেশি দোলনচাঁপা কিংবা ভিনদেশি লিলি, শান্তির প্রতীক কবুতর অথবা তুলতুলে নরম বিড়ালছানা- কোন রঙটির কথা মনে করায় আমাদের? সাদা।
আপনার ভালোবাসার জন্য প্রথম নবরাত্রির রঙ সাদা। এই নির্মল এবং শান্ত রঙ কে না পছন্দ করে? নবরাত্রির সাদা রঙের তাৎপর্য হল এটি শান্তি ও প্রশান্তি বোঝায়। দেবী ব্রহ্মচারিণী প্রেম এবং আনুগত্যের জন্য দাঁড়িয়েছেন। তিনি একজন দেবী যার ডান হাতে একটি জপমালা এবং বাম হাতে একটি জলের পাত্র রয়েছে। আপনি এই দিনে বাড়িতে আপনার নবরাত্রি মন্দির সজ্জার জন্য জুঁই বা সাদা পদ্মের মতো ফুল ব্যবহার করতে পারেন । সাদা পোশাক পরে ডেক আপ এবং বন্ধু এবং পরিবারের সাথে দেখা করুন।
নবরাত্রি দিনের জন্য 1 রঙটি সাদা, এবং ফুলের বিন্যাস হল নবরাত্রি মন্দিরের সাজসজ্জাকে সুন্দর করার সেরা উপায়। প্রথম শারদীয় নবরাত্রির রঙ সাদা, তাই সাদা রঙের থিম দিয়ে আপনার নবরাত্রি মন্দির সাজানোর পরিকল্পনা করতে, আপনি সাদা টিউলিপ ফুল বেছে নিতে পারেন। সুন্দর সাদা টিউলিপ দিয়ে মন্ডপের পেছনের দেয়াল সাজাতে পারেন।
সাদা এমন একটা রঙ যা আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের, কবির কবিতায়, গীতিকারের গীতে, শিল্পীর তুলিতে অসংখ্যবার জয়ধ্বনি হয়েছে সাদা’র। সাদা রঙ নিয়ে আমাদের মুগ্ধতা আর ভালোলাগার যেন শেষ নেই। তাইতো ঘরের দেওয়াল থেকে শুরু করে, বিছানার চাদর, খাবারের বাসন থেকে ঘরের আসবাব আমরা শুভ্রতায় মুড়ে দেই। কারন এই রংটিই আমাদের হৃদয়ে শুভ্রতার আর পবিত্রতার অনুভূতিকে তীক্ষ্ণ করে জাগিয়ে তোলে, সজীবতার পরশ জাগিয়ে তোলে আমাদের মনে। আমাদের জীবনে সাদা রঙের তাই বিশেষ অবস্থান।
সাদা-সাদা হলো শান্তি, পবিত্রতা,স্তব্ধতা আর স্নিগ্ধতার প্রতীক।একে অপরের প্রতি স্বচ্ছতা বোঝাতে কিংবা নতুন সূচনার সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই রং।
রংধনুর সাত রঙের আলোর মিশেলে সাদা আলোর সৃষ্টি। তাই হয়তো সব রঙের মাঝে সাদা রঙটি তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে উজ্জ্বল।
সাদা বা শ্বেত বা শুভ্র একটি রঙ বা বর্ণ। তিনটি মৌলিক রঙের আলো প্রায় সমান পরিমাণে চোখে আপতিত হলে এবং তা পারিপার্শ্বিকের চেয়ে উজ্জ্বলতর হলে চোখে যে রঙ দর্শনের অনুভূতি জন্মায়, তাই হলো সাদা। সাদা দর্শনে কোন হিউ (hue) এবং ধূসরতা থাকে না।
অনেক উপায়ে সাদা আলো উৎপন্ন হতে পারে। সূর্যের আলো সাদা রঙের একটি উৎস, যে বৈদ্যুতিক বাতিতে কোন বস্তুকে উত্তপ্ত করে তা থেকে আলো পাওয়া যায়, তাও সাদা আলো দেয়। আধুনিক ফ্লুরোসেন্ট বাতি এবং এলইডি বা লাইট এমিটিং ডায়োড থেকেও সাদা আলো পাওয়া যায়। কোন বস্তু যদি তার উপর আপতিত আলোকে পরিবর্তন না করে প্রতিফলিত করে তবে তা সাদা বলে প্রতীয়মান হয় যদি না তা সমভাবে আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে দর্পণে রূপ নেয়।
মেঘ, তুষার, ফুল ইত্যাদির মত সাদা বস্তু প্রকৃতিতে অহরহই দেখা যায়। তাই মনুষ্য সংস্কৃতিতে প্রায়ই সাদার উল্লেখ পাওয়া যায়, বিশেষ করে শুদ্ধতা এবং পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে। সাদা এবং কালোর মধ্যের চরম পার্থক্যের কারণে প্রায়ই বৈপরীত্ব বোঝাতে সাদা-কালো ব্যবহৃত হয়। চৈনিক সংস্কৃতির মতো কোনো কোনো সংস্কৃতিতে সাদা মৃত্যুর প্রতীক। অপরপক্ষে অনেক সংস্কৃতিতে সাদা শুদ্ধতা, মুক্তি এবং স্বাস্থ্যগত বিশুদ্ধতা বোঝায়।
সাদা রঙের সংস্পর্শে আসলে মন অন্যরকম ভালো লাগায় ভরে ওঠে। আর নিজের প্রিয় পোশাকটি যদি সাদা হয় তাহলে তো সেটার আবেদনও হয় অন্যরকম। যে সাদা পোশাক পরে, তার নিজের তো ভালো লাগেই, তার আশপাশে থাকা মানুষের মনও ভালো হয়ে যায় সাদার শুভ্রতায়।
সাদার আবেদন শুধু তার শুভ্রতাতেই নয়, সাদা পোশাক অন্যতম আরামদায়ক পোশাকের একটি। সেইজন্যই হয়তো গ্রীষ্মের সবাচাইতে বড় উদযাপন অর্থাৎ নবীন বছরকে বরনের উৎসব পহেলা বৈশাখে সাদার প্রাধান্য থাকে সবচাইতে বেশি। দলে দলে নারী পুরুষ আর শিশুরা সাদা আর লালের বন্দনায় মেতে ওঠে যেন। ইদানীং বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে সারা বছরব্যাপীই বলতে গেলে গরম থাকে আমাদের দেশে। তাই দেখা যায়, শুধু পহেলা বৈশাখ কিংবা একুশের প্রথম প্রহরেই নয়, সারা বছরই নানা উপলক্ষে মানুষ সাদাকে বেছে নিচ্ছে পছন্দের পরিধেয় হিসাবে।
একটা সময় ছিলো যখন সাদা মানে ছিলো বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত রঙ। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সীরা সাদা রঙের পোশাক কিছুটা এড়িয়েই চলতো। আজকের তারুণ্য সাদা রঙের পোশাকে যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের নেশায় মেতেছে। ঈদে, ফাল্গুনে এমনকি বিয়েতেও তারা বেছে নিচ্ছে সাদা রঙের পোশাক। দেখা যায় যে আমাদের আলমারির র্যাকে বিশেষ পোশাক হিসাবে সাদা, শাড়ি, পাঞ্জাবী, জামা কিংবা টি-শার্ট বিশেষ জায়গা দখল করে থাকে। দেশী ফ্যাশন হাউজগুলোতেও সাদা পোশাকের তাই বিশেষ সমাদর। সাদা কালো ফ্যাশন হাউজটি তো শুধুমাত্র সাদা আর কালো রঙকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। একজন প্রধান ড্রেস ডিজাইনার তাহসিনা শাহীন বলেন তিনি চারুকলায় পড়ার সময় থেকেই সাদা আর কালো- এই দুই মৌলিক রঙ নিয়ে কিছু করার কথা ভেবেছিলেন। কেন এই দুই রঙ? তিনি বলেন, এই দুই রঙের প্রতি মানুষের ভালোলাগা আগে থেকেই ছিলো, তিনি শুধু রঙ দুটোকে একটু বিশেষ করেছেন আর এক জায়গায় জড়ো করছেন।
সাদা কেন স্পেশাল এই প্রশ্নের উত্তরে তাহসিনা শাহীন বলেন, ‘সাদা একটু বেশিই ভালো আর সাদা পরলে মন ভালো হয়ে যায় তাই সাদা স্পেশাল।’
অনেকেই মনে করেন সাদা রঙের পোশাকে তাকে মানবেনা বা গায়ের রঙ চাপা লাগবে তাই সাদা পোশাক ইচ্ছা থাকলেও এড়িয়ে চলেন। তাদের জন্য তাহসিনা শাহীনের পরামর্শ, সাদার অনেক শেড আছে তাই সেসব শেড থেকে নিজের গায়ের রঙের সাথে মানানসই শেডটি বেছে নিলেই যেকোন ব্যাক্তিকেই চমৎকার মানিয়ে যাবে সাদা। তাছাড়া সাদার সাথে যেহেতু অন্য যেকোন রঙের মিশেল খুব ভালো লাগে তাই চাইলেই উজ্জ্বল যেকোন রঙের এক্সেসরিজের ব্যাবহারে সাদা পোশাককে বিশেষত্ব দেওয়া যায়। যেমন তিনি বলেন যে কেউ চাইলেই সাদা জামার সাথে নীল একটা টিপ বা নীল ব্যাগ নিতে পারেন যেটা খুবই সুন্দর লাগবে।
একটি বিখ্যাত বিউটি সেলুনের স্বত্ত্বাধিকারী সিন্থিয়ার মতে সাদা পোশাকের সাথে খুব চড়া মেকাপ না করে বরং চোখ কিংবা ঠোঁট যেকোন একটিকে হাইলাইট করা যায়।
চোখের উপর নীচে মোটা করে যেকোন রঙের কাজল পরা যায়। সেক্ষেত্রে লিপস্টিক বেছে নিন হালকা গোলাপী অথবা পিচের শেড।
আর লিপস্টিক যদি উজ্জ্বল গোলাপী, লাল কিংবা ম্যাজেন্টা হয় তাহলে চোখে আইলাইনার দিয়ে সাজুন।
আর উৎসবে সাদা রঙ বেছে নিলে স্মোকি আই সাজ খুব ভালো মানবে। সেক্ষেত্রে বাদামী, কালো, সবুজ কিংবা নীল স্মোকি আই বেছে নিতে পারেন।
নিয়মিত ব্যাবহারের ক্ষেত্রে মেকাপের চেয়ে এক্সেসরিজ ব্যবহারে জোর দিন। যেমন কানের দুল, ব্যাগ, আংটি, মালা কিংবা জুতো যেকোন একটি বা দুটিকে ফোকাস করুন।
সুতি কিংবা খাদির পোশাকের সাথে উজ্জ্বল পাথরের গয়না ব্যবহার না করে কাঠ, মাটি, কাপড়, পুঁতি, মুক্তা, অক্সিডাইজড, কপার বা রুপার গয়না বেছে নিতে পারেন।
বিয়ের জন্য যদি কেউ সাদা জামদানী কিংবা কাতান বেছে নেন সেক্ষেত্রে কপার কালার করা সোনা, রুপা, হোয়াইট গোল্ড অথবা ডায়মন্ড বেছে নিতে পারেন।