রিক্ত শূন্যতা
রিক্ত শূন্যতা
_____বৃষ্টি কি তোমার ভালো লাগে না ?
বৃষ্টি দেখলেই কেমন মনমরা হয়ে যাও তুমি। উদাসীন একটা চাহনি থাকে তোমার চোখে
কেন যেন মন হয় লুকিয়ে রাখো কিছু একটা আমার থেকে ।
_____যানো তো মানুষের জীবনের গতিরোধক গুলো রাস্তার মতো এতোটা সহজ নয়
মানুষ কষ্ট পেতে পেতে সব কিছুই সয়ে যায় ।
আচ্ছা নীলা তুমি কি আমাকে বুঝো ?
______আমি তোমাকে বুঝি, তোমার দুঃখ কষ্ট সব বুঝি
তোমাকে না বুঝলে তোমার আকাশের দুঃখ বুঝবো কি করে?
তবে তুমি যদি আমাকে বুঝতে
তাহলে মাঝপথে হাত ছেড়ে যেতে?
______সব পথিক গন্তব্যে পৌঁছায় না
সব ভালোবাসা পূণতা পায় না
এই দেখো না প্রচন্ড রোদে হঠাৎ করে বৃষ্টি এলো তাই না?
______এমন টা কি আগেও হয়েছিলো , মনে পড়ে না আমার, তেমন একটা।
মন খারাপের দিন গুলো তে কষ্ট পাও কেন এতো
এর কারণটা কি জানা যাবে?
না মানে বলতে যদি কোনো আপত্তি না থাকে?
______অতীত আর বর্তমানের এখন প্রচুর ফারাক।
______ অভ্যাস বদলায় নি একটুও তোমার।
______বদলায় নি তবে বদভ্যাস গুলো বদলে গেছে।
______ এখনো কি রাত জাগো। মাঝ রাতে পথে পথে ঘুরে বেড়াও ? নাকি মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যাও
পুরোটাই তো কেয়ারলেস।
_______ চা খাবে নীলা,? এক কাপ চা দুজন মিলে ভাগ করে খাবো আর বৃষ্টি দেখবো ?
_______ হুম ব্যাপারটা মন্দ নয়
_______ তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসছি
এই বলে রিক্ত পাশের দোকানে চা আনতে গেলো , নীলা খানিকটা অবাক হয়ে রিক্ত কে দেখতে থাকলো কেমন অদ্ভুত ছেলে টা কি মায়াবী তার চাহনি
হঠাৎ কিছুক্ষণ পর রিক্ত চা নিয়ে ফিরে এলো চেয়ারে বসতে বসতে নীলার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো…..
_______ দূরে সরে গেলে কি ভালোবাসা কমে যায়।
_______তা বলছি না।
_______ তাহলে?
_______ দুঃখ পাও নি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে ?
_____ সে পেয়েছিলাম অনেক ।
_____ এটা তো সবথেকে বেশি ক্ষতিকর। একটা পরিপূর্ণ মানুষকে ভেঙে টুকরো করে দেয়।
______ আমি ছেড়ে যাওয়ায় তোমার কোনো দুঃখ হয়'নি?
_______ ......
_______ নিশ্চুপ যে?
_______না এমনি। রিক্ত ...........
_______ হুম বলো
_______ আমার কথা তোমার কখনো মনে পড়ে নি , সত্যি কি এতোদিন আমাকে ভুলে থাকতে পেরেছিলে ,
_______নীলা ........
_______ হুম
_______ আকাশের দিকে মুখ তুলে একটা দীর্ঘশ্বাস নাও। তারপর আস্তে-আস্তে চোখ খুলে তাকিয়েই দেখো। হয়তো কিছু খুজে-ও পেতে পারো।
_______কই কিছুই তো পেলাম না।
_______ নিজেকে মুক্ত লাগছে না একটুও?
_______তা একটুখানি লাগছে। তবে..
_______তবে কি?
_______আজীবনই রহস্যে ঘেরা তুমি, ......
পাশেই একটা কাঠ গোলাপের গাছের দিকে নীলা আনমনে তাকিয়ে থাকে হঠাৎ রিক্ত কে বলে উঠে
______ তোমার কাঠ গোলাপ অনেক পছন্দ তাই না রিক্ত
______ হুম
______ তবে আমার কিন্তু ………….
নীলা পুরোটা বলার আগেই রিক্ত বুকের বা পাশের পকেট থেকে কিছু বকুল ফুল বের করে নীলার হাতে দিলো
নীলা অবাক হয়ে রিক্তের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে থাকে মাঝে মাঝে হারিয়ে গেলেও এই ছেলেটা আমাকে অনেক বুঝতে পারে
নীলা মুচকি হাসি দিয়ে বকুল ফুলের গন্ধ নিতে থাকে যেন মন মাতানো একটা গন্ধ
দুজন দুদিকে চুপচাপ বসে আছে কেউ কিছু বলছে না কি যেন ভাবছে তারা নিজেও জানে না
হঠাৎ করেই রিক্ত বলে উঠে
_______ আচ্ছা নীলা, কখনো যদি আমি একেবারেই হারিয়ে যাই তুমি কি আমাকে খুঁজবে?
এতোদিন পর নীলা রিক্ত কে ফিরে পেয়েছে সে যানে তার রিক্ত আর কখনো নীলাকে ছেড়ে চলে যাবে না
তারপরো খানিকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো হঠাৎ এ কথা বলছো কেন ?
______ জানতে ইচ্ছে হলো তাই
______ আর হারিয়ে যেতে দিবো না
______ কেন?
_____ ওমা যানো না বুঝি ভালোবাসি তাই
_____ কেন এতো ভালোবাসো
______ এ কেমন কথা, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে তাই ভালোবাসি
রিক্ত ………….
______ হুম
______ তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
_______ ভালোবাসি তো
______ তাহলে এমন করে বলছো কেন?
রিক্ত আর কিছু না বলে চুপচাপ বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় নেমে হাঁটা শুরু করলো নীলা খানিকটা অবাক হয়ে রিক্ত কে জিজ্ঞেস করলো
_______ কোথায় যাচ্ছো
_______ চলে যাচ্ছি নীলা
________ কেন ?
________ আমি তোমাকে আর কষ্ট দিতে পারবো না
নীলা।
নীলা এর মানে বুঝতে পারে না , সে যানে রিক্ত ইচ্ছে করেই এসব করছে , এর আগেও বহুবার সে এমন করেছে
নীলার খুব ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টিতে পিছন থেকে রিক্তকে জড়িয়ে ধরতে , খুব ইচ্ছে করছে খুব জোরে চিত্কার করে বলতে ভালোবাসি রিক্ত, প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেও না , আবার আমি খুব একলা হয়ে যাবো ।
নীলা শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে যানে রিক্ত একবার হলেও পিছনে ফিরে তার নীলা কে দেখবে
কিন্তু নাহ্ রিক্ত পিছনে ফিরে দেখে না
এবার খুব জোড়ে বৃষ্টি এসেছে নীলা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে উঠে ,
ভালোবাসার করুণ পরিণতি দেখে কেউ কখনো শিক্ষা নেয় না, সবাই ভালোবাসার সুখটাই দেখে, আর এজন্যই নারী পুরুষের প্রেমে পড়ে, পুরুষ নারীর প্রেমে পড়ে। মোটকথা, এই সুখের অনুভূতির আশায়ই প্রেম ভালোবাসা টিকে ছিল, আছে এবং থাকবে।
হয়তো কিছুদিন পরে আবার রিক্তের সাথে নীলার দেখা হবে , সেদিনো হয়তো হঠাৎ বৃষ্টি আসবে পুরো শহর জুড়ে
হয়তো এমনি ভাবেই কোন এক ফুটপাতে এক কাপ চা ভাগ করে খাবে তারা অনেক অভিমান নিয়ে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে কিন্তু কেউ কাউকে কিছুই বলবে না
কখনো কখনো অভিমান গুলো বাধা হয়ে দাঁড়াবে সেই পুরোনো মাকড়শা জড়ানো দেওয়ালের মতো । হয়তো প্রেমের গভীরতা সকল দেওয়াল ভেঙে জয় করে নেবে তাদের ভালোবাসা, না হয় শতবেদনার মাঝে বাস্তবতার দেওয়ালকে মেনে নিয়ে যার যার মতো করে দুজন দুদিকে চলে যাবে।
এভাবেই যুগ যুগ ধরে প্রেম-ভালোবাসা আসবে, যাবে। মানুষ সেই তরি হয়ে জানা-অজানা অপেক্ষায়, পাওয়া-না-পাওয়ার আনন্দে-বেদনায় বয়ে চলবে অচেনা নদীর ওপর দিয়ে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ ।
হয়তো রিক্ত তখন ঠিক কথাই বলেছিলো
'সব পথিক গন্তব্যে পৌঁছায় না
সব ভালোবাসা পূণতা পায় না '
কিন্তু সেতো এটাও বলেছিলো দূরে সরে গেলে কি ভালোবাসা কমে যায়।
হয়তো কমে যায় বা হয়তো যায় না ,
তবে রিক্ত ফিরবে তার নীলার কাছে তাকে যে ফিরতেই হবে নীলার ভালোবাসার টানে ।
