ঘুরতে ভালো বাসি
ঘুরতে ভালো বাসি


আমি ছোট থেকেই ঘুরতে ভালোবাসি। সময় পেলেই সামনা সামনি বেড়িয়ে আসি। পার্কে বা নদীর পারে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসি মন ভালো হয়ে যায় নিজেকে খুঁজে পাই। অনেক দিন দূরে কোথাও যাওয়া হয়নি, ভালো লাগছে না, মনে হচ্ছে কয়েক টা দিন দূরে কোথাও ঘুরে আসি ।
ছোট বেলায় বাবা মায়ের সাথে ঘুরতে যেতাম আর এখন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাই। আমাদের একটা স্কুল Friends group আছে। School life থেকে আমরা একসাথে পড়েছি। তবে বর্তমানে সবাই কাজের সাথে যুক্ত কিন্তু বছরের একটা সময় সবাই মিলে দূরে কোথাও কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসি। ওকেসান এর সময় বেড়ুই না, আমরা ভির পছন্দ করিনা তাই অফ দিন গুলোতে যাই।
আমরা ৬ বন্ধু , রন, অয়ন, সৈকত, অভিষেক, সুমন এবং আমি। আমরা সবাই সবাইকে ফোন করে যাওয়ার দিন জায়গায় ঠিক করে নেই এরপর বেড়িয়ে পরি।সৈকতের নিজের স্কর্ফিউ গাড়ি আছে, তাই কোনো অসুবিধা হবে না কিন্তু উত্তর বঙ্গ এই প্রথম কেউ রাস্তা জানে না, তবে সৈকত ছাড়াও রন আর আমি গাড়ি ড্রাইভ করতে জানি। আমরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরি লাভার জঙ্গলের উদ্দেশ্য। আমরা সকালে ১০ টায় গাড়িতে উঠি এখানে থেকে প্রথমে যাবো শিলিগুড়ি। গাড়িতে ফুল ভলিউমে গান চালিয়ে চলছি এক অজানা অভিজ্ঞতা সন্ধানে। রাস্তা না জানা থাকলে বেশি মজা, ফোনতো রূট দেখছি কিন্তু তবুও মনে হয় রাস্তা লোকে জিজ্ঞাসা করি। এক জায়গায় হয়েছে কি, আমরা প্রথমে একটা সাইকেল চলতি লোকে জিজ্ঞেস করি আছা দাদা কান্দি যাওয়া যায় কোন পথে, তিনি আমাদের কে বলেদেন, এই রাস্তায় গেলেই হবে। কিন্তু আমরা ভরসা করতে পারছি না তাই কিছুটা এগিয়ে আবার অন্য লোককে জিজ্ঞাসা করি, সেই সময় সাইকেল চলতি লোকটা আমাদের গাড়ি সামনে এসে দেখে আমরা অন্য জনের কাছে থেকে একই রাস্তার সমন্ধে জানতে চাইছি। তখন সাইকেলর লোকটা রিতি মত আমাদের গাড়ির সমানে এসে আমাদের সাথে ঝগড়া জুড়ে দেয়। তার বক্তব্য হল- আমার কথা যখন বিশ্বাস করবে না তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করে ছিল কেন। এই চেঁচামেচি শুনো লোকজন এগিয়ে আসতে থাকে, আমরা কোনো রকমে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসি। আমাদের একটা শিক্ষা হল, এর পর থেকে আর কোনো পথ চলতি লোকের কাছে পথের কথা জিজ্ঞাসা করবো না, গুগল এর উপর ভরসা ররাখবো। এই ভাবে আমরা রাতের বেলায় শিলিগুড়ি পৌঁছায়। ওখানে একটা হোটেলে ভাড়া নিয়ে রাতটা ওখানেই থাকি।
পরে দিন সকাল সকাল ছয় বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পরে পাহাড়ি জঙ্গলের ঘুরতে। নিজেদের গাড়ি নিয়েছি কিন্তু পাহাড়ী রাস্তায় ড্রাইভ করতে পারবে না তাই এখানের ড্রাইভার নিয়েছি । গাড়ী পাহাড়ী ঢালে একে বেকে কখনও বা সোজা উপরে উঠে গেছে । চারিদিকে প্রকৃতি খুব সুন্দর ।আমাদের গাড়ি সেবক হয়ে প্রথমে রেসপ যাবে। রেসপের পাহাড়ী রাস্তা খুব খাড়াই । নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতো ভয় করছে। পাহাড় টা সোজা নীচে নেমে গেছে।একবার পরে গেলে আর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। গাড়ী থামিয়ে কিছুটা সময় রাস্তার পাশের জঙ্গলে একটু ঘুরে দেখি। এই রকম রাস্তার ঘন গাছ পালা দেখে চোখ জুড়ে গেল। এর পর আমরা রিসপ এসে পৌঁছল।তখন দুপুর শেষ হয়ে এসেছে। রিসপের চারিদিক টা খুব সুন্দর, ওপর থেকে নিচের শহরটা অসাধারণ লাগছে। জায়গা টা খুব নির্জন, এখানে লোক জন খুব কম। খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়ে সবাই বেড়িয়ে পরি শহর টা
ঘুরে দেখতে।
আমরা ঠিক করলাম রাতে জঙ্গলে ক্যাম্প করবো, তার জন্য আমরা সমস্ত সরঞ্জাম সঙ্গে এনেছি। এখানে আগে থেকে অনেক ক্যাম্প খাটানো আছে, ওদের থেকে একটু দূরে আমরা একটা ক্যাম্প করে নিলাম। কার কি মনে হচ্ছে জানি না তবে আমার খুব আনন্দ লাগছে। এই ভাবে খোলা জায়গায় এই প্রথম বন্ধুরা সাথে , এত দিন যা ভেবে এসেছি আজ তা সত্যি ঘটতে চলেছে। আমরা রান্না করাও সরঞ্জাম এনেছি কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ না করে রান্না বান্না অসম্ভব, কেউ রাজি হল না। তাই কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নিলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, জায়গাটা অসাধারণ লাগছে। এখানে রাতের দিকে বেশ ঠান্ডা পরে তাই আমরা শীতের পোষাক এনেছি। কিছু কাঠ জ্বালানি একা সুন্দর আগুনের ব্যবস্থা করি। এর পর রন গিটার বাজিয়ে গান শুরু করল, সবাই রন ও সাথে গলা মিলিয়ে গান গাইতে লাগলাম। যদিও বাকীদের না গলা ভাল না আছে সুর কিন্তু আনন্দ তো একসাথে গাওয়ার মধ্যেই আছে। এরপর অভিষেক মাউওরগান বাজিয়ে শোনায়, আমাদের এই সুন্দর মুহূর্তে ছবি অয়ন ক্যামেরা বন্দি করে রাখে। আজ সকাল থেকে যে কত ছবি তুলেছে তার হিসেব নেই। বড় ক্যামেরা ছবি তোলার হচ্ছে তাই কেউ ছবি তোলেন। সবাই নির্জন জঙ্গলে নিস্তবদ্ধতা সাথে খোলা আকাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য মন ভোরে উপভোগ করি।
পরের দিন সকালে আবার বেড়িয়ে পরি Neora Vallay National Park এর পথে। এখানের রাস্তা একেবারে ভালো না, অসমতল, কোথাও মাটির রাস্তা খুব ঝুঁকির। তাই গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে পাহাড়ি গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। আহা কি সুন্দর যেন প্রকৃতির তৈরি গ্রাম, দূরে দূরে পাহাড়ের খাঁজে দুয়েকটা করে কাঠের তৈরি ছোট ঘর। এতো নিচু যেন মাথা ঝুঁকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। এখানের ঘাস ফুল ও খুব সুন্দর। মেঘ যেন আমাদের ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন প্রাণ জুড়ে গেল, শুধু আমার না আমার সব বন্ধই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালোবাসে শুধু তাই না সুমন বাদে বাকিদের পাহাড় পছন্দের । আজকের রাতটা আমরা এই গ্রামেই স্টে করি, ড্রাইভার সব ব্যবস্থা করে দেয়। রাতে এখানে আঞ্চলিক নাচ গানের আয়োজন করেছে । মঞ্চে তো অনেক নাচ গান দেখেছি কিন্তু এদের নাচ সত্যিই অসাধারণ, যদিও গানের ভালো বুঝতে পারিনি। এই ভাবেই অনেক রাত পর্যন্ত নাচ গান হল।
পরের দিন সকালের সৌন্দর্য আরও মনোরম এতো সুন্দর ভাষার বোঝানো যাবে না। যাই হোক এবার আমাদের ফেরার পালা, এত সুন্দর প্রকৃতির ফেলে আসতে মন চাইছে না কিন্তু ফিরতেই হবে। তাই আমরা পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। এই পথে গোরুমারার জঙ্গল পরে কিন্তু দুপুর হওয়ায় আমরা জঙ্গলে ভেতরে যেতে পারলাম না। এখানে খুব সকালে জঙ্গল সাফারি বেড়াতে যায়। তবে মন খারাপের কিছুই নেই আমরা আবার আসবো তখন শুধু গোরুমারা অভয়ারন্য এর জন্যেই আসবো। আবার আমরা সেবক হয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছয়। এখানে ড্রাইভার দাদাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তার সাথে কাটানো দিন খুব ভালো, তার জন্যই আমরা বেশি জায়গা দেখতে গিয়েছি, তিনি শুধু গাড়ি ড্রাইভ করেনি সাথে আমাদের গাইড লাইন করেছেন, সত্যি মনে রাখার মতো। রাত্রি একখানে কাটিয়ে, পরের দিন সোজা বাড়ি।
আমাদের কম দিনের ট্যুর হলেও খুব সুন্দর মনে গেঁথে আছে , প্রকৃতির এই অপরূপ রু উপভোগ করেছ