বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ডানদিকটায়, অতলান্তিক মহাসাগরে একটা বিস্তীর্ণ এলাকাকে আমরা নাম দিয়েছি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। মানুষ যবে থেকে ছোট-বড় জাহাজ আর উড়োজাহাজ তৈরি করে সমুদ্র পেরতে শিখল, তখন থেকেই নিয়মিত ভাবে শোনা যায়, ওই ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার সময় আস্ত বিমান কিংবা আস্ত জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
সে তো সমুদ্র আর মহাসমুদ্রের কত জায়গাই বিপদসংকুল, কোথাও এত বেশি ঝড়ঝঞ্ঝা আর কোথাও আবার সমুদ্র এতটাই শান্ত আর চুপচাপ যে সেই সব এলাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে জাহাজে বা উড়োজাহাজে যাওয়াই মুশকিল। কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য মানুষকে বেশি করে ভাবিয়েছে তার কারণ, ওই অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ বা বিমানের এমনকী, ভগ্নাবশেষও খুঁজে না-পাওয়া। ওখানে গেলে কোথায় একেবারে হারিয়ে যায় জাহাজ? কোথায় উধাও হয় শক্তিশালী বিমান?
কেউ বলেন ওখানে পৃথিবীর তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র বেশি শক্তিশালী, তাই ওই এলাকায় জাহাজ বা বিমানের কম্পাস ঠিকমতো কাজ করে না। কেউ আবার যুক্তি দিয়ে এই রহস্যের কোনও ব্যাখ্যা না-করতে পেরে বিশ্বাস করেন, ওখানে হয়তো আছে ভিনগ্রহীদের গোপন ঘাঁটি আর তারাই মানুষকে অপহরণ করে গুম করে রাখে। মার্কিন মুলুকের একদল আবহাওয়াবিদ অবশ্য সেসব সম্ভাবনায় কান দিয়ে বসে না-থেকে সম্প্রতি এই রহস্যের কিনারা করার একটা চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর আকাশ ছাড়িয়ে উড়ে বেড়ানো কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ওই এলাকার বহু ফোটো ওঁরা খুব খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। আর দেখেছেন, ওই অঞ্চলের আশপাশে আকাশে উড়ে বেড়ানো মেঘের চাদরে ষড়ভুজাকৃতি কিছু ফুটো!
মেঘের গড়নে আমরা মনে-মনে আমাদের চেনা নানা কিছু কল্পনা করলেও (কখনও কোনও মেঘ দেখে মনে হয় না, আরে, একে তো দেখতে একটা হাতির মতো, কিংবা কোনওটাকে দেখতে ঠিক যেন আইসক্রিমের মতো?) আদতে ওরা তৈরি হয় একেবারেই যেমন-তেমন গড়নে। ফলে কোনও মেঘরাশির মধ্যে জায়গায়-জায়গায় প্রায় নিখুঁত ষড়ভুজাকৃতি ফুটো দেখলে অবাক হতে হয় বই কী! মার্কিন ওই আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ওই ফুটোগুলো কেন বা কীভাবে তৈরি হয়, তা তাঁরা এখনও জানেন না। তবে এটুকু তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে অমন বিশেষ মেঘের জন্যই মেঘের তলায়, সমুদ্রের বুকে বোমার মতো তীব্র অভিঘাতে আছড়ে পড়ে প্রবল বাতাস! তারই জেরে তৈরি হয়, কখনও ৪৫ ফুট উঁচু দৈত্যাকার ঢেউ। অমন বড় ঢেউ ডাঙায় আছড়ে পড়লে বড়-বড় গাছকে হাসতে-হাসতে উপড়ে ফেলতে পারে, ফলে তার সামনে পড়লে জাহাজ তো ডুববেই! বাতাসের ওরকম সাংঘাতিক শক্তিশালী বোমার আঘাতে উড়োজাহাজও বিকল হওয়া আশ্চর্যের নয়।
যদিও স্বাভাবিকভাবেই, মার্কিন আবহাওয়াবিদদের এই দাবি এক্ষুনি পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি অনেক বিজ্ঞানীই। রহস্যটা যেহেতু বেশ পুরনো, তাঁরা তাই আরও সময় চাইছেন, এর পরদা ফাঁস করতে। যে-পরদার আড়ালে সত্যি যে কী লুকিয়ে আছে, তা জানার অপেক্ষায় বসে আছে একটা গোটা গ্রহের সমস্ত মানুষ।