বাবুদের ফুলগাছ
বাবুদের ফুলগাছ


আমি ফুলগাছ, হলো এক মাস
বাবুর বাগানে থাকি।
দুই বেলা মোর যতন আদর
করিতে দেননা ফা৺কি।
বাবু ভালোবাসে,মালি কছে আসে
দুই বেলা সার ,জল-
বৃক্ষতেষ্টা সারার চেষ্টা
পাছে না হয় বিফল।
মনে পড়ে দিন প্রথম যেদিন
মেলেছিনু আমি আ৺খি-
কত উচ্ছাস ঘিরে চারিপাশ
পড়েছিল ডাকাডাকি।
গেল কতদিন পুলকে বিলীন
শৈশব ছুটে যায়;
এল যৌবন ভরি মন-প্রাণ
ফুলের রঙিন শোভায়।
সাজিল অঙ্গ ,ফুল পতঙ্গ
হরষিয়া দিল মন;
শ্যামল পাথার কত ব্যাঙ্গোমা আর
ব্যাঙ্গোমীর উপবন।
দুপুর সকাল পাখিরা মাতাল
বাগান পূরিল কুজনে;
দিয়া করতালি বাবু বলে, "মালি,
গাছটারে রেখো যতনে।
কাল পূজা তিথি কতনা অতিথি
কত জনসমাগম;
লোকে যেন বলে ফুলে আর ফলে
বাগিচা কি মনোরম! "
চলে রাতভর মহা তোড়জোড়
মাতৃ সেবার তরে-
আমা হতে ফুল, আমের মুকুল
সাজাইল থরে থরে।
দেখি চমকিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া
আসিল পূজার ক্ষণ-
উলু,শঙ্খধ্বনি নমঃ মঙ্গলময়ী
রাজবেশে আগমন।
রকমারি ফুলে দেবীপদতলে
করিয়া সমর্পণ;
জোড় হাতে কহে- কৃপা করো মোরে,
পড়িল গাথা, কথন।
ক্ষীণ বন্ধন গেল যে টুটিয়া,
ঢাকের বাদ্যি উঠিল কা৺দিয়া
বলিল বিদায় মাকে।
দেবীমাহাত্ম্য শেষ হল যেই
নিয়ে গেল বনপথ বেয়ে সেই
'মাটির পুতুলটাকে'।
এভাবেই হায় কাটিয়া যে যায়
আরও কয়েকটা বছর;
মোর জীবনের দ্বীপ ক'রে টিপটিপ
কাড়ে না তো কারও নজর!
গেল যৌবন নিয়ে তার ধন,
প্রৌঢ়ত্বও যায় ছুটে;
বৃদ্ধ যে আমি হয়েছি বেনামী
চলেছি দেবীর বিদায় পথে।
শুনি আচানক বাবু ভয়ানক
গেছেন আমার ওপর চটে-
'মিছে জঞ্জাল', পিপড়ের পাল
ঘোচাতে দেবেই আমায় কেটে!
তোমাদেরই গেহে শ্যামল স্নেহে
জুগিয়েছি শ্বাস বায়ু;
তারই প্রতিদানে ব্যথা কত হানে
কমাইয়া মোর আয়ু!
দেখি শেষ বার ভবসংসার
আশ ছিল মনে যত;
ফুরিয়েছে কাজ তাই আমি আজ
পোড়া বারুদের মতো!