বাংলা বাংলা
বাংলা বাংলা
সন্ধ্যায় আমরা কাশ্মীর পৌঁছলাম । তখন সাড়ে সাতটা বাজে। গাড়িটা থামতেই ঘোরকাটল।লিটার
নদীর তীরে হোটেল বুক করা ছিল । আলোছায়ায়
ঠিক জায়গাটা বুঝতে পারছিলাম না। হোটেলের লোকেরা হাতাপাতি করে আমাদের মাল পত্র ঢুকিয়ে নিল । আমাদের রুম দিয়ে দিল কনকনে ঠান্ডা তখন । একেবারে কাবু বলা যায় ।
সুন্দর বেড কভার দেওয়া সুন্দর বিছানা । সেই
রকম শরীর গরম করা ঢাকা । একটু কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিয়ে ঢাকার তলায় শরীরটা ঢুকিয়ে দিলাম । কথা পর্যন্ত বলতে ইচ্ছে
করছিলো না । ঢাকার ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম কুলু কুলু -একটানা একটা ধ্বনি । ঢাকার ভেতরেও যেন শরীরটা কাঁপছে ।
অথচ মনকাড়া ঐ কুলুকুলু একটা সঙ্গীতের মতোই আমার কানে বেজে চলেছে । আমি বুঝতে পারছিনা কোথা থেকে শব্দ টা আসছে ।
তাহলে কি হোটেলের মধ্যে কেউ জল তরঙ্গ ...!
আমাদের টিম বস বেশ অভিজ্ঞ । ঢাকার ভেতর থেকে কোনো রকমে ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক করে
আমার উদ্দেশে বললেন , লিটার নদীর আওয়াজ
শুনতে পাচ্ছেন ? ঐ যে......!
আমিও গরম ঢাকার ভেতর থেকে এক রকম
কাঁপতে কাঁপতেই সাড়া দিলাম ... এটা লিটার নদীর
আওয়াজ ...! কি সুন্দর ..আহা !
বস বললেন ----হ্যাঁ ।
আমি আর কোনো কথা বললাম না । একমনে
লিটারের গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না ।
পরের দিন সকালে হোটেল থেকে বাইরে আসতেই
দেখি ঘোড়াওয়ালারা ঘোড়া এনে হাজির । ঘোড়ার
পিঠে চেপে দেখলাম পাহাড়ি উপত্যকার ঢাল বেয়ে
বয়ে চলেছে একটা শীর্ণ নদী । আমদের দেশের
বাড়িতে যে টাকে নালা বলে । ঠিক সেই রকম ।
অথচ রাতের নির্জনতায় লিটারের কুলু কুলু যেন
সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা তৈরি করেছিল আমার মনে ।
পাহাড়ি উপত্যকায় একটা নদীর বয়ে চলা আর সেই বয়ে চলার মধ্যেই সঙ্গীতের সুরের উদ্রেক ! আর বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তার জীবন্ত বর্ণনা... । এ একমাত্র বাংলাতেই সম্ভব ।
বাংলা একমাত্র ভাষা যে মনের কথা প্রকাশ করতে
পারে সুন্দর করে । ঘোড়াওয়ালারা তাড়া দিচ্ছিল । ঘোড়ার পিঠে চেপে আমরা মিনি সুইজারল্যান্ড এর উদ্দেশে রওনা দিলাম । মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে অভিভূত হলাম । তবেই না একে ভূস্বর্গ বলে !
................................................................