আসছে বছর আবার হবে...
আসছে বছর আবার হবে...
আসছে বছর আবার হবে ....
শান্তনু ত্রিপাঠী
( এক )
জ্ঞান ফিরতে মিঠাই শরীরে ব্যথা অনুভব করল । ঘর্মাক্ত রক্তাক্ত কর্দমাক্ত শরীরটাকে টেনে ওপরে তোলার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করল । শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা । জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ।
দশমির সন্ধ্যায় মিঠাই রাবণ পোড়া দেখতে গিয়েছিল বান্ধবীদের সাথে । মা বারন করেছিল, -"তুমি বড়ো হয়েছো, একা একা যেতে হবে না……" - " হ্যাঁ আমি বড়ো হয়েছি, নিজের ভালো-মন্দ decide করতে পারব ... তাছাড়া আমি একা যাচ্ছি না , বান্ধবীরাও থাকছে আমার সঙ্গে .... "
- "না তুমি যাবে না ..... আর যদি যেতেই হয় তো সন্তুর সঙ্গে যাবে ......"
- "না আমি যাব ... আর বান্ধবীদের সাথেই যাব।
আর কিছুই বলল না মমতা ।
( দুই )
মিঠাইয়ের বিদ্রোহের কারন আছে । আজ অন্য একজন যাবে , রাজীব । অষ্টমীতে অঞ্জলী দেওয়ার সময় পরিচয় হয়েছিল । Love at first sight , ভাই অবশ্য কিছু জানতে পারেনি । তাই ভাইকে আজ আর সঙ্গে নিতে চায় না সে । রাত এগারোটা বাজিপোড়া রাবণপোড়া শেষ হয়ে ঠাকুর ভাসান শুরু হয়ে গিয়েছে । এ তল্লাটে প্রতিটি ঠাকুর দশমিতে ভাসান পুকুরে ভাসানোই নিয়ম । শেষ হতে ভোর হয়ে যায় । সন্তু বাড়ি ফিরতে মমতা জিজ্ঞেস করল,- "সন্তু মিঠাইকে দেখেছিস ? ”
- "কেন দিদি এখনো বাড়ি ফেরেনি ?"
- " না .. রে .. তোর দিদি ..... "
সন্তু আর কিছু না শুনেই অজানা আশঙ্কায় বেরিয়ে পড়ল । মায়ের কথাগুলো একে বেঁকে বাতাসে মিলিয়ে গেল । সে মেঠো পথ ধরে এগিয়ে গেল ।
( তিন )
তালপুকুরের পাড়ে ঝোঁপের দিক থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনে সন্তু কৌতুহলে এগিয়ে টর্চের আলোয় দেখল , দুষ্কৃতীরা পাশবিক প্রকৃতিরত , দিদি নগ্ন বিদ্ধস্ত , রক্তাক্ত , কর্দমাক্ত । সন্তু সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করল , ধস্তাধস্তিতে একটা পাথরে পড়ে মাথা ফেটে গেল । জ্ঞান ফিরল মিঠাইয়ের । ভোর হয়েছে । তালপুকুরের পাড়ে শিমুল গাছে কোনও নাম না জানা পাখি ডাকছে । এইসময় মায়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে । সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল । নিম্নাংশ অবশ । সে ভাইয়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করল । পারল না । অসহায়তার জন্য তার কান্না পেল । তাকে বিদ্রুপ করে দূরের মাইকটা তখনও বলে চলেছে - আসছে বছর আবার হবে ।
(সমাপ্ত)
