STORYMIRROR

Santanu Tripathy

Children Stories

4  

Santanu Tripathy

Children Stories

Untitled

Untitled

3 mins
3

                       রাজার অসুখ
                                বঙ্গজ ভারতীয় (শান্তনু ত্রিপাঠী)
                            
                                  
                      ⏩ এক⏪

রাজ্যে হুলুস্থুল বেঁধে গেল। ঢোলক ভায়া ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করলেন যে রাজা মশাইয়ের ভারি অসুখ, কিছুই  খেতে পারেন না। যদি কেউ রাজা মশাইয়ের অসুখ সারিয়ে তুলতে পারে তাহলে তাকে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে।
রাজবৈদ্য, যিনি আশেপাশের সব রাজ্যের রাজবৈদ্যদের শিক্ষাগুরু, তিনিও হাল ছেড়েছেন । উপদেশ দিয়েছেন, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে। ফলতঃ অন্য রাজ্যের রাজবৈদ্য, ধন্বন্তরি কবিরাজরা কেউ আসতে চাইছেন না। রাজা চিন্তিত...রানী চিন্তিত, অমাত্য পরিষদ, সেনাপতি, রাজ্যবাসী সবাই চিন্তিত। একমাত্র চিন্তিত নন রাজ্যের মন্ত্ৰী মহোদয়। উনি আশেপাশের রাজ্যের রাজাদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গ্রামে-গ্রামে, পথেঘাটে-মাঠে-পুকুরঘাটে ঘরে ঘরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।রাজপণ্ডিতের উপদেশ মত মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যা শেষ হতে এক পক্ষ কাল সময় লাগবে।

                                        
                            ⏩দুই⏪

এভাবে বছর দুয়েক কাটল। কিন্তু রাজামশাইয়ের অসুখ সারল না। রাজ্যে গুঞ্জন কিছুটা ফিকে হয়েছে। কয়েকজন রাজা প্রতাপগড় রাজ্য দখলের জন্য আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। মন্ত্রী মহোদয় তাদের সাথে লাভজনক মীমাংসায় আসতে পারছেন না, তাই প্রত্যহ আলোচনা চলছে।
                
                       ⏩তিন⏪

কয়েকদিন যাবৎ এক সাধুবাবার আগমন হয়েছে গ্রামে। গাঁয়ের পূব কোণে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানেই বসেন। অসুখ-বিসুখ, ভূত-ভবিষ্যত, প্রেত-পিশাচ সবকিছুর অব্যর্থ সমাধান। দেদার বিকোচ্ছে-মাদুলি, তাবিজ, কবচ, রত্নপাথর। জড়িবুটি দিয়ে কত-শত নিঃসন্তান পিতা-মাতার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন; এসব এখন গ্রাম ছাড়িয়ে ভিন গাঁয়ের সবার মুখে মুখে। দলে দলে লোক আসছে যাচ্ছে।

খবর পাওয়া মাত্র রাজামশাই রাজদূতকে পাঠালেন অসুখের সব বিবরণ দিয়ে। সাধু বাবার এক শর্ত উনি কোথাও যাবেন না,সবাইকেই ওনার আছে আসতে হবে। রাজা মশাইয়ের রাগ হলেও সাধুবাবা রেগে গেলে যদি অভিশাপ দেন, সেই ভয়ে কিছু বললেন না। অগত্যা রাজামশাইকে প্রাসাদ ছেড়ে আশ্রম কুটিরে আসতেই হল।সাধুবাবা দেখে বললেন, "কিছুদিন আমার আশ্রমে আপনাকে থাকতে হবে, তাহলেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।"
"ঠিক বলছেন আমি সুস্থ হয়ে যাব?" 
"হ্যাঁ,আরেকটা শর্ত। আপনার লোকলস্কর, রানীমা,সেনাপতি সবাইকে চলে যেতে হবে, শুধু
আপনি থাকবেন।"

"ঠিক আছে আমি রাজি।”

রাজামশাই সাধুর আশ্রমে থাকলেন সাধারণ জীবন যাপন করে। সাধুবাবা যা খেতেন,তাই রাজামশাইকে খেতে দিতেন। সারাদিনে তিনবার আহার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান। সকাল-সন্ধ্যা ভ্রমণ। কয়েক দিনের মধ্যে রাজামশাই চাঙ্গা হয়ে উঠলেন। ঘন ঘন খিদে পেতে শুরু করল।

                                 
                         ⏩চার⏪
 
এবার বাড়ি ফেরার পালা। রাজামশাইকে নিয়ে যেতে মন্ত্রী,সেনাপতি,রানী , রাজবৈদ্য, কবি সবাই এসেছেন।
যাওয়ার সময় রাজামশাই জিজ্ঞাসা করলেন, "সাধুবাবা এটা কীভাবে সম্ভব হল?" 
সকলকে চমকে দিয়ে, সাধুবাবা তার বেশভূষা খুলে ফেললেন।

"আরে, তুমি শঙ্কর নাপিত না!" রাজামশাই চমকে উঠে বলেন।

"হ্যাঁ মহারাজ, আমি শঙ্কর নাপিত। যখনই আমি ক্ষৌরকাৰ্য্যে আপনার প্রাসাদে যেতাম, দেখতাম সবাই আপনাকে তোষামোদ করে কিছু না কিছু খাওয়াচ্ছে, আর না খেতে পারলেই বলছে রাজামশাই কিছুই খেতে পারছেন না। কেউ বলছেন রাজামশাইয়ের মুখে রুচি নেই। তাদের কথা শুনে আপনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ভাবলেন সত্যিই অসুখ করেছে। সবসময় খেলে কি, সময়মত খিদে পায়? তাই শেষে আমাকেই আসরে নামতে হল। আমি সত্যিটা বললে তো আমার গর্দান চলে যেত। তাই বেশভূষা লাগিয়েছি।" হাত জোড় করে শঙ্কর নাপিত বলে। 
একটু থেমে সে আবার বলল, "আর একটা কথা রাজামশাই মহামন্ত্রী এই সুযোগে রাজ্য দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। সব প্রমাণ আছে। আমার কাছেও এসেছিলেন। যাতে আপনাকে সুস্থ না করে আরও অসুস্থ করে দিই।"
রাজামশাই সব শুনে "থ" হয়ে গেলেন। কটমট করে একবার মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে শঙ্কর নাপিতের দিকে তাকালেন। তারপর শংকর নাপিতের পিঠ চাপড়ে বললেন, "আজ থেকে তুমি আমার মন্ত্রী হলে।"

                    🌷সমাপ্ত🌷


Rate this content
Log in