মাতৃভাষা
মাতৃভাষা


ইংলিশটা ঝরঝরে খুব হিন্দিটাও খাসা
ও দুটোকে সঙ্গে রেখেই বাংলা মায়ের ভাষা।
এইতো সেদিন বঙ্কুবাবুর ছোট ছেলের ছেলে
ভর্তি হল ইংরেজিতে পাড়ার পাশে বাংলাটাকে ফেলে।
ডেকে বললাম, এই ছেলে শোনো…
সে বললে, ' মাই নেম ইজ নোনো।'
আমি বললুম, তুমি বাংলা চেনো?
ভ্রু কুঁচকে বললে, 'রাবিশ! ওসব আবার কেনো?'
ঝড় উঠলো ঠিক তখনই কালবোশেখীর বেলা,
ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি আম-মুকুলের খেলা।
ফিরছে কৃষক মাঠের থেকে ক্লান্ত পায়ে
ঝড়ের বেগ সামলে মাঝি করছে নোঙর নায়ে।
গন্ধ ওঠে মাটি-স্নানে বৃষ্টি ফোঁটার সঙ্গে
হঠাৎ খুশির লুটোপুটি বাংলা মায়ের অঙ্গে।
এমন সময় নোনো দেখি এদিক ওদিক ছোটে
ইংরাজিও মুখে তার ভীষণ রাগে ফোটে।
হঠাৎ করে ধপাস আওয়াজ পিছন পথের বাঁকে,
পিছলে পড়ে নোনো বাবু 'গেলুম! গেলুম!' হাঁকে।
হেসে বলি, এখন সোনা, বাংলা কেন তোর?
কাঁদতে কাঁদতে বললে ছেলে, 'লেগেছে ভীষণ জোর!'
কোলে নিয়ে তাকে চুমু খেয়ে বলি...
আয় বাবা, ভয় নয় বাংলা, ভালবেসে চলি।
ঘাসে ঘাসে বাজে বীণা সুর মেঘ ছুঁয়ে,
বাংলা আমার মিশে আছে গোলাপ চাঁপা জুঁইয়ে।
বাংলা আমার প্রাণের আরাম হাসিভরা সুখ
স্মৃতির হৃদে ভাসে তখন বাংলা শহীদ মুখ।
সেই একুশের বরকত'রা রক্ত-ভেজা বর্ণমালায় মেশে
বাংলা হাসে দাওয়ার কোণে দাদির আঁচল দেশে।
ইংরেজিটা ঝরঝরে খুব হিন্দিটাতেও খাসা
তবুও এখন নোনোবাবু জানে মাতৃভাষা।