STORYMIRROR

AMRIN AMRIN

Others

4  

AMRIN AMRIN

Others

সুখেনি

সুখেনি

19 mins
16

আজ পাত্রপক্ষ আইবো কলকাতা থেইকা সুখেনিরে নিতে চায়। মুই ভাবতেছি মাইয়ার এতদূর বিয়া দিম না। এখন তুমি কও,, কি করবো আমি????

 হেনু পাত্রপক্ষ আসবে তা শুনে বহুত খুশি হল কিন্তু তারপরপরই বিয়ে না দেওয়ার কথাটা শুনে অনেকটা থমকে উঠলো। কথাটা শুনে উত্তপ্ত অগ্নি হয়ে বলে উঠলো

 মাইয়ারে কেউ দেখতে আইতে চায় না।মাইয়া ঘরে পইরা থেকে পাইক্কা যাইতাছে। ওই শতিনের মাইয়ারে কয়দিন ঠাসাইতে হইবে মোরে কও দে???? কলকাতা,,, ভালো ঘরের সম্বন্ধে,দূর হইছে তো কি হইছে???অন্য কোন মাইয়ার কি কলকাতা বিয়া-শাদী হয় নাই,, ওমাগো, রক্ষা কর। 


বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে সখেনির বাবা বলল

কি কইতাছো ইতা???? বয়স কত হইল।এইতো বাইরা উঠলো। আমি থাকি 

মানুষ গুলা কেরোহম স্বভাবের তা ও জানিনা। ওরে বিয়া দিমু ওই কলকাতা। জনমে একবার দেহতে পামু নি তা কইতে পারিনা। আমি পারুম না।আমার শখেনি একদম সোজা বুলা বালা পুরি। এত দূরের বাড়ির নিয়ম নীতি বুঝবার পারবো?


স্বামীর মুখে এই কথা শুনে এবার কাঁদতে বসে গে। 

কপালে চাপরাতে চাপরাতে করতে করতে বলতে


লাগলো এই মোর কপাল রে? এই লোকরে কেমনে বুঝামো???? মাইয়ার বয়স হইছে বিয়ে দেওয়া লাগবো। গরিবের সংসার, নুন আনতে গেলে পান্তা ফুরায় যায়।এর ভিতরে আমার শতিনের মাইয়া। এই মাইয়া মারে খাইছে এখন আমারেও খাইবো। 

স্ত্রীর মুখের বিলাপ শুনে মানিকের মাথা গরম হয়ে গে। হেনুর চুলের মুঠিতে ধরে পিঠে দু কিল বসিয়ে দিল মানিক। হেলুর চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়িতে পাড়ার মহিলাগুলো ভিড় করল। কি হলো, কি এর থেকে এসব ঘটন? সবকিছু শুনে সবাই একটা কথাই বলে দিল। বিয়া দিয়া দেও।দূরে হইছে তো কি হইছে???? কলকাতায় বিয়া। বড় বাড়ি। এর থেইকা আর কি লাগে কও দে??? 

সুখেনি দূর থেকে অসহায় চোখে জটলা টার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে নিয়ে প্রায় ওর বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়ে থাকে। ওর মা ওর জন্মের সময় মারা গেছে। তারপর বাবার আরেক বিয়ে। সুখেনীর মা মরে যাওয়ার পর সুখেনির নানী নাতনিকে নিয়ে তিন বছর পেলে পুষে পৃথিবীকে বিদায় জানালো। তারপর তার মামা তার বাবাকে তার মেয়েকে সুন্দর করে গছিয়ে দিল । সুখেনির সৎ মায়ের ঘরে দুজন মেয়ে দুজন ছেলে জন্ম হয়েছে। সংসারটা ভালই বড়।তাও আবার স্বচ্ছল নয়।সুখেনির রূপের বিবরণ বলতে গেলে অতি সুন্দরী বটে তবে গরিবের ঘরের মেয়ে বলে বেশ রোগা ল। কোত্থেকে যেন এসে শোখেনীর সই স্তব্ধতার মাঝে একটা চিমটি দিয়ে ছন্দে ছন্দে বলতে লাগলো,,

   

নাগর আইব 

  নাও বাইবো

ভুইলাতো যাইও না সই 

  ভুইলা গিয়া পলাইবা কনো???

সুখেনীরই লজ্জায় মাথা নামিয়ে বলল

 -যা কইতাছি????

সুখেনির সই বলতে লাগলো-

এইক্কন ই আমারে লড়াই দেস।বিয়ার পরে তো ধারে কাছেও আইতে দিবি না। কি হইলো রে???? বিয়া হইবো,, সুখের বিয়া হইবো বলে চেচাতে চেচাতে পাড়ার মেয়েদেরকে খবর দিতে ছুটে গেল সুখেনীর সই। 

অবশেষে একজন সত্যি সত্যি নাগর আসিয়া নাও ভাসাইয়া সুখেনিকে নিয়ে কলকাতায় চলে গেল। কেঁদে কেটে বিদায় দিল সুখেনিকে। তবে সুখেনির সৎ মায়ের চোখে জল থাকলেও মনে রূপালী পুটি সাঁতার কাটছে। মনে মনে ফিসফিস করে বলল 

''নে বাবা মসিবত চইলা গেছে.... 


অবশেষে সুখেনি কলকাতা গিয়ে পৌঁছালো। তার শাশুড়ি মা আরতি বরণ করে ঘরে তুলে নিল। সুখেনির দিকে ভালো করে নজর বুলিয়ে বলতে লাগলো। 

 তোমার বাবা তো বলেছিল তুমি নাকি খুবই ছোট,, 

কই??? বয়স তো দেখছি ভালোই।আরো কয়েকদিন ঘরে রাখতো নাকি??? এগুলো কি?? এগুলো কোনো জিনিসপত্র হলো??? এর থেকে তো ভালো ছিল এসব না দিত,,,তোমার বাবাকে এটা বুঝলো না?? বড় ঘরে এসব ছোটলোকের জিনিসপত্র থাকে না??? এগুলো কোনো ব্যবহার করার মতো আসবাব হলো???? 

এক কোনা থেকে সুখেনির ভাসুর বলতে লাগলো 

হ্যাঁ,,, তাই তো দেখছি..... 

বয়স ১৪ তো হবেই..

তাদের এমন কথাবার্তা শুনে সুখেনী ভয় পেয়ে যায়।সে এটা ধারণা করতে পারলো যে মানুষগুলো বেশি একটা সুবিধার নয়। সুখেনিকে অপমান করতে দেখে তার স্বামী রতন মাকে বলল '''এসব কি ধরনের কথাবার্তা বলছো তোমরা???? এগুলো বলে কি তোমরা বড় ঘরের পরিচয় দিচ্ছ? এগুলো বন্ধ করবে নাকি আমি এখন এখান থেকে বেরিয়ে যাব ? বিয়ের দিন কি তোমরা অশান্তি চাও?? আর কোনো নিয়ম কানুন আছে কিনা??? তা পালন করে নাও। এসব কথাবার্তা আমার এখন ভালো লাগছে না।আমি চাইনা বিয়ের দিন এসব ঝগড়াঝাটি হোক।


সুখেনি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রতন ভালো মানের চাকরি করে। আর ভাসুর তদের জমি খামার জায়গা সম্পত্তির দেখাশুনা করে। তবে এগুলুই করতে চায় সবসময়। তার দুই মেয়ে রয়েছে। রতন রা দুই ভাই একজন বোন। রতনের বোনের বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু সে মা হতে পারছেনা বলে স্বামী তাকে গ্রহন করতে চায় না। । রতন চাকরির জন্য বেশিরভাগই বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয় । পড়ালেখায় ভালো,,, বয়স২৫ হবে।তার বোন তার বছরের ছোট। রতন খুব শান্ত সৃষ্ট ও নরম মনের মানুষ। সুখেনী এসব কথাবার্তায় কতটা বিধ্বস্ত হয়েছে সে রতন ভালই বুঝতে পারছে। 

বউ নিয়ে আসার পর মায়ের মুখ থেকে এসব কথা যে শুনতে হবে সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলো। 

রতনের কথার পরেও তার মা ও ভাই শখেনিকে আড়ালে আড়ালে অপমান করা ছাড়লো না 

সুখেনি জড়োসড়ো হয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।তারপর সুখেনিওকে নিয়ে গিয়ে অসুস্থ ঠাকুমায়ের পায়ে প্রণাম করালো। অবশেষে সুখেনির শাশুড়ি মা বললেন

-৷ সংসারের কাজের নিয়ম কানুন ভালো করে বড় বৌমার কাছ থেকে জেনে নিও। ওকে হাত ধরে আমার কিছু আর শেখাতে হয়নি।আগে থেকেই পারতো। বড় ঘরের মেয়ে হয়েও তার কাজের অনেক গুন আছে। তোমাকেও যেন ভালো করে কিছু বুঝিয়ে দিতে না হয়। নিজে থেকে ঠিক কোন সব করবে।


তারপর সুখেনির বড়জা ওকে বললো"" তুমি রান্না জানো,,,  

সুখেনি জবাব দিল "" হমমম,,,,

 সুখেনি শাশুড়ি বলতে লাগলো ""তা দেখা যাবে ...কাল একবার সবার জন্য রান্না করো তো...দেখি হাতে কেমন জাদু। মা মাসি কি শিখিয়েছে????

পরের দিন শখেনীর রান্না করতে হয়েছে। সবাই ভাবছিল সুখেনি ই হইতো পারবেনা।কিন্তু সুখেনি র রীতিমতো রান্নার জাদু দেখিয়ে দিল। সবাই তৃপ্তি করে খেলো। কাজকর্মে ভালোই শখেনি।খাবার মুখে তুলে সবাই মুগ্ধ হয়ে রইল। তবে সখিনির শাশুড়ি অনেকটা অন্য কিছুই আশা করেছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য বেসতে গেল। 

শখের শাশুড়ি সুখেনির সাথে এমন রাগের কারণ যৌতুক এর সঠিক পরিমাণ ওশল না হওয়ায়। রতন তার মাকে যৌতুকের বিষয় বেশি বাড়াবাড়ি করতে দেয়নি। তাছাড়া বয়সটা নিয়েও তিনি খানিকটা বেজার। সুখেনি তার শাশুড়ির বিরক্তপূর্ণ চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। অমনি রতনের ঠাকুরদা বলতে লাগলো """বেশ হয়েছে। নতুন বউ দেখছি রান্নায় বেশ পাকা???শিখিয়েছে কে রান্না????? 

সুখেনি বলল ""আমার মা শিখিয়েছে,,,,ঐদিন ভালোই প্রশংসা পেল সুখেনী


বাড়ি থেকে কত দূরে চলে এসেছে সুখেনি। কোনোত এক দুপুরে তার ঘরের জানালার বাহিরের দিকে তাকিয়ে  লাগলো, বাবা কে আবার কবে দেখতে পাবে সে?? এখানে এক টানা আর কতদিন থাকতে হবে???সবগুলো মানুষ কেমন ওর অপরিচিত??? এতগুলো অপরিচিত মানুষের সাথে কিভাবে থাকবে এতদিন??? এই খানে কি কেউ বন্ধু হবে না?? বাড়িতে থাকলে এতক্ষন ভাই বোনদের গুলোকে নিয়ে খেতে বসতো। খেতে বসার পরও মা-বাবর মধ্যে তাকে নিয়ে ছোটখাটো ঝগড়া বেধে যেত। খুব খারাপ লাগতো যার। তারপরও তারা তার আপনজন ছিল। কিন্তু এখানে তো সবাই অপরিচিত। তার সাথে রতনের বয়সের দূরত্ব অনেক। তাই এখনো রতন তার কাছে পরিচিত কেউ হয়ে ওঠেনি। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার কাঁধ একটা হাত এসে পড়ল সুখেনি চমকে পিছনে ঘুরে তাকালো রতন মুচকি এসে বলল """ভয় পেলে বুঝি,,,,???আমাকে দেখলে বুঝি কারো ভয় হয় ???? আমি দেখতে কি খুবই বাজে???? না মানে,, আমাকে দেখলে তো সবসময় পালিয়ে বেড়াও,, তাই কিছু না বলে তোমাকে চমকে দিলাম। 

 সুখেনি নিজেকে সামলে বলল"""" না .... একটু ডরাইলাম। আবার এত বেশি ও ডরাই নাই 

সুখেনির মুখে এমন ভাষা শুনে রতন হেসে দিল। রতনের হাসির সাথে সুখেনি একটু হাসলো। পরক্ষণে চুপ করে গেল। কারণ এ বাড়ির সবাইকে সে অনেক ভয় পায়। রতন বুঝতে পারলো সুখেনি কাছে এসে ওকে বলল

 """"আমাকে এত পাও সুখে??আমাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই । তুমি স্বাধীন। তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও??? আমি তোমার সব কথা শুনব। তুমি তোমার কোন সমস্যা হয় আমাকে বলবে । আমার কাছে কিছু বলতে লজ্জা পাবে না। আমাকে বন্ধু মনে করবে। 

এতদিন পর কারো কাছ থেকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পেয়ে সুখেনি খুবই খুশি হল। রতন আবার সুখেনীকে বলতে থাকলো,,,আমাকে ভয় পেতে হবে না শখে।সারা জীবন তো আমার সাথেই থাকতে হবে । তাহলে চলো আজ থেকে বন্ধু হয়ে যাই। বন্ধু হবে আমার???? 

সুখেনি মুচকি একটু হাসলো তার এতদিনের সুখেনি নামটা কেউ শখে বানিয়ে দিল সেখানে মুচকি হসে বলল 

আমি আতকা কেউর লগে সই পাতি না। কিন্তু সই হওনের পরে কথা কইতে কইতে তারে পাগল বানাই দেই। 

রতন বললো 

-তাহলে তো ভালোই হলো... আমিও কিন্তু খুব কথা বলতে পছন্দ করি।আজ থেকে তাহলে আমরা একসাথে অনেক বেশি বেশি গল্প করব।এখন কি তুমি ছাদে যাবে??চলো আমরা ছাদ থেকে ঘুরে আসি একবার।আসার পর থেকে তুমি একদম ঘর ঘুরে হয়ে গেছো। কোথাও ঘুরতে পারছ না।আমি জানি। তোমার বাড়িতে তুমি বেশ ঘুরে বেড়াতে। এখন চলো????? 

রতনের ছাদে যাওয়ার প্রস্তাবে সুখেনি রাজি হয়ে গেল। আসলও এখানে আসার পর থেকে সে বাহিরে কোথাও যায়নি । তাই একটু খোলামেলা বাতাস খাওয়ার জন্য রতনের প্রস্তাবের দ্বিমত করলো না। ঐদিনই প্রথম রতনের সাথে সুখেনীর ভালোভাবে কথা হল। তার আগে রতনের চোখে সুখেনি র চোখ পড়তেই লজ্জায় অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিতো।এমনিতে সুখেনি বেশ মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। ছাদে গিয়ে ছাদের খোলা হাওয়ার ছোঁয়া পেয়ে বেশ খুশি হলো সুখেনি। দিন হচ্ছিল সুখেনির সাথে রতনের বন্ধুত্ব বেশ ভালো বন্ধুত্বে রূপ নিল। ওদিকে উঠে বসতে রীতিমতো হেস্ত  হয় শাশুড়ির কাছে। ছোট ঘরের মেয়ে বলে রীতিমতো অনেক অপমান সইতে হয় । সুখেনির বড় ঝা ও তার সাথে বেশ হিংসে করে। এমনিতে বাইরের কোন মানুষ বউ দেখতে এসে সুখেনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যায়। তখন আরতি বলে সাধু সতী হয়ে তো থাকবেই,, ছোট ঘরের মেয়ে বড়লোকের ঘরে এসে পড়েছে।

 তবে রতনের সামনে এসব বলার সুযোগ পায় না।

তাই বড় বৌমায়ের কাছে বলে এ

 "নারী নাকি অন্য কিছু ?? কদিনেই ছেলে টা বদলে গেছে।

 বড় বৌমা বলে

-শুধু সুখেনি কে বললেই হবে না মা, আপনার ছেলে ও কম না কিনতু??

শাশুড়ি, বৌমা সারাদিন এসবই বকে বেড়ায়। দিন যায় তেমনি রতনের ছুটিও ঘনিয়ে এলো। এবার তাকে কাজে ফিরে যেতে হবে। বিকেল পরতেই সুখেনি আর রতন ছাদে গল্প করতে চায়। খোলা হাওয়া উপভোগ করে। সুখেনির সরল সোজা স্বভাবের ভাব ভঙ্গি কথাবার্তা রতন খুবই পছন্দ করে। হয়তো মনে মনে এমন কাউকে খুঁজে বেরিয়েছে রতন। সুখেনির সহজ সরল বাঙ্গাল কথাগুলো সবসময়ই রতনকে মুগ্ধ করে রেখেছে।সুখেনি মায়াবী সৌন্দর্য সব সময় মুগ্ধ করে রাখে। সুখেনীর অপূর্ব দুটো চোখ আকর্ষণীয়। তার লম্বা চুলগুলো নজর কারে ৷ সব মিলে একজন অপূর্ব সুখীনি। যেন সবসময় রতন এমনই একজন সুখীনিকে খুঁজে বেড়িয়েছে। সুখেনি একজন সত্যিকারের বন্ধু মনে করে খুলে সবকিছু বলে। তার বাবা কি করত, ভাই বোনদের সাথে কিভাবে সময় কাটাতো, সই দের সাথে ঘুরে বেড়াতো, রান্না করতো। একসময় এসব কথা বলতে বলতে তার সৎমা তার সাথে সারা জীবন দূর দূর আচরণ করেছে তাও বলে ফেলছিল । হঠাৎ কিছু মনে হতেই কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে মায়ের খারাপ আচরণের কথা আর কিছু বলল না। কিছু না তা বললেও রতন ঠিকই বুঝে গিয়েছে যে সুখেনি তা নামের মত এতটা সুখী ছিল না । দিন যেতে যেতে রতনের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। রতন একটা চেয়ারে বসে বই পড়ছিল। পেছনে এসে সুখেনি নিয়ে এসে দাঁড়ালো। দু চারটা কথা বলল। কিন্তু রতন মনোযোগ সহকারে বই পড়ে যেতে লাগলো। এবার সুখেনি রেগে গেল। ছুটে গিয়ে রতনের হাত থেকে বইটা নিয়ে বলতে,,

- কিতা পড়তাছেন এমনে এই সুখেনির দিকে ফিরোন যায় না। আমি ইতা পড়তে জানি না দেইখা কি কিছুই বুঝমু না।

এবার রতন তার দিকে ফিরে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো আজ সুখেনি বেশ করে সেজেছে তার জন্যই হয়তো কথার ছুতো ধরে তাকে দেখাতে এসেছিল।সে তো তার জন্যই সেজেছ। সে চায় রতন তাকে দেখুক তার রূপে মুগ্ধ হয়ে যাক। বারবার সে রতন কে বুঝাতে চাইছিল সে তার জন্যই সেজেছে। আর সেটা আগেই বুঝতে পারছিলো রতন। রতন এমন অভিনয় করলো।রতন দেখতে চাইছিল।সুখেনি রেগে যায় কিনা। রতন মনে মনে খুশি হয়ে মুচকি এসে সুখেনির দেখে তাকালো,,,বললো

 -দেখেছি তো সুখে । বেশ মিষ্টি লাগছে তোমাকে.... 

সুখেনি লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিলো, এমন কিছুই শুনতে চাইছিল সে,, তারপর বললো..


-আমি দ কইছিনা আমারে দেখতে,, আমি কতা(কথা) কইতে আইছিলাম। 


রতন হেসে বলল

-তবে আমি তোমাকে দেখছি ।তুমি বললেই যে দেখব তা তো নয়। তোমাকে মন ভরে দেখার অধিকার আমার সব সময় আছে।তুমি জানো???তোমাকে বেশ মিষ্টি লাগছে। এমনিতেই পরশু দিন চলে যাব এরপর আর তোমাকে দেখতে পাবো না। তখন আমি কার সাথে কথা বলবো সুখে। 

কথাটি শুনে সুখেনি মন খারাপ করে বলতে লাগলো

-পরশুদিন ওই যাইতে হইবো????আর কিছুদিন থাইকা গেলে কি অইবো??? আমি সব বুঝি। 

 রতন হেসে বলে-

- তুমি কি বুঝো?🤨

সুখেনি রাগ করে অন্যদিক তাকিয়ে রইলো 

রতন সামনে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো আমার চাকরি আছে, আমাকে যেতেই হবে। তাহলে খাবো কি???চাকরিবাকরি না থাকলে তো তুমিও আমার কাছ থেকে পালাবে।

বলো? তোমাকে আটকে রাখতে হবে না?? 

সখেনি এবার বলল

-আমার চাকরি বাকরি খানা-দানা কিচ্ছু লাগবো না... আমি কই যামু???আমি জীবনেও যামু না।


তখন রতন বলল

- আমি পূজোয় আবার আসব। তবে রাগ করলে কিন্তু তোমাকে বেশ মিষ্টি দেখায় 

সুখেনি হেসে দেয়। তারপর বলতে লাগে  

পুজা আইতে তো আরো বহুত দিন পইড়া আছে । মা কইছে হেইদিন।

তখনই হঠাৎ শাশুড়ি মায়ের ডাক সুখেনির কানে এসে পৌঁছালো। সুখেনি ই বললো রতনকে 

-মা ডাহে। আমি যাইগা। আপনে বইয়া বইয়া আপনের বই পড়েন। 

একদিন পরই রতন চলে গেল। সুখেনির বড্ড খারাপ লাগছিল । এবাড়ির বেশিরভাগ মানুষ ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। সবাই ওকে গরিব বলে অপমান অবহেলা করে। তবে সুখেনির ননদ ফুলবালা সুখেনিকে অনেক সাহায্য করে , কিছু কিছু সময় মাকে বলে ওর সাথে এমন কেন করো মা??? ও তোমার সাথে কি করেছে?? তখন তার মা বলে।

-তা যদি তুই বুঝতে তাহলে কি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আমার ঘরে পড়ে থাকতি ? বাচ্চা দিতে পারলি না স্বামীকে।  কত বড় করে বিয়ে দিয়েছিলাম তোকে। স্বামীর ঘর ছেড়ে এখন আমার ঘরে পড়ে রইলি। ভাইয়েরা আর কয়দিন দেখবে বল তোকে? কদিন পর রাস্তায় ছুড়ে মারবে তোকে ??? 

রতনকে এগিয়ে দিয়ে এসে সুখেনি তার ঘরে এসে বসল। ঘরে এসে বসতেই কেন যেন তোর মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ লক্ষ্য করল একদিন দুচোখে জল গাল গড়িয়ে বেয়ে পরছে।অমনি তার ননদএসে ঘরে ঢুকলো 

তখন তাড়াহুড়া করে সুখেনি চোখগুলো মুছে ফেলল। তার ননদ হেসে হেসে বলতে লাগলো 

 কৃষ্ণে হিনা বিহনে

রাধাই যে কাঁদিবে

এতো লজ্জা কিসের?? 

সুখেনি লজ্জায় লাল হয়ে বলল। 

- না, আমি কুদ্দুর(একটু) ও কানদি (কান্না) নাই। 😭

।তখন ননদিনি বলতে লাগলো আমি জানি বিরহ কাকে বলে। আমারও তার কাছে যেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু আমি যেতে পারি না । বিয়ে হয়েছে কত বছর হয়ে গেছে। এরপরও বাচ্চা হয় না। তাই শাশুড়ি আমায় বাবার বাড়ি দিয়ে গেল। বলেছে সে নাকি আরেকটা বিয়ে করবে। আমি জানি, দূরে থাকতে কেমন লাগে। 

তারপর কথা পাল্টে মুচকি হেসে বলল সাহায্য নিতে পারো তুমি আমার কাছ থেকে। আমি লিখতে জানি দাদাকে কিছু লিখতে চাইলে আমাকে বলো । এখন যায়,,তোমায় ঠাকুমা, ঠাকুরদা ডাকছে, 

। রতন চলে যাওয়ার পরে সুখেনিকে অপমানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কেউ রইল না। সুখে কে উঠতে বসতে অপমান করতো। সুখেনি তা সহ্য করে নিতো।উঠতে বসতে সারাদিন কাজের উপর থাকে,, ধমকের উপর থাকে,, 

 কদিন পর পুজোতে রতন আসলো। 

রতন ওকে জিজ্ঞেস করে 

 -আমাকে ছেড়ে বুঝি বেশ ভালো ছিলে। 

সুখেনি বলল 

- আসিলাম(আছিলাম) আসিলাম। কতো সুহে আছিলাম।কুদ্দুর( আপনার)আপনের  কথা মন হইছেনা।  

সুখেনির অভিমান মাখা চেহারা দেখে রতন বুঝতে পারছিল। প্রত্যেক মুহূর্তেই রতনকেও মনে করেছিল। তার জন্য বেশ অপেক্ষা করেছিল। 

একদিন হঠাৎ সুখেনি রতনকে বলে বসলো

-হেচা কইরা একটা কথা কইবেন???? মিছা কতা কউয়ার কাম নাই 

রতন বললো -

- বলো,আমি তোমার সাথে কোনদিন মিথ্যা কথা বলি না আমি 

সুখেনি বলল 

আপনে কি কোনো কিছু অইলে বাড়ি থেইকে আমারে লরাই দিবেন?? 

এসব কেন বলছ সুখেনি??? আমি তোমাকে কখনো ছাড়বো না জবাব দিল রতন..তুমি আমায় এসব কথা বললে আমার একটুও ভালো লাগেনা  

সুখেনি বেশ খুশি হলো।সেবার পূজোতে রতন কয়দিন থেকে চলে যায় তার চাকরি ক্ষেত্রে। এতক্ষন হয়তো তোমরা বুঝতেই পেরে গেলে তাদের কথাগুলো শুনে বন্ধুত্ব কবেই প্রেমে রূপ নিলো। নারী পুরুষ কখনোই বন্ধু হতে পারেনা। আর এখানে এরা তো এরা স্বামি স্ত্রী। এমনি দিন যায় দিন আসে।তবে বিয়ের অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরও সখেনি তার বাবাকে দেখবার মতো সুবিধা হলো না। তার বাবা যেটা ভেবেছিল সেটাই হলো। সে ও তার মেয়ের দেখা পেল না। মাঝখানে একবার সুকেনি  সাহস করে বলেছিল বাড়িতে যাওয়ার কথা । প্রথমেই নিষেধ পড়ে গেছে। সুখেনি ভাবলো রতন আসতে রতন কে বলবে রতন নিশ্চয়ই তাকে নিষেধ করবে না। রতন বাড়িতে আসলো। সুখেনি রতনকে অসহায়ের মতো করে বললো আমারে বাড়িত নিয়া যাইবা নি। বাবারে দেখতে পরান ঢা খালি পুরে। কথাগুলো বলতে বলতেই সুখেনির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। চোখের জল গুলো আজ বাধা মানলো না। সকল বাধা পেরিয়ে নিশ্চিন্তে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে লাগলো । আর থাকতে পারছে না সুখেনি। বাড়িতে গিয়ে বোনদের জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে চায়। রতন সুখেনির চোখের জল মুছে বললো।

-তুমি কাঁদবে না সুখে। 

আমি কালই মাকে বলবো, যেন তোমাকে তোমাদের বাড়িতে যেতে দেয়।আমি বলব মাকে। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। 

অনেকদিন পর রতনের মুখের আশ্বাসবাণী শুনতে পেরে সুখেনী আনন্দে কান্না করতে লাগলো। রতন আরেকবারও তার মায়ের কাছে সুখে কে তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেছিল কিন্তু তার মা অস্বীকার করেছিল তাদের তার অসুস্থতার কথা বলে। তাছাড়া রতন ও সব সময় আসার সুযোগ পায় না। বাপের বাড়ি যেতে পারবে কিনা তা ভেবে সুখেনি বুক টিপটিপ করতে লাগলো। 

রতন সুখেনিট চোখের জল মুছে দিয়ে তাকে শান্তনা দিতে লাগলো। 

পরদিন রতনের মাকে রতন সুখেনির বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে লাগলো। 

রতন বলতে লাগলো 

সুখেনি এখানে এসেছে অনেকদিন হয়ে গিয়েছে। ওকি এখনো যেতে পারবে না মা???আমি ওকে দুদিন পরই ওর বাড়িতে নিয়ে যাব..... 


আরতি তুচ্ছের সাথে বলতে লাগলো 

-কোথায় আর যাবে???তুমি নিয়ে গেলে আমি আর কি আর বাধা আছে বাবু??তুমি তো নিজে নিজেই সবকিছু করো... আমার কথা শুনতে চাও একবার.. যদি কিছু বলি বউকে, তুমি তো ঠিক গলা উচিয়ে বলে দাও ""এমন কখনো করবে না সুখে,,,আমি ওকে চিনি.... বলতে থাকো

তোমাকে কিছু বলে আবার লাভ আছে????? 

রতন মায়ের অযথা কথায় কান দেলো না। কাল ওরা তো জানি তার মায়ের স্বভাব কি রকম এর আগেও যখন রতনের বড় ভাইয়ের বউ এ বাড়িতে বউ এসেছিল তার ওপর প্রথম প্রথম এমন অত্যাচার হরয়ছিল। তবে বড় বৌমার বাবা স্বর্ণের ভরি ভরি গহনা দাবি আসবাবপত্র দেবার পর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে একদম।এর জন্যই বড় বৌ সুখেনি সাথে হিংসা করে। এত কষ্ট করে এত কিছুর বিনিময়ে নিজের জন্য একটা সম্মান এর জায়গা করে নিল। আর সুখেনি কোত্থেকে এসে সবকিছু পেয়ে বসবে???. এটা সে মানতে পারবে না।তাই সুযোগ পেলেই শাশুড়ির কান ভরকাতে চায় বড় বউ। এই হলো না, ঐ দিলো না, ওই করলো না, সুখেনির ভাসুর ও বউয়ের হ্যা তে হ্যা মেলায়। - - দেখো মা কিচ্ছু নিয়ে এলো না।???

 । তবে সুখেনি কি করবে ??ওর তো আর ভরি ভরি গহনা দেওয়ার সামর্থ নেই। 

নিজে নিজেই রতনের মা কথা বলছিল আর সখেনিকে জাদুকরী বলে সম্বোধন করছিল। রতনে কথায় কান না দিয়ে,, যাচ্ছি মা,,

বলে চলে আসলো। 

পরদিন হলো মহা ঝামেলা। সকাল হতেই শাশুড়ী মা চেচাতে চেঁচাতে সবাইকে জানাচ্ছেন বুড়ী ঠাকুমার গলার হার নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওনার চিৎকারে বাড়ির সবাই ঠাকুমার ঘরে ছুটে ।আরতি একপাশে বিলাপ করতে বসে যায় ,,,,, -


 --চুরি হয়ে গেল র, চুরি হয়ে গেল, গলার হার টা চুরি হয়ে গেলো।আমি এর জন্যই বলেছিলাম, খুলে রাখুন হার টা, শকুনের চোখ পড়বে এটার উপর,, বুড়ো মানুষ খাটে শুয়ে পরে থাকে সারাদিন,,তার আবার হার কিরে?

তারপর ঠাকুমায়ের দিকে তাকিয়ে বলে -

-আপনি কি কাউকে দেখেন নি মা???

 ঠাকুরমা একটু উঠে বসলো, তারপর বলতে লাগলো -

কাউকে দেখিনি বৌমা 

- বলে,, -আপনি কী জানেন শেষ বার আপনার ঘর থেকে বের কে হয়েছে?????? 

ঠাকুরমা বলতো থাকল- কার কথা আর বলবো??? ওই সুখেনি তো আমার সকল খেয়াল রাখে..... ও আসার পর তোমরা আমার ঘরে ভালো করে ওকি মেরে দেখেছ কখনো?????

বেচারি সারাদিন খাটে।

 আরতি একটা হাসি দিলো বললো--, হয়ে গেল.... রতন বাবাজি বুঝতে পারছো তো?? তোমার বউ বাড়ি যেতে এমন নাচছিল কেন????জন্মে কখন দেখেছ এসব। 

কথাটা শুনতে সুখী চমকে উঠল এমনটাই হবে সে ভাবছিল, কারণ সব সময় এ বাড়িতে কোনো কিছু হলে সুখেনির উপর দিয়েই বিপর্যয় যায়।আরতি সব কিছুর জন্যই এই গরীব ঘরের মেয়ে সুখেনি দায়ী 

মায়ের মুখ থেকে এরকমও কিছু শুনতে হবে তার রতন আশা করিনি। হতবাক হয়ে মাকে বলল- 

-এসব তুমি কি বলছো মা???? তুই ভুলে যেও না যে সুখে এখানে এ বাড়ির বউ। সবার সামনে সরাসরি তুমি ওকে তুমি চুর হিসেবে দাবি করতে পারো না।

তোমার কাছে কি কোন প্রমাণ আছে মা ??? রতন এর মা হেসে হেসে বলে -

-আছে তো.... আছে...কাল তো সবার শেষে ওই বের হয়েছে,, আর মা তো নিজের মুখেই বললো ও ছাড়া এই ঘরে কেউই ঢুকে না .... এত প্রমাণ থাকতেও তুই আরো প্রমাণ চাস। কি বলে বড় বৌমা,আর ছোট বাবা তোমাকে ভালোভাবে বলছি কোথায় হারটা রেখেছো তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও ,  

সুখেনি কাঁদতে কাঁদতে বলে -

না না আমি এমন করছি না। মিছা কথা কইতাম না মা। আমার কিছু লাগলে তো আমি আপনেরারে কইয়া নেম৷ আমারে চুরির দোষ দিয়েন না।মা কালীর দিব্যি কইতাছি । 😔😔😔

ঠাকুমা কইয়া দেন আপনে 

 আমি চুরি করছি না,, আপনে কইয়া দেন। 

ঠাকুরদা বলতে থাকলো,ও যখন এই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল তখন আমি এখানে ছিলাম তো।কই কিছু দেখিনি তো,, 

ঠাকুরমা বলল,, বেচারি সারাদিন আমার জন্য খাটে আজ তার ফল এটা। তোরা বাড়ির বউকে চোর বানিয়ে দিবি। বলির পাঠা পেয়েছিস রে তোরা ওকে।যা খুশি করবি যা , কিছু বলে যাবি ,, 


সুখের শাশুড়ি আবারো বলে-

- তা ও যদি কিছু নিয়েও যায় তাহলে কি আপনাকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে বাবা????? চুর কখনো দেখিয়ে দেখিয়ে চুরি করে??তাকে মেরে ধরে স্বীকার করাতে হয় ।

 যতটুকু হয়েছিল অতদিন তা ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু আজ চুরির উপবাদ কিছুতেই মানতে পারছে না সুখেনি। 

এতক্ষণ এদের কথা শুনতে শুনতে রত বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে সবাইকে বলতে থাকলো,,, তোমরা সবাই চুপ করো,,, ঘরের মানুষকে চুর না ভেবে এবার আসল চোখে খুঁজে বের করো। আর মা,আমার স্ত্রীকে সবার সামনে অপমান করতে পারো না। কে সবার আগে বের হয়েছে কে সবার পরে বের হয়েছে তা দিয়ে তোর চুর প্রমাণ না।রাতে এসেও কেউ নিয়ে নিতে পারে তোমরা যদি এভাবে সুখে কে অপমান করতে থাকো আমি কিন্তু চুপ করে বসে থাকব না। যদি ঘরের কেউ নিয়ে থাকে তবে সুখে কেন অন্য কেউ তো নিয়ে যেতে পারে??? সব সময় সব কিছুতে সুখের দিকে কেন আঙ্গুল উঠে???? ও বড়লোক নয় তাই নাকি মা????

রতনে শিক্ষা থামিয়ে দিয়ে রতনের বৌদি বলল -এভাবে চিৎকার করে লাভ আছে? যদি বিশ্বাসই না করো তাহলে সবার ঘরটা ভালো করে তল্লাশি করো। আমি তোমাকে বাধা দিব না ঠাকুরপো,,, সাথে সুখের টা একটুও ভালো করে তল্লাশি করো কিন্তু। 


রতন আবারো বলল -কেন? আমার

দের ঘরটা ভালো করে তল্লাশি করবো কেন???আমি আমার ঘর তোমাদের তল্লাশি করতে দেবোই না ???। আর এভাবে তোমরা একজনকে অপমান হেনস্থা করতে পারো না....দাদা তোর বউকে কিছু বল... এসব কি বলছে???? 

দাদা হেসে বলল। আমি আর কি বলবো? তুই তো বেশ পারছিস.... ঘরের সবার কথা বিরোধিতা করে একাই তো বেশ পারছিস৷ 

আর ওরা যখন এত করে বলছে তোদের ঘরটা তল্লাশি নেবে। দে না???? একবার তলাশী করতে দে... তাহলেই তো প্রমাণ হয়ে যাবে ও নির্দোষ....... 

তারপর না হয় তুই আমাদের ঘরটাও তল্লাশি করবি। তোর ঘরের মালপত্র আমরা নিয়ে আসবো না। 


আরতি ঠেক মেরে বলতে থাকলো, আরে ওর কাছে কি জিজ্ঞেস করিস???? চল আমরাই গিয়ে তল্লাশি করি। আর এই মেয়ে শোনো তোমার কাছ থেকে কিছু পেয়ে যায়, তাহলে আর ফিরে এসো না। বাবার বাড়িতেই থেকে যেও। 

ফুলবালা বলতে থাকলো মা এবার কিন্তু একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে,,,, তুমি বৌদির সাথে এমনটা করতে পারো না। সে আমাদের বাড়ির বৌ। এসব বাহিরে জানা জানি হলে কি হবে???? ছি, ছি, পরে যাবে

আরতি কোনো কথায় কান না দিয়ে সুখের ঘর তল্লাশীর উদ্দেশ্যে অগ্রসর হল, 

মা এমন করো না, এগুলো লজ্জা ও বাড়ির বউ, ওর আত্ম সম্মান আছে, 

অরতি গোয়েন্দার মতো হনহন করে হেঁটে চলল,আর ওর পিছনে পিছনে সবাই ছুটে যায় সুখের রুমে৷. দরজার কাছে গিয়ে বলে... ছেলে, বৌএর ঘর মা হয়ে আমি কিভাবে তল্লাশি করি,,, বড় বৌমা, ফুলবালা তুমি একটু খুঁজতো । ভালো করে খুঁজে দেখ, মায়ের বহু পুরনো বহু শখের এটা,  

ফুলবালা মুখ গোমরা করে বলে -আমি পারবো না 


আরতি বলে তুই পারবি না তো কি হয়েছে? বৌমা খুঁজে দেখো ভালো করে,,


বড় বৌমা ঘর তল্লাশি করতে লাগলো,, রতন একপাশ থেকে ,, এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে চিৎকার করছিল,,, ওইদিকে বড় বৌ একটা পুটলি খুঁজে পেল, দেখে এর মধ্যে একটা তামার তৈরি ছোট মেয়েদের খেলনা যত্ন করে রেখে দিয়েছে। যা দেখে বড় বৌমা বলে, আর কত কিছু দেখব??? ভালো করে দেখো ঠাকুরপো তোমার বউয়ের জিনিসপত্র লুকানো অভ্যাস ভালই রয়েছে,, দেখো মিনির হাঁড়িটা কি করে লুকিয়ে রেখেছে,,, সামনে এসে দেখো,,, দেখি বাচ্চাদের জিনিসও ওর আকর্ষণ ভালোই,,,, 

--কই দেখি,,বলে রতন এগিয়ে এসে খেলনা টা কে হাতে নিল সুখের দিকে এটা এগিয়ে বলল তুমি কি সত্যি খেলনাটা মিনির কাছ থেকে নিয়েছো সুখে। 

আরতি বলে ওকে কি জিজ্ঞেস করছিস,,??? ও কি বলবে,? আমি বলেছি না,, এ মেয়ে মারাত্মক,,, বাচ্চাটার খেলনা পর্যন্ত হাতছাড়া হয়নি,,,, ভগবান, ভগবান, কি দিয়ে তৈরি যে এ।

রতন মায়ের কথা শুনে সুখী কে জিজ্ঞেস করল চুপ করে আছো কেন সুখে,??? তুমি বলো এটা কেন নিয়েছো তুমি???? এভাবে চুপ করে থাকা অভ্যাস আমার ভালো লাগেনা,,,,, এক্ষুন, কথা বলা বলছি 

এবার সুখেনি বললো,,,,, 

এইবার আপনে ও আমারে চুর ভাবতাছেন, আমি এইটা রাকছি না। 

তুমি যদি এটা না রাখো তাহলে এটা কোত্থেকে সুখেনি। বলে চিৎকার করে উঠলো রতন।


এবার ফুলবালা বলল 

ছি ছি ছোড়দা । কাউকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলি না,,, বড় বৌদির কথা শুনেই তো ছোট বৌদিকে চোর মনে করছিস।আমি একটু দূর থেকে দাড়য়ে তোকে পরীক্ষা করে দেখলাম । ঐদিন মিনি এই খেলাটার জন্য চিনির সাথে ঝগড়া করছিল, তাই তো এখানে লুকিয়েছি। তুমি এটাও বলতে পারছ না বৌদি???? বলবেই বা কি করে??? তোমাকে তো বলার সুযোগ কি কেউ দিচ্ছে না.....আর বড় বৌদি শুনো, নিজের মেয়েটাকে একটু সভ্য করার চেষ্টা করো। খামাখা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকে। মিনি তো এখন বড় হয়েছে,ওর কি আর খেলার সময় আছে নাকি???? শিক্ষা দাও, সুশিক্ষা দাও, 

ফুল বলার মুখে বড় বৌদি করা কিছু কথা শুনে ফুলবেলা কে উল্টো বলল,,, আমার মেয়েকে শিক্ষার কথা বলছো ফুলবালা????? তুমি কোন শিক্ষার অভাবে ছিলে,,??? ঠাকুর জামাইকে তো আর আসতে দেখছি না......

রতন ওদের চুপ করতে বলে হাতে থাকা হাঁড়িটা বিছানার দিকে ছুড়ে মারলো। ফুলবালা কে বলল তুই কি আর হারি লুকানো জায়গা পেলিনা???? 

ফুলবালা বলে কেন লুকানো যাবে না এখানে????? 

আমি এদিকে আসছিলাম তাই হাতে করে এটাকে নিয়ে এসে বৌদির কাছে দিয়ে বললাম লুকিয়ে রাখতে। এটা বলো না যে পুটলি কেন করা????? ওরা খেলার সময় পুটলিতে রেখেছিল। যতসব,,,,

আর কিছুক্ষণ ঘরটা ভালো করে চেক করে সবাই একে একে বেরিয়ে গেল। 

সবাই যাবার পর রতন লক্ষ্য করল সুখেনি 

চোখগুলো বড় বড় করে রতনের দিকে তাকিয়ে রইল,,, রতন ওর দিকে দৃষ্টি দিতেই চোখের কোনে জমে থাকা জল টপ করে গাল বেয়ে পড়ে গেলো। অশ্রু লোকাতে সুখেনি মুখ নিচু করে রাখে।

রতন ছুটে গিয়ে ওর মুখটা ধরে ওর মুখের সম্মুখীন করতেই সুখেনি তাড়াতাড়ি করে ওকে রতনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল। সে সরে গিয়ে জানালার পাশে বসলো। রতন সুখেনির কাছে একটা চেয়ার পেতে বসে বললো--

 --তুমি রাগ করেছো,,, তাইনা????

কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো, আমি এমন কিছু বলতে চাইনি। এতকিছু এত ঝামেলার ভেতর আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল, যা খুশি তাই বলে ফেললাম,, এই সুখে ,,, এদিকে তাকাও ,, কিন্তু এটা সত্যি রাগ করলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে,,, 

সুখে তোর মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল,,, ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে থাকলো,, আপনে না অয় যা মনে কইছেন তা আমি মানছি। আমারে দেকলে কি চুর মনে হয়?????আপনেরা সবাই এইটাই ধইরা রাখছেন আমি চুরি করছি,,,,কোনো ধরনের সমস্যা নাই,,, আপনেদেপর হগল কথা আমি হুইনা মাইনা মাথা পাইতা নিয়া নেম


রতন সুখীনিকে বলল 

সুখেনি আমি জানি তুমি চুরি করোনি। আমি তো বললাম আমি তোমাকে অপমান করতে চাই না।তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল,,,, এদিকে দেখবে কান ধরে আছি।

কিন্তু সুখেনি রতন কে বলে, আমি গুসা (রাগ) করছি না, কন দরোনের কাম নাই।আমি দ এনপ আওনের যোগ্য আছলাম না। কেরে আনলেন আমারে????

বলে হাত দুটো মুখের সামনে রেখে মুখটি আড়াল করে কাদতে থাকে। 

রতন সুখেনির মন ভালো করতে চাইছিলো। আর এদিকে ঘরে আরতি আর বড় বউ বলতে থাকে 

আরতি বলে,,, আর যায় বলো। আমি নিশ্চিত এটা ওরই কছে আছে। বাবা মায়ের দুঃখ লোকাতে এটা করলো মেয়েটা। তাইতো এতো ঘুরুঘুরি করলো 

মায়ের কাছে। বাবাগো,,, কি মেয়ে এটা। ছেলে টা ও বদলে গেছে,,,, 😵‍💫

বড় বউ বলে। আমি কি বালি- - - - - - - - - - -??? ওর বাবাতো ওকে গহনা দেই নি। তাই সে নিয়ে নিলে নিলো। যদি আপনার পক্ষে থাকি তহলে এটা বললাম 

আর যদি রতনের পক্ষে থাকি তাহলে তো এটা বলব রতন তো বেশ গহনা দিয়েছে,, তারপরও কেন সে ঠাকুমার গহনা চুরি করবে,,তাও সে ঠাকুরমার শখের গহনা???? সুখেনি কি আসলেই এমন???? আপনি আর যাই বলেন মা,,আপনার ছেলে রতন কিন্তু বউয়ের জন্য বেশ কথা বলতে জানে,,, হা হা হা 

আরতি বড় বউকে বললো,,, তুমি কি করে বুঝবে ওই মেয়ের জাদু,,একটা ফু মেরে আমার ছেলেকে পাগল করে দিল,,, আরে ওর তোগহনা আছে, এ তো আমিও বলি, কিন্তু ওর বাবা তো গরিব,,, তার জন্যই হইত চুরি করে নিয়ে রেখে দিয়েছে,,, যাবার সময় নিয়ে বাবার হাতে তুলে দিবে। বিক্রি করে এর বাবা এর ছোট বোনকে বিয়ে দেবে। দেখে নিও,, আমি যা বলেছি তাই হবে।



Rate this content
Log in