লিবিয়ার রূপকথা সাত ভাই এক বোন
লিবিয়ার রূপকথা সাত ভাই এক বোন
অনেক দিন আগের কথা। লিবিয়ার অজোপাড়া গাঁয়ে মারিয়া নামে এক মহিলা বাস করত। তার ছিল সাত ছেলে। ছেলেরা বাইরে কাজ করে। সকালে শিকার করতে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় ফেরে। ঘরের কাজ করার মতো কেউ নেই। তাই মারিয়ার বড়ো দুঃখ, তার যদি একটি মেয়ে থাকত তা হলে সংসারের কাজে অন্তত কিছুটা সাহায্য পাওয়া যেত। মায়ের কষ্ট দেখে সাত ভাইয়েরও দুঃখ। তাদেরও খুব ইচ্ছা, তাদের যদি একটি বোন থাকত তাহলে মায়ের অত কষ্ট হতো না, আর নিজেরাও বোনের সাথে গল্প করতে পারত।
একদিন মারিয়ার এক মেয়ে হলো। কিন্তু সাত ভাইয়ের খালা এসে খবর দিল, ওদের আরেক ভাই হয়েছে। সাত ভাই কিন্তু ভাই চায়নি, তারা তারা খুশি হতে পাতের ভাই চেয়েছিল বোন। তাই তারা খুশি হতে পারল না। মনের দুঃখে সাত ভাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। যেতে যেতে তারা এক শহরে এসে হাজির হলো। সেই শহরে লোকজন বেশি নেই। সাত ভাই এক দুর্গে এসে আশ্রয় নিল। দুর্গে কোনো লোকজন নেই। তবে সেখানে একটা বেড়াল আর একটা পায়রা দেখতে পেল।
সাত ভাই দুর্গে বাস করে। সকালে বেরিয়ে যায় শিকারের খোঁজে। যা পায় নিজেরা রান্না করে খায়। তারা বেড়ালটিকে খুব আদর করে। পায়রাটিকেও খেতে দেয়। সাত ভাই শিকারে বেরিয়ে গেলে বেড়াল আর পায়রা দুর্গ পাহারা দেয়। কোনো খবর থাকলে পায়রা উড়ে গিয়ে সাত ভাইকে জানিয়ে দেয়। এদিকে বোনটি বেশ বড় হবার পর জানতে পেল তার আরো সাত ভাই আছে। সে মাকে বলল, মা, আমি আমার সাত ভাইকে খুঁজে বের করব। সাত ছেলেকে হারিয়ে মারিয়ার দুঃখের শেষ নেই। একমাত্র মেয়েটিও আবার বেরিয়ে যেতে চায়। মারিয়া কিছুতেই রাজি হলো না।
মেয়েও জিদ ধরল। শেষে আর কি করা যায়। মা তাকে যেতে দিতে রাজি হলেন। একদিন বোনটি প্রচুর খাবার নিয়ে একটি উটের পিঠে চড়ে ভাইদের খোঁজে বের হলো। লিবিয়া হচ্ছে মরুভূমির দেশ। মাথায় প্রচণ্ড রোদ আর নিচে ধুধু বালি। তা সত্ত্বেও বোনটি মরুভূমির ভিতর দিয়ে চলতে শুরু করল। তিনদিন তিনরাত চলার পর সে সেই দুর্গে গিয়ে হাজির হলো। বোনটি একসাথে সাত ভাইকে দেখে বুঝতে পারল তারা তার ভাই।
সে ভাইদের বলল, আমি তোমাদের একমাত্র বোন। খালা তোমাদেরকে মিথ্যা খবর দিয়েছিল। চলো, দেশে ফিরে যাই। মা তোমাদের জন্যে কাঁদছেন। ভাইয়েরা বোনকে পেয়ে মহাখুশি। তারা বোনকে খুব আদর যত্ন করল। বলল, আমরা এখানে আরো কয়েকদিন থাকব, তারপর দেশে ফিরব। পরদিন সকালে শিকারে বের হবার সময় সাত ভাই বোনকে বলল, সাবধানে থেকো। দরজা বন্ধ করে রেখো। বেড়ালটির কথার অবাধ্য হবে না। কিছু খেতে হলে আগে বেড়ালকে খেতে দেবে। তারপর নিজে খাবে। পায়রাটিকে কষ্ট দেবে না।
কোনো বিপদ হলে ওকে জানাবে। সে গিয়ে আমাদেরকে খবর দিলেই আমরা ছুটে আসব। বোন বলল, আচ্ছা। দুর্গটি নোংরা হয়ে আছে। অনেকদিন ঝাড় দেয়া হয়নি। তাই বোনটি ঝাঁটা হাতে নিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে লেগে গেল। ঝাড় দেবার সময় সে একটি সীমের বিচি কুড়িয়ে পেল। সে বিচিটি মুখে পুরে ফেলল। ভাইদের কথা বেমালুম ভুলে গেল। বেড়ালটি তা দেখতে পেয়ে বলল, তুমি কি খাচ্ছো, আমাকেও দাও।
বোন বলল, একটা ছোট্ট সীমের বিচি। বেড়াল বলল, যাই হোক, অর্ধেকটা আমাকে দাও। বোন বলল, না, দেব না। যাও এখান থেকে। এই বলে সে বেড়ালকে ঝাঁটা নিয়ে মারতে গেল। বেড়াল এক লাফে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ঘর পরিষ্কার করার পর বোনটি রান্না করতে গেল। কিন্তু এসে দেখে চুলা নিভানো। তাতে আগুন নেই। কোথায় আগুন পাওয়া যায়? বোনটি আগুনের খোঁজে বের হলো। কিছুদূর যেতেই দেখে এক বিরাট দৈত্য আগুন জ্বেলে বসে আছে। ওকে দেখেই দৈত্য তেড়ে এলো। বোনটিও ছুটতে শুরু করল। ছুটতে ছুটতে সে দুর্গে এসে ঢুকল। ঢুকেই সে লোহার দরজা বন্ধ করে দিল।
দৈত্য অনেক ধাক্কাধাক্কি করল। কিন্তু দরজা ভাঙতে পারল না। সে শাসিয়ে গেল, আগামীকাল আগুন নিয়ে আসব। তখন পালাবে কোথায়? বোনটি ঘরের ভিতর ভয়ে কাঁপতে লাগল। সে পায়রাকে দিয়ে ভাইদের নিকট খবর পাঠাল। খবর পেয়ে সাত ভাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। সাত ভাই দুর্গের চারদিকে গভীর গর্ত করল। গর্তের মধ্যে তারা আগুন জ্বালিয়ে রাখল। পরদিন দৈত্য আগুন পার হতে গিয়ে গর্তের মধ্যে পড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তারপর সাত ভাই এক বোন মনের আনন্দে নিজেদের দেশে ফিরে এলো। মা তো তার সাত ছেলে আর এক মেয়েকে ফিরে পেয়ে মহাখুশি। খালা তার মিথ্যে কথার জন্যে খুব অনুতাপ করল।
