গল্প: ত্রাতা।
গল্প: ত্রাতা।


প্রচণ্ড গরমে প্রাণ অষ্ঠাগত।সকাল থেকে বসেই আছে ফুটপাতের ওপর পরেশ,কিন্তু কেউই ওকে কিছু দিচ্ছে না।এমনকী একবার কেউ ঘুরেও তাকাচ্ছে না ওর দিকে।সব যে যার নিজের মতন,নিজের কাজে ব্যাস্থ।আর ঘুরে দেখবেই বা কেন,একজন ল্যাংড়া রুগনো ভিখারীর দিকে?দেখলে বা কথা বল্লে যদি মান চলে যায়,তখন কী হবে?প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে পরেশের কিন্তু আজকে ওর কাছে সে পয়সাও নেই যে ও কিছু কিনে খাবে।অগত্যা ধৈর্য্য ধরা ছাড়া আর কোনো পথ ও নেই ওর কাছে।কিন্তু খানিক পরেই ও দেখলো যে,একটা সুন্দর দেখতে ছোট্ট কিশোর ছেলে,ওর দিকেই তাকাতে তাকাতে এগিয়ে আসছে।ছেলেটিকে কিছু বলার আগেই ও নিজের পকেট থেকে,একটা দশ টাকার নোট ও একটা বড় কেকের প্যাকেট ওর হাতে তুলে দিল।এ যে মেঘ না চাইতে জল! কিছুটা অবাক হয়ে গেল পরেশ,ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে।এ তো একটা ছোট্ট বালক! তার মনে এত মায়া,এত দয়া।এও কি সম্ভব আজকালকার যুগে! ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল,"তুমি কি রোজই এখানে বস দাদু?"
পরেশ মাথা নেড়ে জানালো 'হ্যাঁ',কারণ ও শুধু অথর্বই নয়,ও বোবাও।ভগবান ওর বাক শক্তি টাও কেড়ে নিয়েছেন,অনেকদিন আগেই।ছেলেটি সেটা বুঝতে পেয়ে আর কিছু না বলে ওখান থেকে প্রস্থান করল. [2]
দিন সাতেক পরে,সেই ছোট্ট ছেলেটি আবার এল পরেশের কাছে।কিন্তু এবার আর কোনো খাবার বা টাকা নিয়ে নয়,বিশাল বড় একটা চটের ব্যাগ নিয়ে হাজির হলো ও।ব্যাগ খুলে ওর ভিতর থেকে অনেক গুলো জিনিস বের করে নামাল ও।তারপর প্রত্যেকটি জিনিস কে সুন্দর করে পরেশের সামনে সাজিয়ে রাখল বাচ্চাটা।সব কিছু হয়ে যাবার পর ও বল্ল,"দাদু তুমি আর আজ থেকে কারোর কাছে ভিক্ষে না করে,এখানে বসেই নিজের ব্যাবস্যা শুরু করবে কেমন।এখানে কিছু মাস্ক,হ্যান্ড গলাভস্,হেড-ক্যাপ্স আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে,তুমি এইগুলাকেই এখানে বসে বসে বিক্রি করে পয়সা রোজগার করতে পারবে।এখন লকডাউন-5 চলছে না তাই।এইগুলোর এখন খুব ডিমান্ড বাজারে,করোনা ভাইরাসের জন্য।"
আশচর্য দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চেয়ে ছিল পরেশ।ভেবেই উঠতে পারছিলনা যে কী ভাবে ওকে ও ধন্যবাদ দেবে।দু চোখ জলে ভরে উঠছিলো ওর।তাই শুধু দু হাত তুলে আশির্বাদ করল 'ত্রাতা রূপী' ঔই বালকটিকে পরেশ।যাবার আগে বালক বল্ল,"আমি জানি দাদু তোমার খুব কষ্ট হয় এই অবস্থায় ভিক্ষে করতে,তাই আমার মায়ের থেকে কিছু টাকা নিয়ে এইগুলা কিনলাম তোমার জন্য....আসলে আমি ঠিক কারো দুঃখ কষ্ট দেখতে পারিনা তাই আর কি।......আজ তাহলে যাই,আবার আসব পরে।" তার পরেই ছেলেটি নিজের গন্তব্যস্থলের জন্য এগিয়ে গেল।
পরেশ শুধু ওকে যাওয়ার আগে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো ওকে ওর নামটা।ও হেসে বল্ল "আমার নাম যিশু।" পরে পরেশ নিজের মনেই ভাবলো,"হ্যাঁ তুমি সত্যি যিশু,তুমি আমার ত্রাণকর্তা,আমার ত্রাতা,আমার যিশু।"
সমাপ্তি।