STORYMIRROR

Marufa Rabbi

Children Stories Classics Children

4  

Marufa Rabbi

Children Stories Classics Children

বোকাদের সর্দার

বোকাদের সর্দার

3 mins
218

অনেকদিন আগের কথা, এক দূরের এলাকায় থাকতো অনেক বোকা লোকেরা। তারা যে কতটা বোকা ,তা আস্তে আস্তে বোঝা যাবে। সে এলাকায় বুদ্ধিমান লোক তো পাওয়াই যায় না। তাদের মধ্যে কোন রাজা-রানী ছিল না। ছিল শুধু এক সর্দার। যাকে আমরা বলতে পারি 'বোকাদের সর্দার।'তারা যে কিভাবে সর্দার বানাতো, তা আমার জানা নেই।

একবার এক সর্দার এলো। তিনি ছিলেন বোকা, আবার বলেন নিজেকে বুদ্ধিমান। সব বোকারা ওনার চামচা হয়ে গেল। সর্দার এর কাজ ছিল -শিক্ষাদান করা। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সর্দারের কাছে পাঠাতো আর বলতো"যা ,যা। একটু পড়ে আয়, তারপর দেখবি আমাদের মত জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান হয়ে গেছিস!"একদিন সর্দার সবাইকে পড়াচ্ছিল। পড়া? আরে না, মানে হল বই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়া! এমনিতেই বইয়ে ছিল অল্প বিদ্যা,তার ওপর আবার এই অবস্থা। সেদিন সরদার সবাইকে দেখাচ্ছিলেন "শোনো বাচ্চারা। মন দিয়ে বই পড়ো (ছেঁড়ো), আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন সবার বই ছিড়ে খেয়ে নিয়েছিলাম। তাইতো আমি এত জ্ঞানী!"সর্দার সবাইকে ছিঁড়তে বলল, সবাই ছিঁড়ল শুধু একটা ছেলে ছাড়া। সে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল"সর্দার, বই খেলে কিভাবে কেউ জ্ঞান পাবে?"সবার একথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সর্দার বলল"আরে বোকা। বই খেয়ে নিলে তার লেখা বা জ্ঞান মগজে চলে যাবে। এটাও বুঝিস না!"সবাই আবার হাসতে লাগলো। ছেলেটা রেগে চুপ করে বসে রইল। 

ছেলেটার নাম রূটিকো। সে এসব মিথ্যা কথা বিশ্বাস না করে সর্বদা সত্য জানার চেষ্টা করতো। তাই তার মধ্যে এখন একটু বুদ্ধি বা জ্ঞান সৃষ্টি হতে পেরেছে। 

ছেলেটা যখন নিয়মিত সবাইকে এসব বলা শুরু করলো, তখন সবাই তার উপর উল্টো চটে গেল। সর্দারও খুব রেগে গেছেন। সর্দার একদিন ছেলেটাকে সবার সামনে এনে বিচার করতে লাগলেন। এক লোক বলল"ওর হওয়া উচিত ফাঁসি!"আরেক লোক বলল"শূলে চরাতে হবে!"সর্দার সবাইকে থামিয়ে বললেন"কি বলো এসব! ওর আরো কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। টানা তিন দিন ধরে ভালো ভালো খাবার তাকে দিতে হবে! বেশি দিতে হবে, যাতে পেট ফেটে মরে যায়! সবাই উচ্চস্বরে বলল"এই আমাদের রাজার বুদ্ধি! সাবাস!"তাই করা হলো। ছেলেটার সামনে সব ভালো ভালো ও লোভনীয় খাবার রাখতে শুরু করা হলো। তবে ছেলেটা পরিমাণ মতো খাবার খেলো এবং তার স্বাস্থ্য আরো ভালো হতে লাগলো। তিনদিন পর সরদারের এক চামচা দেখলেও সে তো দিব্যি বেঁচে আছে। এই দেখে চাচার হাত-পা কাঁপতে লাগলো। দ্রুত সর্দারকে এ খবর দিলে, সরদারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল! সবাই যখন এ কথা জানতে পারলো ,তখন সবাই যে কি ভয় পেল! তারা বলতে লাগল"অসম্ভব! সে কিভাবে বেঁচে গেল! এ তো মানুষ হতে পারে না!"তখনই রূটিকো বাইরে বেরোলো। সবাই সর্দারসহ তার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল আর বলল"দয়া করে আমাদের মাফ করুন। আমরা বুঝতে পারিনি আপনি কে!"রূটিকোর আর বুঝতে বাকি রইলো না। হেসে বলল"আচ্ছা, শুধু এক শর্তে! আমাকে সর্দার বানাতে হবে। সবার সাথে সাথে তাকে সর্দার বানিয়ে দিল। আর তারপর, রূটিকো শিক্ষিতদেরকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শিক্ষক বানিয়ে ছড়িয়ে দিলো শিক্ষার আলো। সে মেধার সঠিক মূল্যায়ন করল আর বোকারা আস্তে আস্তে সঠিক জ্ঞান অর্জন করল। দেখা গেল, সে এলাকায় বোকাদের সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে।


Rate this content
Log in