STORYMIRROR

Sayani Sarkhel Chakraborty

Others

4.0  

Sayani Sarkhel Chakraborty

Others

বাঁধন

বাঁধন

5 mins
372


চায়ের কাপটা বিকাশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাশের ঘরে সোফায় টানটান হয়ে শুয়ে পরলো রুহি।কাজ আর কিছুই না ,ওই ফোন খোঁচানো। ইয়ারফোন সবসময়ই গোজা তার কানে।অনেক্ক্ষণ থেকেই বিকাশ ডাকছিলো কিন্তু হতচ্ছাড়া ইয়ারফোনটার জন্য কিছুই কানে যাচ্ছিল না তার। চিৎকার করে ডাকাডাকি না করে শেষ পর্যন্ত পাশে গিয়ে দাঁড়ালো রুহির।তাকে দেখে বুঝতে পারলো রুহি যে কিছু বলার জন্যেই এসেছে।

“এটা কি চা করেছ?”

“কেন?”

“খেয়ে দেখো নিজেই।”

চা টা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে নিজেই ছিঃ ছিঃ করে ফেলে দেয় রুহি।কেননা চিনি তো দূর , লবণে পোড়া ছিলো সেটা।

“কিচ্ছু বলার নেই তোমাকে।” বলেই ঘরে গিয়ে নিজের কাজ নিয়ে বসে পরে বিকাশ।

“আরে,তুমি রাগ করছো কেন? করে দিচ্ছি আমি চা আবার ওয়েট”।

“নো থ্যাংকস, আমার লাগবেনা। আমি বাইরে গিয়ে খেয়ে নেব।ইউ প্লিজ কন্সেন্ট্রেট ইন ইওর মোবাইল।”

বিকাশ আর রুহির বিয়ে হয়েছে তিনবছর। বলতে গেলে দুই পরিবারের লোকজন ঘাড় ধরে দুজনের বিয়ে দিয়ে দেয় কেননা বিয়েতে কারোরই সম্মতি ছিলো না।বিকাশ ছিলো অফিস কলিগ নাজনিনের প্রেমে পাগল আর এদিকে রুহি ছিলো গা ছেড়ে স্বাধীন ভাবে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করা মেয়ে।বিকাশ চেষ্টা করেছিল পালিয়ে যাবার, কিন্তু প্ল্যান সাক্সেস হয়নি হিটলার মায়ের জন্য।তবে বিয়ে করলেও কারোর কোনো ক্ষতি হয়নি।দুজনেই নিজেদের মন মতো চলতে ব্যস্ত।

কাজের সূত্রে রুহিকে নিয়ে আলাদা থাকতো বিকাশ। তাই প্রেম পর্বের অবসান হয়নি বরং আরও জমে ক্ষীর।এমন না যে রুহি কিছু বুঝতো না। অচেনা নম্বর থেকে ফোন, লুকিয়ে কথা বলা,কাজের বাহানা দিয়ে দু'দিন তিনদিন বাড়িতে না আসা এমনকি রুহি বাপেরবাড়ি গেলে ফোনে পেতোনা আর তখনই এক্সট্রা কাজের কথা বলে ফোন রেখে দেওয়া এসবে ভালো মতোই বুঝতে পেরেছিলো সে। প্রথম প্রথম অনেক ভাবে চেষ্টা করেছিলো স্বামীকে নিজের করে নেওয়ার কিন্তু করেনি আর।হয়তো সময়ের অপেক্ষায় নিজের মনে আগুন ধরিয়ে ছিলো। ডিভোর্সের কথা কোনোদিনও মাথায় আনেনি,কারণ রুহি চৌধুরী হারতে শেখেনি।স্বামীকে আপন করার এই যুদ্ধ কোনোদিনই কারোর চোখে পরেনি। লোকসমাজে তারা সুখী দম্পতি। নিজের মনকে শান্ত রাখতে চলতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর একাকীত্বে চলতো কলম।তার চাওয়াপাওয়া নিয়েও কোনো মাথা ব্যাথা ছিলোনা বিকাশের কেননা বাবার একমাত্র মেয়ের একাউন্ট মাস গেলেই ভরে যেতো।

  তবে আজকাল রুহিকে খুবই অন্যরকম লাগে বিকাশের।সময়ে অসময়ে সেও ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে কথা বলে।বাইরে গেলে দেরি করে আসে,মাঝে মাঝেই ফোন ব্যস্ত। পুরুষেরা নিজে হাজার ভুল করলেও দোষ হয়না।নিজে অন্যের প্রেমে মশগুল থাকলেও সেটা ভুল না।তবে যতই স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা না থাকুক,সম্মান না থাকুক মনে সন্দেহ তাদের ঠিকই হয় আর সেটা নিজেরা সহ্যও করতে পারেনা। বিকাশের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।

   14ই অগাস্ট অ্যানিভার্সারির দিন দুপুরে রুহিকে ফোন করে বিকাশ।

“রান্না করতে হবেনা আজ।আমি নিয়ে যাবো খাবার। তবে একটু দেরি হবে।হয়তো ১২ টা সাড়ে ১২টা”।

“দরকার নেই, পার্টি আছে। তুমি খেয়ে চলে এসো।”বলেই ফোন রেখে দেয় রুহি।কোনো পার্টিই ছিলো না রুহির।আগেরদিন রাতে ফোনে বিকাশকে ফোনে বলতে শোনে “আমি ৬টার মধ্যে তোমার কাছে চলে যাবো। তোমার আজ অফিস আসার দরকার নেই। সন্ধ্যা থেকে আমার বাবুর কাছেই আমি থাকবো।প্লিজ রাগ করোনা আজ যেতে পারবো না।” -এই কথা শোনার পর বিবাহবার্ষিকী নিয়ে যাও সামান্যমাত্র এক্সপেকটেশন ছিলো রুহির,তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল।লাঞ্চ শেষ করে টিভি অন করতেই আরেকটি ফোন আসে রুহির,কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।

 অফিস থেকে বিকেলে বের হয়ে বাড়িতে আসে বিকাশ। ডুপ্লিকেট চাবি থাকায় ঢুকতে অসুবিধে হয়নি।সন্দেহ যেহেতু রুহিকে সে করতো তাই ফোন করে বসলো শেষ অবধি কিন্তু ওপার থেকে সুইচঅফ।অনেকবার চেষ্টা করেও পায়না রুহিকে। “আজ আসুক,একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।" খেয়ে নিয়ে বিছানায় হেলান দিতেই কলিংবেলের আওয়াজ।দরজা খুলতেই,

“লোকাল থানা থেকে এসেছি।বিকাশ চ্যাটার্জি?”

“হ্যাঁ, আমিই বিকাশ চ্যাটার্জি। কিন্তু আপনারা এখানে কেন?”

“আপনাকে একটু আমাদের সাথে যেতে হবে।নাজনিন সুলতানা অ্যারেস্ট হয়েছে,আর ওনার ফোনের কললিস্টে

আপনার নম্বরটাই বেশি।তাই এনকয়ারির জন্য আপনাকে যেতে হবে”।

“কি! কিসের জন্য অ্যারেস্ট হলো?”

“মেয়ে পাচারকারী র‍্যাকেটের সাথে উনি যুক্ত। চলুন।” কিছু শোনার আগেই থানায় নিয়ে যায় বিকাশকে।গিয়ে সমস্তটা জানার জন্য চাপ দেওয়া হয় তাকে।অবৈধ সম্পর্কের কথাও জানাজানি হয়।যেহেতু বিবাহিত তাই স্ত্রী মানে রুহিকেও থানায় ডাকা হয়।রুহি থানায় আসতেই।

“আরে ম্যাডাম আপনি! আপনি থাকতে আপনার স্বামী এমন একজনের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। আপনি কিছু জানেন না???”

“জানি।আমি ওকে সুখী রাখতে পারিনি। তাই ওর এই স্টেপ।”

“আমাদের সন্দেহ উনিও এই র‍্যাকেটের সাথে যুক্ত।”

“ওসব ভুল কথা। মনের সন্দেহ নিয়ে যাকে তাকে আপনারা দোষী বলতে পারেন না।মানছি ও অন্যের সাথে সম্পর্কে লিপ্ত, মানুষকে তো বাইরে থেকে চেনা যায় না।ও হয়তো এর বাইরেটা দেখেই গলে গেছে কিন্তু তাই বলে এসব ব্লেম উইদাউট এনি প্রুফ আপনারা দিতে পারেন না।প্রুফ দিন,তারপর যা স্টেপ নেওয়ার হয় নিন।আমি বাধা দেব না”।

“ঠিকাছে ম্যাডাম। আপনি নিয়ে যান ওনাকে। তবে যদি প্রুফ পাই ওনাকে আমরা অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হবো”।

পুলিশস্টেশনে রুহির খাতিরদারি অন্যরকম দেখে অবাক হয়ে ছিলো বিকাশ। রাস্তায় কারোর মুখে কোনো কথা ছিলো না।বাড়ি ফিরে ঘরে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়ে রুহি লাইট অফ করে।নিজের মনের প্রশ্নের উত্তর বিকাশ তখনও পায়নি।ঘরে গিয়ে লাইট অন করতেই।

“লাইটটা অফ করো।মাথা ব্যথা করছে আমার”।

“কিছু কথা ছিলো রুহি”।

“তোমার সাথে কোনোরকম কথা বলার ইচ্ছে বা মুড কিছুই নেই।প্লিজ যাও এখান থেকে।” কোনোরকম ভাবে জোর করতে পারেনি রুহিকে তখন বিকাশ। লাইট অফ করে পাশের ঘরে গিয়ে চোখের জল মাটিতে ফেলতে থাকে সে।ফিরে এসে ফ্রেশ হবার সময় টেবিলে নিজের ফোনটা রেখেছিলো রুহি।মন মেজাজ ঠিক না থাকায় ফোনের কথা মনেও ছিলো না তার।হঠাৎই ফোনটা ভাইব্রেট করতেই বিকাশ ফোন খুলে বসে।হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ “অভিনন্দন রুহি চ্যাটার্জি ।তোমার দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হতে চলেছে”। একের পর এক কনভারসেশন চেক করতে থাকে।তাতে বুঝতে পারে একটা এনজিও, দুটো স্কুল চালায় রুহি,এমনকি কন্টাক্টে লোকাল থানার ওই পুলিশকেও পায়। পেছন থেকে তখনই

“কিছু পেলে?আই মিন কোনো প্রেমিকের হদিস পেলে কি??”

“আমি তেমন কিছু ভাবিনি রুহি।"

“ভাবলেও আমার কিছু যায় আসে না।”

“সরি রুহি।প্লিজ ক্ষমা করে দাও”।

“ ওসব কেন বলছ? তুমি তো কোনো ভুল করনি।এই কাজ আমি করলে ভুল হতো।”

“না রুহি।আমার ভুল হয়ে গেছে খুব। প্লিজ…..”

“চুপ।প্লিজ চুপ করো।কি ভাবছ তুমি? যে এইসব বলবে আর আমি ক্ষমা করে দিয়ে কাছে টেনে নেব তোমাকে? তিন তিনটা বছর সহ্য করেছি,আর না।ভালোবাসতে না তাও মেনে নিয়েছিলাম।তাই বলে এমন একটা জঘন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক।কিসের স্বাধ পেয়েছিলে? শরীরের? মনটা দেখোনি তাইনা।কিভাবে দেখবে বলো,বাইরের রূপেই গলে গেছ।রূপ আমার নেই? মদের নেশায় শরীরটাও নিংড়ে নিতে। কিচ্ছু বলতাম না।শুধুমাত্র একটু ভালোবাসার আশায় থাকতাম। কিন্তু সেখানে…. ছিঃ লোকসমাজে আমার মুখ দেখানোর জায়গা রাখলে না। ডিভোর্স দিয়ে দিতাম। রেডি করে রেখেছি পেপারস।ভেবেছিলাম তুমি সুখে আছো ওর সাথে,আমার কাছে তো ওটাই অনেক। অনেকদিন আশায় ছিলাম, চেষ্টাও করেছিলাম তোমায় আপন করে নেবার।পারিনি,আসলে তুমি মানুষই না। ভেবোনা তোমার প্রেমিকা অ্যারেস্ট হয়ে গেছে বলে তোমায় আমি ডিভোর্স দেবোনা।পেপারস রাখছি,সই করে দেবে।কাল চলে যাবো আমি বাড়িতে।” কথাগুলো রাগে বের হলেও অঝোরে চোখের জল পড়ছিলো রুহির। আলমারি থেকে ডিভোর্স পেপার বের করে বিকাশের হাতে ধরিয়ে দেয়। পেপার হাতে নিয়ে অনেক্ক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকে বিকাশ, চোখ থেকে ঝরছিলো জল। নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিয়েছিলো দুজনকেই কিছুক্ষনের জন্য। হঠাৎই পেপারটা ছিঁড়ে ফেলে রুহিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে বিকাশ। আর একজোড়া কাঁপতে থাকা ঠোঁট ছুয়ে দিল রুহির কপাল। রুহির অশ্রুবন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেল সমস্ত রাগকে।

          ভালোবাসা স্বামীর প্রতি কোনোদিনই কমেনি রুহির। টেনে নিয়েছিলো কাছে নিজের ভালোবাসাকে। আর তিনবছর পর অবশেষে বিবাহবার্ষিকীর শ্রেষ্ঠ উপহার পেলো রুহি,- তার স্বামীকে।



Rate this content
Log in

More bengali story from Sayani Sarkhel Chakraborty