শিরোনাম - মিথ্যামতি
শিরোনাম - মিথ্যামতি
কমল আর বিমল দু'ভাই। কমল বড় আর বিমল ছোট। তাদের চরিত্র একে অপরের বিপরীত। কমল শান্ত,নরম প্রকতির, মৃদুভাষী আর বিমল কঠোর,দামাল,দূরান্ত, অশান্ত ও মৃদু ভাষী। অন্যায় তার কাছে অসহ্য,বিনা প্রতিবাদে ঘরে ফিরে আসে না। আবার তার বুদ্ধির কাছে অনেকেই হেরে যেত। স্কুলের বন্ধুরা তার বুদ্ধিকে অবলম্বন করে তারা বেশ খুশি হত। ছোট ভায়ের নালিশ আর দূরান্তপনায় অতিষ্ঠ হয়ে একদিন দিদিরা শলাপরার্মশ করে কিভাবে ভাইকে শিক্ষা দেবে। ঠিক হল সন্ধের পর ঘরে এলে অসত্যবুদ্ধির আশ্রয় নেবে। সেদিন বিমল দেরী করে ঘরে ফিরলো। দিদিরা কাছে ডেকে বললো - তোমার একা ঘরে আসতে ভয় করে না? নাতো কিসের ভয়? মোড়ের বটগাছে আর বাশঁবাগানে সন্ধের পর ভূতেরা ঘোরাঘুরি করে।অনেকেই তা দেখেছে। এবার থেকে সন্ধের আগে ঘরে ফিরে আসবে। দূরান্ত বিমলের মনে দিদিদের কথায় তার নরম মনে ভয়ে রেখা গেথে গেল। ঘুনাক্ষরে কেউ তা বুঝলো না।
সেদিন বিকেলেই কাল বৈশাখীর ঝড় এলো। রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গেল। আজ কি করে সে বাড়িতে যাবে। নিকটে যারা ছিল তারা চলে গেল।বিমল একাভয় তাকে ঘিরে ধরলো। আন্ধকারে ঝড় ধুলোর মাঝে একা দৌড়াতে লাগলো। এর আগে সে একা বাড়িতে গেছে কিন্তু এইরূপ ভাবে ভয় তাকে ঘিরে ধরেনি।বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো।সে ছুটছে আর বাঁশ ও বটগাছের দিকে তাকাতে থাকলো। বাঁশের কড়কড় শব্দ আর মেঘের গর্জন সমান ভাবে চলতে থাকল। চোখ কান বন্ধ করে ছুটছে আর ছুটছে হটাৎ বিদ্যুতের আলোর ভিতর নানা প্রকারের দোদুল্যমান আলো দেখে ভূত ভূত বলে চিৎকার করতে করতে ঘরে ফিরে এলো। সেদিন রাত্রে বিমলের জ্বর এলো আর সারারাত ভূত ভূত বলে ঘুমের ভিতর বলতে থাকলো।
বিমল আর এখন ছোট নেই। পড়ার শেষ করেছে। আজ সে নব যুবক।সৈনিকের চাকুরী পেয়েছে বেশ কিছুদিন হল। ক্যাপ্টেন হয়েছে। যুদ্ধের সকল কলা এখন তার নখদর্পনে।জটিল সিদ্ধান্ত ও কঠোর পরিশ্রমী। সাহসের সাথে করতে পারে। সেদিন প্যারেডের পর কমানডিং ইন চিপ জানালো আজ এসেছে সময়। কিছু শত্রু আমাদের জমিতে ঢুকে বসে আছে। এখন দুই এক হাত হবার প্রয়োজন আছে।তবে যারা যুদ্ধে ভয় পাও তারা দু'কদম পিছিয়ে আর যারা প্রকৃত ইচ্ছুক তারা এক কদম এগিয়ে এসো। কিন্তু জীবনে এ সুযোগ সবার ভাগ্যে জোটে না। সাথী সৈনিক সবাই উৎফুল্ল ও উৎসাহে এক কদম এগিয়ে যুদ্ধের জন্য অনুমতি দিল।
কয়েক দিনের ভিতর সেই সুযোগ এসে গেল। প্রস্তুতের পর্ব শেষ হল। সাজ সরম্জান সঙ্গে জয় জয়কার ধনি মুখোরিত করতে করতে দেশ সীমায় পৌঁছে গেল। সীমা সুরক্ষার কিছু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে বাকীদের দ্বিতীয় লাইনে দাড় করাল। উপস্থিত সৈনিক তিন দিক থেকে কমান্ডারের কাধে কাধ মিলিয়ে আক্রমণ করতে সিদ্ধান্ত নিল। সেদিনের বিমল আজ অন্য মানুষ। তিন দিক থেকে ভয়ংকর ভাবে যুদ্ধ হল।শত্রু কিছু মরলো বাকী পালিয়ে জীবন রক্ষা পেল। কয়েক দিনের ভিতর যুদ্ধ বন্ধ হল। অগ্রগামী পোষ্ট নিয়ন্ত্রিত হল।
এই যুদ্ধে বিমলের যুদ্ধ কৌশলে শত্রুর অনেক ক্ষতি হল। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধারূপে রাষ্ট্রপতি পদকের জন্য প্রশংসা পত্র পাঠিয়ে দিল। কয়েক দিনের মধ্যে তার মায়ের অসুখের খবর পেল এবং পর দিন সকালে সাথীরা ট্রেনে বসিয়ে দিল।
ট্রেন ভোর সকালে স্টেশনে পৌছিল। তখন ও চারিদিকে অন্ধকার। কোকিল ও মুরগির বাক শোনা যচ্ছে। এমন সময় সেই বট গাছের নিচে পৌছিল। হটাৎ ছোটবেলার ভূতের কথা মনে আসতেই অজান্তে প্রবোধ হারিয়ে ফেললো। জ্ঞান ফিরে দেখলো মায়ের বিছানার কাছে শুয়ে আছে।
বিমল যে আজ বড় যোদ্ধা তা মিডিয়া ও খবরের কাগজে দেশবাসী জেনেছে তার কৃত্তিত্বের গর্ব কিন্তু ছোটকালের ভয়ের খবর বিমল ও তার দিদিরা ছাড়া আর কেউ জানতে পারল না।
বিমল এখন বড় যোদ্ধা,জীবনের ভুল ত্রুটি বিচার বিশ্লেষন করতে পারে। ছোটবেলার ঘটনা মন থেকে মুছে ফেলা যায়না। স্মৃতির কোঠরে গভীর দাগ কেটে থাকে। আজ বড়দের কাছে বিনম্র মিনতি তার মিথ্যার আশ্রয়ে ছোটদেরকে ভয় দেখান বড় অপরাধ। কারন শিশুকালের সকল কথা মানুষ কোনদিন ভুলতে পারে না। তাই জীবন পথে এই ভয় বাধক হয়ে ভয়ংকর রুপ নিতে পারে। যে শত্রুর সম্মুখে দাড়াতে ভয় পায়না, সেই নির্ভিক যোদ্ধা নির্দিষ্ট স্থানের ভয়কে দূর করতে পারল না। মিথ্যামতির আশ্রয়ে কেউ না নেই। তার নিজের জীবনের এই ঘটনা উল্লেখ করলো।