নিঃসঙ্গ
নিঃসঙ্গ
তুমি কি ভুলে গেছো আমায় সাত বছর আগের সেই পুরনো ডাইরি টা আাজ ধুলোয় মাখা। জানো আমি এখন আর অন্ধকারে ভয় পাই না কারন অন্ধকার ই যে এখন আমার নিত্য দিনের সঙ্গি।একা বাঁচতে শিখে গেছি হাজারো পথ পারি দিতে শিখে গেছি একা।কিন্তু পাশের সেই তুমি টা আর নেই তবে রয়ে গেছে সেই পুরনো সৃতি।.......
আমি প্রফুল্ল
বৃষ্টি পছন্দ করে না এমন মানুষ এ পৃথিবীতে খুব কম ই আছে। আজ এ বৃষ্টিস্নাত দিনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হতে এক কাপ চা স্নীক্দ্ধ আর মাতাল করা হাওয়া আমার চুল হলো এলোমেলো সাথে গুনগুনিয়ে গান। মেঘলা আকাশ সাথে শরতের আগমনী বার্তা কাশফুলের সেই হাওয়ায় দোলা।
"নীল শাড়ী আর নীল কাঁচের চুরি সাথে না হয় নীল একটি টিপ।"..........
আজ পহেলা শরৎ; শাড়ী আর,চুরি, টিপ এসব সেদিন ভাবার পর মনে হলো একটু কাশবন থেকে ঘুরে আসি।তারপর মনে হলো একা একা কাশবন থেকে ঘুরে আসায় কোনো আনন্দ হবে না। আমার একটা বান্ধবী আছে তার নাম তুলি।আমি ওকে মাঝে মাঝে রং তুলি বলে ডাকি।এতে অবশ্য ও তেমন মোন খারাপ করে না।ওকে ফোন দিলাম হ্যালো তুলি।তুলি ফোন রিসিভ কোরলো ও প্রফুল্ল কি খবর তোর।
প্রফুল্ল : একটা খবর আছে।
তুলি : কি খবর?
প্রফুল্ল : আমি রেডি হচ্ছি তুই আর আমি মিলে কাশবন দেকতে যাবো।
তুলি : কিন্তু আমি আসতে পারবো না।
প্রফুল্ল : কেনো?
তুলি : আরে আমার ছোট মামা অসুস্থ তাকে দেকতে মামার বাসায় এসেছি আজ আসতে পারবো না। এখন রাখি পরে কথা হবে।
তুলি ফোন রেখে দিলো তারপর ভাবলাম আজ যেতে আনেক ইচ্ছে করছে একাই তাহলে ঘুরে আসি। তৈরি হয়ে চলে গেলাম কাশবনে। নীল শাড়ী, সাদা, নীল কাঁচের চুরি আর কপালে নীল টিপ।এখানে এসে বেস ভালো ই লাগছে। তবে দেখি সবাই ছবি তুলছে ভাবলাম আমিও ছবি তুলি কিন্তু ছবিটা তুলে দিবে কে কাকে বলি এখানে তো সবাই অপরিচিত। হঠাৎ একটা ছেলে নীল পাঞ্জাবি পড়া হতে একটি ক্যামেরা। আমাকে এসে বোলছে ম্যাম আমি একজন ফটোগ্রাফার ছবি তুলি আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনার ছবি তুলে দিতে পারি।এই যে আমার কার্ড। কার্ডে লেখা দেখলাম নীর ফটোগ্রাফি। তরপর ভাবলাম ছবি তুলবো কি তুলবো না।বোলেই ফেললাম ঠিক আছে ভালোভাবে তুলতে পারবেন তো সে বললো জী।তখন সে আমার কিছু ছবি তুললো সে বললো কার্ডে আমার ঠিকানা আছে সেখান থেকে আপনি আপনার ছবি নিয়ে আসবেন। আমি বললাম ঠিক আছে। সে ও চলে গেল আমি ও চলে আসলাম। রাতে সেই কার্ড টা দেখতে ই মনে হলো নীর ফটোগ্রাফি নীর এ আবার কেমন নাম নীর শব্দের অর্থ পানি। তার পর ঠিকানা মতো সেখানে চলে গেলাম ছবি আনার জন্য। নীর বাইরে বসে আছে হাতে চায়ের কাপ দোকানে বসে চা খাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি নীর? সে বললো হ্যা। আমি বললাম ঐ দিন কাশ বনে আমার ছবি তুলে ছিলেন। ও মনে পরেছে আসলে সেদিন আপনার নাম টা জানা হয় নি।আমি প্রফুল্ল যার অর্থ হাসি। নীর বললো খুব সুন্দর নাম আপনার। আমি বললাম ধন্যবাদ। আপনার নাম নীর। নীর শব্দের অর্থ তো পানি হ্যা ঠিক ধোরেছেন।আচ্ছা আমার ছবি গুলো কোথায়? দেখলাম ছবি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে। নীর আমাকে বললো চা খাবেন? আমি বললাম হ্যা।চা আমার খুব প্রিয় কিন্তু কেউ যদি আপনাকে কোন খাবার খেতে বলে তাহলে একবার জিজ্ঞেস করলেই আপনি কি সাথে সাথে হ্যা বোলবেন অবস্যই না।যাই হোক অন্য কিছু হলে আরেক কথা বাইরে হালকা ঝিড়ি ঝিড়ি বৃষ্টি এমন সময় চা হলে বেস ভালো ই হয়।নীর আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসলো আমি বললাম আপনি চা খাবেন না?নীর বললো না।আপনি আসার আগে আমি এক কাপ খেয়েছি। আমি বললাম চা আমার খুব প্রিয় আপনি চা পছন্দ করেন? নীর বললো পছন্দ কিনা জানি না তবে রাত জেগে কাজ করার জন্য অনেক চা খাওয়া হয়।সন্ধ্যা গোরিয়েএলো আমি বললাম আমি এবার উঠি আর কিছুখন পর রাত হয়ে যাবে। নীর একটু হেসে বললো তাতে কি?আপনি কি অন্ধকারে ভয় পান নাকি? আমি বললাম হ্যা।নীর বললো ভয়কে জয় করতে শিখুন জীবনে একা পথ চলতে শিখুন। নীরএর কথা শুনে আমি ওকে বললাম মানুষ কখনো একা বাঁচতে পারে না।জীবনে কারো না কারো প্রয়োজন হয়।অতঃপর আমি চলে আসলাম। আমার বান্ধবী তুলি আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রফুল্ল : কিরে তুলি।
তুলি :কোথায় গিয়েছিলি?
প্রফুল্ল :ঐ যে সেদিন তোকে বললাম না একজন আমার ছবি তুলে দিয়েছে সেই ছবি গুলো আনতে গিয়ে ছিলাম।
তুলি আমাকে বললো ছবি গুলো ফ্রেম করে আনতে।
তারপর কার্ড থেকে নম্বর টা নিয়ে আমি নীর কে ফোন দিলাম। হ্যালো নীর জী, কে বোলছেন? আমি প্রফুল্ল।
নীর: আপনি আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
প্রফুল্ল :কেন আপনার দেয়া কার্ড থেকে।
নীর :হ্যা কি, কিছু বলবেন?
প্রফুল্ল :আমার ছবি গুলো ফ্রেম বানিয়ে দিতে পারবেন?
নীর : হ্যা পারবো।
প্রফুল্ল :তাহলে কাল আসবো।
নীর:ঠিক আছে।
এভাবেই নীরএর সাথে আমার পরিচয়। তারপর বন্ধুত্ব এবং একসময় নীর এর প্রতি এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। আমার সব পছন্দ অপছন্দ, আমার দুঃখ কষ্ট, সুখ, আনন্দ ওর সাথে উপভোগ করা হয়।আমার কাঁচের চুরি খুব পছন্দ ও আমাকে কাঁচের চুরি কিনে দিতো আর আমার ছবি তুলে দিতো।আর আমি আমার ওর সাথের সব সৃতি ডাইরিতে নোট করে রাখতাম। তারপর কোন এক শরতে বোলেই ফেললাম ওর প্রতি আমার অনুভুতির কথা।ভালো লাগার কথা, ভালোবাসার কথা।মানুষ বসন্তে তার প্রিয় মানুষকে তার মনের কথা বলে। আমি না হয় শরতেই বললাম। কারন নীর আর প্রফুল্লের প্রথম দেখা কোন এক পহেলা শরৎ। আমার অনুভুতির কথা প্রকাশ করতেই নীর তার চোখের জল ফেলে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে বললো একা বাঁচতে শিখ প্রিয়।....
নীর চলে যায় আমি ও চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাড়ি চলে আসি।তার পর থেকে নীর এর আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি।
অনেক না বলা কথা রয়ে গেছে বাকি.....
অনেক পথ চলা তোমার সাথে ছিলো বাকি.....
সে দিনের পর কি হয়েছিল নীরের আজ নয় জানাবো কোন এক দিন।
