জীবনে জয়ই সবকিছু নয়
জীবনে জয়ই সবকিছু নয়
"স্যার, একটা নাম বলব একটু খাতায় লিখে নেবেন"? অপর প্রান্ত থেকে কন্ঠস্বর ভেসে এলো, বলো কি নাম তোমার? উত্তরে ছাত্রটি বলল,"দেবায়ণ চক্রবর্তী"।
স্যার খেলার নিয়মটা কি হবে, একটু বলবেন?
গড়বেতা হাইস্কুলের সবথেকে দায়িত্ববান শিক্ষকদের মধ্যে একজন, তাপস বাবু বললেন, প্রথমে স্কুলের প্রত্যকটা ক্লাসকে একে-অপরের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। তারপর প্রত্যেকটা ক্লাস থেকে সেরা ছাত্রদের বেছে নেওয়া হবে, দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে একটি দল গঠন করা হবে। তারপর যথাক্রমে গ্রাম পঞ্চায়েত এর সমস্ত স্কুলের সাথে খেলা, জিততে পারলে ব্লকে, তারপর ওখানে জিততে পারলে জেলাতে, ওখানে জিততে পারলে রাজ্যে যাবে।
"বুঝতে পেরেছো"— তাপস বাবু জিজ্ঞাসা করলেন?
দেবায়ন উত্তরে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। তার ঠিক দুই দিন বাদেই দেবায়নের খেলার দিন পড়লো। প্রথম দিকে ও একটু ভয় পেলেও, দিনের শেষে দেখা গেল ও ওর প্রথম পরীক্ষায় ভালো ভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে।৬৬ বলে ১৬৬ রান। তার ঠিক সাতদিন বাদেই আবার দেবায়নের খেলার দিন পড়লো। ৩৫ বলে ১১০ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে ও দলে জায়গা করে নিল।
নদীর স্রোতের মতো সময় কেটে গেল। সময় চলে এলো গড়বেতা হাইস্কুলের গ্রাম পঞ্চায়েত এ খেলবার, প্রতিপক্ষ রামসুন্দর বিদ্যামন্দির। গড়বেতা হাইস্কুলের দুর্ধর্ষ বোলিং এর সামনে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ দুমড়ে মুচড়ে গেল।ওরা ৫০ ওভারে ২২৫ রান করল ৯ উইকেটের বিনিময়ে। গড়বেতা হাইস্কুলের দেবায়ন একাই ৯০ বলে ১২৫ রান করলো। ৫ টি ছক্কা আর ১০ টি চার অপরাজিত রইল। গড়বেতা হাইস্কুল অত্যন্ত অনায়াসে খেলাটি জিতে গেল। গড়বেতা হাইস্কুলের খেলোয়ারদের দৌলতে বিশেষ করে ওপেনার দেবায়ন চক্রবর্তী এবং বোলার সীমন্ত নন্দী এদের জন্য কোনো স্কুল গড়বেতা হাইস্কুলের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত লম্বা সময়ের সমাপ্তি ঘটলো। গড়বেতা হাইস্কুল ফাইনালে উঠে গেল। প্রতিপক্ষ ধাদিকা হাইস্কুল। ভাগ্য কি আর সর্বদা মানুষের সহায় হন। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে, এক নম্বর ওপেনার ব্যার্থ হল, ৩০ বলে ২০ রান করে ক্যাচ আউট হয়ে গেল, ভেঙে চৌচির হয়ে গেল তার স্কুলকে রাজ্যে প্রথম স্থান দেবার স্বপ্ন, ভেঙে গেল তার স্কুলকে ট্রফি এনে দেবার স্বপ্ন, ভেঙে গেল স্কুলের ট্রফি জেতার স্বপ্ন, ক্রিকেটে সেরা হবার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল গড়বেতা হাইস্কুলের।
গড়বেতা হাইস্কুলের হেরে যাওয়ার ফলে দেবায়নের মন ভেঙে গেল। ও ঠিক করল যে ও ক্রিকেট খেলাকে বিদায় জানাবে। ও কখনো আর ক্রিকেট ব্যাট ছুঁয়েও দেখবে না। এই কথা শুনে তাপস বাবু দেবায়নকে ডেকে পাঠালেন। তাপস বাবু অনেক বুঝিয়ে দেবায়ণকে আবার ক্রিকেটের জগতে ফিরিয়ে আনলেন। দেবায়ন আগে যা ক্রিকেট অনুশীলন করতো তারপর থেকে তার চার গুণ বেশি অনুশীলন করতে লাগলো। ফলস্বরূপ পরের বছর একের পর এক বাঁধা টপকে গড়বেতা হাইস্কুল রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করলো। শুধু তাই নয়, দেবায়ন সফলতার উচ্চতম শিখরে পৌঁছে গেল। দিলীপ ট্রফি, রণজি ট্রফি জিতে দেবায়ন এখন ভারতীয় জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক পদে খেলছে। এখন যদি ওকে কেউ জিজ্ঞাসা করে, "আপনি জীবনে কীভাবে এতটা সফলতা অর্জন করলেন"? ও তখন উত্তরে বলে,"আমার এই পর্বত প্রমাণ সফলতার পেছনে রয়েছে শুধু একটি হার। সকলের হারতে শেখা উচিৎ। কারন ওই একটি হার মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়।