STORYMIRROR

Elika Sarkar

Others

3  

Elika Sarkar

Others

ব্যবধান

ব্যবধান

3 mins
220

সেই ছোট্ট শহরের সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ বিদেশবাসী। সে আজ অতিরিক্ত যান্ত্রিক দেশের এক নিমিত্ত মাত্র । সারাক্ষণ যেন কিছু খুঁজে চলেছে।কিন্ত কি সেটা তার কাছে অজানা।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সে ভাবতে লাগল।নাম না জানা অনুভূতি তাকে পরিপূর্ন করতে ব্যর্থ ।এটাই তো সে চেয়েছিল। বিদেশ ভ্রমন । এক দেশ থেকে আর এক দেশ।তবু আজ সে এত বিষন্ন কেন?বাইরে প্রবল ঝড় বৃষ্টি ।সব যেন তচনচ করে দিতে চাইছে।তার মনের ভিতরের ঝড় টাও আজ উত্তাল।কালো মেঘের ভেলায় চড়ে হঠাৎ সে অতীতের দিকে হাঁটা দিল।আগেও কত ঝড়,কত বৃষ্টির সাক্ষী ছিল সে।কিন্ত তার মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত অনুভূতি ।এক ভালো লাগার অনুভূতি ।এক ভালোবাসার অনুভূতি ।ছিল এক অজানা অপেক্ষা। আজও সে অপেক্ষা করছে।কিন্ত এই দুই অপেক্ষার মধ্যে আজ এক আকাশ ব্যবধান।আগেও জানালা ছিল।আজও আছে।তার দুই চোখ সেই দূর রাস্তার দিকে আজও কাউকে খুঁজে চলেছে।তবে তার মধ্যে আবদ্ধ এক সীমারেখা।তার গন্ডি আর পেরোন যায় না।আজ যে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ।তার অপেক্ষা আজ সেই এক পুরুষের জন্য।ভালোবাসাই অপরাধ নেই ঠিকই কিন্ত বিবাহিত জীবনে সমাজ টেনেছে এক রেখা।পাখির পায়ে বেড়া।সে যেমন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা উড়ে যেতে পারে না।সেই পাখি গানও গায় , কথাও বলে কিন্ত তার গভীর অন্তরের সন্ধান কেউ পায় না। দমকা বাতাসে চোখের উপর পড়া চুল সরাতে সরাতে সে আজ প্রাণপনে আবিষ্কার করতে উৎসাহী হয়ে পড়ে এই দুই জীবনের মধ্যে ব্যবধানটা ঠিক কি? আর কেনই বা এই ব্যবধান। খাঁচার আর বনের পাখির যেন মিল হয়েও হয় না।

 

  হঠাৎই মনে পড়ে সেই স্কুলে যাওয়া ,কলেজে যাওয়া।কত স্মৃতির ভিড় আজ তার মনে।মনে পড়ে যায় সেই প্রথম প্রেমের কথা।ছোট্ট একটা কথা সেই প্রেম পুরুষকে বোঝানোর জন্য কত না ভাবনার আকাশে বাস করতে হয়েছে।কত কত রাত কেটে গেছে খোলা আকাশের দিকে চেয়ে। পূর্নিমার চাঁদ কত আলোচনার সাক্ষী।কিন্তু বুঝিয়ে ওঠা হয়নি।হয়ত সে বুঝেও বোঝেনি।জানা নেই তার।তবু সুন্দর সুখস্মৃতিতে স্মৃতির খাতা পরিপূর্ণ । জীবন নিয়ে নেই তার কোন আক্ষেপ।তবুও আজ কেন এই স্মৃতির আনাগোনা তারই উওর খুঁজে চলেছে।

মনের মধ্যে বিরাজমান প্রথম প্রেম ছিল বড়ই মধুর।বন্ধুত্ব ছিল অটুট।তার মধ্যে থেকেই সেই গোপন প্রেমের রস পান করে সুখী থাকত সে । তার ফেলে দেওয়া কত কাগজ ,কত কলম সে সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে তার ঠিকানার সন্ধান কোনদিন কেউ পেল না।কত কত সময় তার জন্য সে অপেক্ষা করেছে কিন্ত সেই বিরাট সমুদ্র পার হয়ে ওঠা হয়নি।কবির ভাষায়-----


“কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়

  কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়”।

মনের কুলুঙ্গিতেই তা তোলা রইল যতনে। 

               

 পড়ন্ত বিকেলের মেঘবৃষ্টির ফাঁকে উঁকি দেওয়া সূর্যকিরণের মত তার চোখটা কেমন যেন চিকচিক করে উঠল।যেন সে এপার ওপার সব পারাপার পার করে ফেলেছে।মন তার ময়ূরের মত নেচে উঠল।অভিসারিনী হতে চাইল কিন্ত তার অভিসারে বেরোনোর আগেই দরজায় কে যেন কড়া নাড়ল । গতিশীল চঞ্চল মনের ভাবনারা নড়ে উঠল। অনিচ্ছাসত্তেও উঠে গিয়ে দরজা খুললো। চোখের পলকের মধ্যে অতীত থেকে বর্তমানে সে।এখনও তার চোখে এক আনন্দের ঔজ্জ্বলতা। যেন নতুন করে কিছু পাওয়ার আনন্দ । দুটির মধ্যে ব্যবধান থাকলেও নতুনকে সে আপন করে নিতে পেরেছে। জীবনে চলার পথে কত মানুষ আমাদের মধ্যে আসে। কাউকে পিছিয়ে কাউকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। পিছনে ফেলে আসার কষ্ট - তবু যেতে হবে। উপলব্ধি হল যেন যাকে ব্যবধান বলে মনে করছে তা যেন ঠিক ব্যবধান নয়।এ হল নতুনকে সমর্থন করা।।অতীত থেকেই আমরা বর্তমানে বাঁচতে শিখি ,আবার বর্তমান দেখে ভবিষ্যৎ।পুরোনোর সাথে নতুনকে মিলিয়ে তাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা।যেন পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে I   হঠাৎই কানে ভেসে এল চেনা স্বর — ‘ কি এত ভাবছো?! তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও আমাদের বেরোতে হবে।’



Rate this content
Log in