STORYMIRROR

Sabita Ray Biswas

Others

4.5  

Sabita Ray Biswas

Others

ভৈরবীর ডাক

ভৈরবীর ডাক

8 mins
10

সুরঙ্গমাকে বাড়ির সবার পছন্দ হলেও আমার ওর মাসতুতো বোন সাইরাকে বেশি ভালো লাগলো| আসলে সাইরার চোখ, ওই চোখে যে কি তীব্র আকর্ষণ, যতক্ষণ ও ছিল, কিছুতেই আমি ওর দিক থেকে অন্য দিকে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না| অতএব বুদ্ধি করে সুরঙ্গমাকে আমার পিসতুতো ভাই সুদর্শনের দিকে ঘুরিয়ে দিলাম| ভেবেছিলাম সুরঙ্গমার দিক থেকে খুব আপত্তি উঠবে, কিন্তু সেসব কিছুই হলনা|

আমার দিদি বলল, “এটা ঠিক করলি না| মেয়েটা খুব চাপা, তাই কিছু বলল না, কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল আঘাত পেয়েছে| ওর সঙ্গে এতদূর এগিয়ে সাইরাকে দেখে পালটি খাওয়াটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না| দেখিস বিয়ের পরে আবার পালটি খেয়ে সুরঙ্গমার দিকে না ঝুঁকিস”|

বিয়ের পরে আমি আর সাইরা সাঁ করে উড়ে যাচ্ছি অস্ট্রেলিয়া, কোম্পানি পাঠাচ্ছে| ফিরব পাঁচ বছর পরে| অতএব পালটি খাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা |

অস্ট্রেলিয়া থাকলেও সুদর্শনের খবর পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি| সুরঙ্গমার বাবা মারা গিয়েছিলেন আগেই, ওদের বিয়ের এক বছরের মাথায় মা ও হার্ট অ্যাটাকে চলে যান| সোনারপুরে প্রায় তিন বিঘা জমি নিয়ে সুরঙ্গমাদের বাড়ি, অতএব সুদর্শন এখন ঘরজামাই| রাজকন্যা, রাজত্ব সবেরই মালিক|

ফিরে এসেছি সপ্তাহ দুয়েক হল, কিন্তু বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় সুদর্শনের সঙ্গে দেখা করতে আসার সময় পাইনি একদম| আজ সপরিবারে আসার কথা থাকলেও সাইরা, রুপু আসতে পারল না| সাইরার পিসি না মাসি কে যেন আসছে, গাড়ি নিয়ে আমিই চলে এসেছি|

আরে! এ তো নন্দনকানন! গোলাপই মনে হয় পঞ্চাশ রকমের| গাড়ি থেকে নামার আগেই চোখ জুড়িয়ে গেল| কিন্তু একি! হঠাত ঝড় উঠল নাকি? পটাপট কাঁচা আম পড়ছে গাড়ির উপর| আম নাকি ইঁট-পাথর? গাড়ির ছাদ তুবড়ে তো গেলই, একটা আম সরাসরি ফ্রন্ট উইন্ডস্ক্রিনে লেগে এসে পড়ল আমার কোলে| এটা কি আম? না আধলা ইট? এমন জায়গায় লাগল, মনে হল আমি শেষ|

“কি ব্যাপার সৌরিকদা, গাড়ি থেকে নামছেন না কেন? বরণডালা নিয়ে আসবো?”

“না মানে, নামতে যাচ্ছিলাম! এমন ঝড় উঠল”—

“ঝড়? কি যা-তা বলছেন? সকালেই কয়েক পেগ চড়িয়ে এসেছেন নাকি?”

“আরে, আমি বাজে কথা বলবো কেন? আমার গাড়িটার কি হাল হয়েছে দেখো! আম পড়ে”--

“ও হো-হো- হো- সৌরিকদা আম এখন কোথায় পেলেন? গাছের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সবে মুকুল এসেছে”|

ব্যাপারটা কি হল? গাড়ি তো ঠিকই আছে, শুধু আমার প্যান্টের নীচে জায়গাটা কেমন বিশ্রীভাবে উচু হয়ে আছে| ইস শার্ট ও ইন করে পরা, কি করে যে ম্যানেজ করি!

সুরঙ্গমা আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, “কি যে করেন না সৌরিকদা! আমি এখন পরস্ত্রী”?

“সে তো বটেই, কিন্তু তোমর পতিদেবতাটি কোথায়”?

“আর বলবেন না, তিনি এখন স্নানে ঢুকেছেন, রাত্রে আমি অশুদ্ধ করে দিয়েছি না”?

“মানে”?

“এখনই সব মানে বুঝে ফেললে তো আপনি আর আসবেন না? তাই একটু একটু করে বোঝাবো| এই যেমন ঝড়ে আম শুধু আপনার ওখানেই পড়ল” –

“সত্যি, ওটা কি হল”?

“কি আবার হবে? কিচ্ছু না| আসুন কচুরি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, ওই আপনার ভাইটিও এসে গেছে”|

জলখাবার পর্ব মিটতে পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখালো দু’জন মিলে| তবে দোতলার একেবারে শেষের দিকে একটা ঘর দেখলাম তালা দেওয়া| জিজ্ঞেস করতে সুরঙ্গমা ফিসফিস করে বলল,

“একদিনেই সব দেখে ফেলবেন? কিছু বাকি থাক, তাহলে সেই টানে আবার আসবেন”|

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি সুদর্শন ফিরে যাচ্ছে ওদিকে| কেমন খটকা লাগল, কিছু না বলেই চলে গেল? ঠিক তখুনি একটা কুচকুচে কালো বেড়াল একটা ভয়ংকর শব্দ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল সুরঙ্গমার কোলে| আমি চমকে সরে যেতেই সেও লাফ দিয়ে উধাও হয়ে গেল নিমেষে| আমি ভয় পাওয়া গলায় বললাম, “এই বেড়ালটা তোমার পোষা?”

“হ্যাঁ-য়া, কেন? আপনি বুঝি বেড়ালে ভয় পান? ও আমার কেল্টু, কিচ্ছু বলবে না| তবে আমার কাছে অন্য কেউ এলে ওর পছন্দ হয়না| সেটা আপনাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেল| যাকগে ছাড়ুন কেল্টুর কথা, ওকে খুব বকে দেবো আমি| এই ক্যাকটাসগুলো দেখুন, আমার বাবা আনিয়েছিলেন বাইরে থেকে| দারুণ না”!

দারুণ, তবে কেমন সাপের মত ফণা তুলে আছে| গা শিরশির করে উঠল|

সুরঙ্গমার তারিফ করতেই হবে, কি সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে বাড়িটাকে, নিজেকেও| মনে হচ্ছে আগের থেকেও সুন্দর হয়েছে, সত্যি আমি চোখ ফেরাতে পারছিনা| বিশেষ করে ঠোঁট, একেবারে টসটসে স্ট্রবেরি| আর শরীরের কি বাঁধুনি, দেখে দেখে আশ মিটছে না| রুপু হবার পর সাইরাকে বলেছিলাম ব্রেস্ট ফিডিং করিও না| কিন্তু তিনি মাতৃত্ব পরিপূর্ণভাবে উদযাপন করবেন তাই আমার কথায় কানই দিলেন না| যা হয়, বিছানায় আমাকে আর গরম করতে পারেনা|

সুরঙ্গমাকে যতটা পারলাম সারাদিন ধরে দেখে চোখের খিদে মেটানোর সুযোগটা ছাড়লাম না| কেননা ওদের জোরাজুরিতে লাঞ্চ করে ফিরলাম| ফেরার সময় আম-জাম পড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি, কেল্টুকেও আর দেখিনি| কিন্তু বাগানটা ঘুরে দেখার সময় একটা বাচ্চা শেয়ালকে মরে পড়ে থাকতে দেখলাম| কি বীভত্স! ঘাড়টা কেউ সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে| সুরঙ্গমা বলল, দেখেছ কান্ড! হাবুল ঠিকঠাক কাজ করছে না| এটাকে পুঁতে দেয়নি|

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, একি সৌরিকদা কি হল আপনার? গা ঘিনঘিন করছে? আমার তো ভালোই হয়েছে মনে হচ্ছে, বাগানের মাটি উর্বর হবে, সার হবে|

সুদর্শন বলল, সব বিষয়ে ঠাট্টা কোরোনা না সুরো| মনে রেখো সৌরিকদা দীর্ঘদিন পরে দেশে ফিরেছে, এই সব দেখতে অভ্যস্ত নয়|

ফেরার সময় সুরঙ্গমা একগাদা সবজি, ফল দিয়ে দিল জোর করে, বলল চিন্তা নেই এগুলো সবই আপনার ভাইয়ের হাতে ফলানো| পিওর অর্গ্যানিক|

সুদর্শনের ওখান থেকে ফেরার পর কি যে হয়েছে আমার, খেতে শুতে, উঠতে, বসতে চোখের সামনে অন্য কিছু নয়, দেখছি সুরঙ্গমার টসটসে ঠোঁট আর পীনোন্নত বক্ষ| মনে পড়ছে ক্লাস টুযেলভে পড়ার সময় হুমায়ুন আহমেদের একটা লেখা পড়েছিলাম, “হরিণ সুন্দর চোখে, আর নারী সুন্দর বুকে”|

আমার এই ছটফটানি সাইরার চোখে ধরা পড়ে গেল| বেড়াল, শেয়াল এই সব গল্প বলে কাটানোর চেষ্টা করলাম| সাইরা বলল, “আমাকে কি রুপু পেয়েছো”?

সাইরা একেবারে হাতে-নাতে ধরে ফেলল সুরঙ্গমাকে নিয়ে সুদর্শন আমাদের ফ্ল্যাটে বেড়াতে এলো যেদিন| সে এক অভিশপ্ত রাত, ওরা ফিরে যেতে সাইরা সাপের মত হিসহিস করে উঠল| রুপুকে ঘুম পাড়িয়ে পাশের ঘরে রেখে সম্পূর্ণ নিরাবরণ হয়ে বিছানায় উঠে এল, জমানো রাগ, হিংসা সব একসাথে করে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার পরে| মনে হচ্ছিল আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে| কিন্তু আমাকে পুরো নিংড়ে তবে থামল মানে থামতে বাধ্য হল| আমার আর অবশিষ্ট কিছু ছিলনা, ভয় হচ্ছিল কোনোরকম সতর্কতা ছাড়াই সাইরা যা করল তাতে আরো একবার ন্যাপি, ফিডিং বটল না লাগে!

সে যা লাগবে পরে দেখা যাবে, এখন ওসব চিন্তার অবকাশ নেই| প্রায়ই অফিস আমাকে ট্যুরে পাঠাতে লাগল আর আমি রাতে বাড়ি ফিরতে পারলাম না| রাত্রের ডিউটি আওয়ার কাটতে লাগলো গ্লাসের তরলে, আর সুরঙ্গমার পীনোন্নত বক্ষের বিভাজিকায় ডুব দিয়ে| সুদর্শন তখন হাবুডুবু খাচ্ছে স্বপ্নসমুদ্রে|

সাইরা কি বুঝেছে জানিনা, আমায় একদিন জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল| ডাক্তার পরীক্ষা করে আঁতকে উঠল, “করেছেন কি মশায়? মারা পড়বেন তো? হিমোগ্লোবিন নেমে গেছে সাতেরও নীচে|  একগাদা ওষুধ দিয়ে দিল| আমার আজকাল সত্যি বড় দুর্বল লাগে, বিশেষ করে যে রাতগুলো কাটাই সুদর্শনার কাছে| সকালে যেন টলতে থাকি| ভোরবেলা ওখান থেকে বেরিয়ে হোটেলে ঢুকেই ঘুমিয়ে পড়ি|

সেদিন ছিল ঘোর অমাবস্যা, সুদর্শনের বাড়ি ঢুকতেই গা-টা কেমন ছমছম করে উঠল| গোটা বাড়ি অন্ধকারে ডুবে আছে| সুরঙ্গমা কি আমি আসব বলে সব আলো নিভিয়ে দিয়েছে? গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখলাম সেই কালো বেড়ালটাকে, হলুদ চোখ দুটো সার্চলাইটের মত জ্বলছে| গা গোলানো দুর্গন্ধ, কিন্তু এমন গন্ধ পাবার কথা তো নয়| ওদের বাড়িতে অজস্র গোলাপ! আবার শেয়াল বা কুকুর মরেনি তো! ভাবতে ভাবতেই দেখি সেই বীভত্স দৃশ্য, একটা বড় আকারের কুকুর মরে আছে, তার ঘাড়টাও কেউ যেন মুচড়ে দিয়েছে| মরা কুকুরটার গলা থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে, সে আমার দিকে অসহায়ের মত মুখ তুলে তাকিয়ে আছে| সব ঘটনাগুলো খুব অল্পসময়ের মধ্যে সিনেমার রিলের মত আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল| আমি ভাবছি, আজ থাক বাড়ি ফিরে যাই, সাইরাকে গিয়ে একটা কিছু বলে দিলেই হবে|

ঠিক তখনই কানের কাছে গরম নিঃশ্বাস, “কি হল সৌরিকদা, আমি আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো? এসো, নেমে এসো”|

কে বলল, কি বলল কিছুই না বুঝে মন্ত্রমুগ্ধের মত আমি চলতে শুরু করলাম| তারপর নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই তালা দেওয়া বন্ধ ঘরের ভেতরে| আজ সুদর্শনার এ কি রূপ! এক ঢাল কালো কোঁকড়া চুল থেকে জল ঝরছে টপ টপ| পরনে রক্তবর্ণ শাড়ি, কপালে সিঁদুরের টিপ, হাতে একটা লম্বা বড় চিমটে| ওকে দেখে আমার খুব ভয় লাগছে, সামনে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বলছে| একটা মাটির বেদিকে ঘিরে কুকুর, শেয়াল, ষাঁড়ের মাথা, মানুষের করোটি, জবাফুলে বেদিটা ঢাকা| ওর তলায় আর কি আছে আমি জানিনা |

“সাপ আছে, দেখছ না জবাফুল গুলো কেমন দুলছে, সাপ নড়ছে, এবার ফণা তুলবে| খুলে ফেলো তোমার ওই পোশাক, এই রক্তাম্বর বস্ত্র পরো| আমি তোমায় শুদ্ধ করে দিচ্ছি|”

আমি কোনরকমে তোতলাতে তোতলাতে বললাম, “এ—এগুলো কি? তুমি কি করবে সুরঙ্গমা?”

এ হল পবিত্র পঞ্চমুন্ডির আসন| আমার দাদু সাধনা করেছেন, আমার বাবা সাধনা করেছেন কিন্তু কেউ সফল হতে পারেননি| সফল হব আমি, সাধনার শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছি| আর একটু কাজ বাকি|”

“তু—তুমি কি তান্ত্রিক”?

“আমি ভৈরবী, তুমি আমার ভৈরব| এসো সাধনক্রিয়া শুরু করি| পাঁচ ‘ম’ নিয়েই তন্ত্র| মদ্য, মাংস, মত্স্য, মুদ্রা ও মৈথুন| এই যোগ ক্রিয়ার শরীরের নাম আলিঙ্গন, ধ্যানের নাম চুম্বন, আবাহনের নাম শীত্কার, নৈবেদ্যর নাম অনুলেপন, জপের নাম বমণ, দক্ষিণান্তের নাম রেত্পাঃতন| এসো ভৈরব, আমরা সাধনক্রিয়া শুরু করি| শুভ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে”|

“আমি চীত্কার করে বলতে গেলাম, না--- আমায় ছেড়ে দাও| তোমার হাতে চিমটে কেন? তুমি কি আমায় মারবে? এসব সাধনক্রিয়াতে শবসাধনা আছে, তুমি কি আমায়---

আমার গলা দিয়ে এসবের একটা শব্দও বেরল না|

সুরঙ্গমা বলল, “এসো ভৈরব, এসো| তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবেনা| তোমার ভাই এখন গভীর ঘুমে, সে তোমায় বাঁচাতে পারবে না| ওই দ্যাখো বাইরের ক্যাকটাসগুলো তোমার আপত্তি শুনে ঘরে চলে এসেছে| ওরা এগিয়ে আসছে, আমার কেল্টু তোমায় ছাড়লেও ওরা ছাড়বেনা| বহুদিন ধরে আমি অপেক্ষা করেছি, তুমি আমায় আর বাধা দিতে পারবে না, কারণ তোমার শরীরে সে শক্তি নেই| তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সব রক্ত আমি পান করেছি, তোমার বীর্য আমি নিংড়ে নিয়েছি| শবসাধনা তো করবই, তার আগে তোমাকে শব করতে হবে| তুমি তরুণ, সুন্দর, সুলক্ষণ দেহ তোমার| শবসাধনার উপযুক্ত|

“স্ত্রীবশ্যং পতিতাস্পৃশ্যং নয়বর্জং হি তূবরং|

অব্যক্তলিঙ্গং কুষ্ঠীং বা বৃদ্ধভিন্নং শবং হরেত||

ন দুর্ভিক্ষমৃতঞ্চাপি ন পর্যুষিতমেব বা|

স্ত্রীজনঞ্চেদৃশং রূপং সর্বথা পরিবর্জয়েত||”


আমি থরথর করে কাঁপছি| উ-আ- ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না| ভৈরবী কি আমার জিভও অসাড় করে দিয়েছে?

হঠাত ভীষণ জোরে শব্দ করে দরজার দুটো পাল্লা খুলে গেল| বন্দুক উঁচিয়ে পুলিশ অফিসার ঢুকে এল ঘরে, “ম্যাডাম হ্যান্ডস আপ”|


সুরঙ্গমার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে| বিড় বিড় করে কিসব মন্ত্র পড়ছে, “তোরা কেউ বাঁচবি নে, পঞ্চমুন্ডির আসন অপবিত্র করে দিলি| কেউ তোদের বাঁচাতে পারবে না| হা-হা-হা---

তারপরেই ঘটল সেই অকল্পনীয় ঘটনা| বেদীর জবাফুলের মধ্যে থেকে ফণা তুলল কালনাগিনী| ছোবল মারল একজন পুলিস অফিসারের পায়ে| তার হাত থেকে খসে পড়ল পিস্তল| সবাই দৌড়ে ঘরের বাইরে যেতেই সাপটা ছোবল মারল ভৈরবী সুরঙ্গমাকে |

বাইরে থেকেই আর একজন অফিসারের রিভলবার গর্জে উঠল কালনাগিনীর মাথা লক্ষ্য করে| ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল মাথা |

রাতের অন্ধকার চিরে গাড়ি ছুটল হাসপাতালের দিকে|

সুদর্শন আমার হাত ধরে বেরিয়ে এল অভিশপ্ত বাড়িটা থেকে| গাড়িতে উঠে দেখি সাইরা, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে জ্ঞান হারালাম|

কয়েকদিন হাসপাতালে যমে-মানুষে লড়াই চলার পরে মানুষ জয়ী হল| আমি বেঁচে গেলাম| পুলিস অফিসার ও বেঁচে গেলেন, কেননা কালনাগিনী ছোবল মেরেছিল বুটের পরে| বাঁচেনি ভৈরবী সুরঙ্গমা|

কিন্তু আমি কি সত্যিই বাঁচালাম? যদিও আমাকে বাঁচানোর জন্য কোনো ত্রুটি রাখেনি সাইরা আর সুদর্শন| ওদের প্ল্যানেই সেদিন পুলিস ঠিক সময়ে হানা দিয়েছিল ওই বাড়িতে| বাড়ি সহ পঞ্চমুন্ডির আসন গুঁড়িয়ে দিয়েছে বুলডোজার|

তবুও এখনো প্রতি অমাবস্যার রাত্রে রক্তবস্ত্র পরে চিমটে হাতে ভৈরবী ডাকে আমায়, “এসো ভৈরব এসো| আমার শবসাধনা বাকি রয়ে গেল যে!”


ଏହି ବିଷୟବସ୍ତୁକୁ ମୂଲ୍ୟାଙ୍କନ କରନ୍ତୁ
ଲଗ୍ ଇନ୍