প্রার্থনা
প্রার্থনা


বাসি পান্তা নুন সহযোগে মুখে গুঁজে কোনোমতে,
মীরার মা বাপ পুটলি বেঁধে হাঁটা দেয় ভোর রাতে|
ছোট্ট ভাইটি মার সাথে যায়, বাপও তাকে বেশ আগলায়...
দিবারাত্রির স্নেহ আহ্লাদ ওকে ভরে দেয় কানায় কানায়|
মীরার বয়স তেরোর ঘরে, বসে শুয়ে থাকে সময়ের ঘোরে,
পরগাছা সে, অক্ষম ক্ষীণ, বড় অচ্ছুৎ অপরের দ্বারে|
তেমন কিছু ছিল না যদিও তবু যেটুকু ছিল আত্মীয়,
পালিয়েছে সব, রটেছে যেদিন 'এ অভাগীর দু'পায়ে পোলিও'|
ল্যাংড়া মেয়ের পাছে দায় পড়ে, ঠাকুমা দাদুও নেয় নিকো ঘাড়ে,
কপাল চাপড়ে বাপ শুধু বলে 'কর্মফলই জ্বালায় আমারে'|
মীরা শুনে বুঝে চুপ করে রয়, মনে গোঁজা তার গাদাগাদা ভয়,
মা বাপ দেবতা নেই সংশয়, খেতে শুতে দেয় তাই বেঁচে রয়|
পাশের বাড়ির কাকীমাটা ভালো, দুপুরে খাওয়ায় সাঁঝে জ্বালে আলো,
কাকুও আদর করে মাঝেমাঝে, হাতদুটো তার বিশ্রী ও কালো...
বাপ মায়ে করে ঠিকাদারি কাজ, রাতের উনুনে কয়লার আঁচ,
ক্ষিদার পেটেতে বড় সুখ দেয় হাতাখুন্তির ক্ষীনকায় আওয়াজ|
একা সারাদিন মীরা জানালায় দুচোখ দিয়ে রোদ আগলায়,
ওর হিসাবেই ও টের পায়, কখন কোথায় ঋতু বদলায়|
যেমন ধরো আজকে আকাশ... পেঁজা তুলো ঘেরা মাঠে ভরা কাশ,
ব্যস্ত পুজোতে সাজো সাজো বাঁশ, মা আসবেন... নেই অবকাশ|
মীরার মনেতে দ্বন্দ্ব চলে... শরীর যদি যায় ঋতুর কবলে,
তবে যে এবার মাতৃদর্শন ভেসে যাবে শুধু নয়নের জলে|
সারা বছরেতে এই এক দিন, আকাশের নিচে হয় ও স্বাধীন,
অসুখ থাকুক, এ সুখ দিও ... মীরার আর্তি বয়ে চলে ক্ষীন।
মা বুঝি বা তার শুনেছে কথা, ঋতু আগলেছে পেটে নেই ব্যথা,
যেতে পারে যদি, মায়ের পায়েতে মন খুলে আজ কবে সব কথা|
সম্মুখে দীপ... মীরা ঝলমল, ওর প্রার্থনা বহে অবিরল,
'যত শিগগির হয় সম্ভব নিভিও বাবার সব পাপফল'।