দীপা তুমি
দীপা তুমি


ভুলতে কি আমাকে পেরেছ দীপা?
যেমন ভুলতে পারনি -
ছেঁড়া হাওয়াই চপ্পলে তোমার সাথে নন্দন থেকে ময়দান, কলেজস্ট্রীট থেকে হাতিবাগান।
আমার কাঁচা হাতের লেখা পড়েও প্রেমে লাল হয়ে উঠতে তুমি,
লাল রং বড্ড ফিকে আজ এই শহরে।
কাল সেই লেখাটা শেষ করেছি দীপা , শুনবে নাকি একটিবার?
ভুলতে কি আমাকে পেরেছ দীপা?
কড়া চারমিনারের ধোঁয়ায় জ্বলন্ত চোখেও স্বপ্ন নিয়ে আমাকে দেখতে তুমি একদিন।
বেশীদিন আগে নয়, বছর দশেক আগের কফি হাউসের কোণার টেবিলটায়।
ময়লা পাঞ্জাবির ছেঁড়া পকেট প্রেম করতে নিষেধ করেছে অবিরাম,
তবু হাল ছাড়োনি সেদিন।
ভোলাটা কি এতই সহজ দীপা?
সেদিন বিকেলে কালবৈশাখীর বৃষ্টি সাক্ষী ছিল,
লক্ষ লক্ষ ভোল্টের বিদ্যুতের ঝলকানি সাক্ষী ছিল,
ভুলতে পেরেছ তোমার আমার প্রথম ঠোঁটের স্পর্শ?
এই শহর ভুলতে পারেনি,
ময়দানের ফুচকাওয়ালাটা ভুলতে পারেনি,
সরোবরের বুড়ো শিরীষ গাছটাও ভুলতে পারেনি।
তুমি কি করে ভুলবে দীপা?
মনে পড়ে দীপা?
আহিড়ীটোলা ঘাটে ঝাপসা কাঁচের চায়
ের গেলাসে তোমার আমার নকশাল আন্দোলন?
আর অফিসপাড়ায় সস্তা চাউমিনে তোমার সেই জন্মদিন পালন?
তুমি বলেছিলে রঙিন দামি বেলুন এর প্রয়োজন নেই,
দরকার শুধু একমুঠো কৃষ্ণচূড়ার।
মনে পরে?
ভুলতে কি পেরেছ?
আমার পোড়া হাঁড়িতে সেদ্ধ ভাতের গন্ধ?
সুনীলের বইয়ের ছেঁড়া পাতায় নীরার গল্প শোনানো?
আমার ভাঙ্গা রেকর্ডারে মইনের ঘোড়াগুলির প্রথম গান শোনা?
উল্টো ঘোরা টেবিল ফ্যানে তোমার ওড়না উড়ে যাওয়া?
ভুলতে ভুলতে একদিন আমাকে আবার হয়তো আবিষ্কার করবে-
রাজপথে বোমার স্প্লিন্টারে ক্ষত-বিক্ষত কোনো প্রতিবাদীর মধ্যে।
মনে আছে মাথার গভীর ক্ষতটা দেখে তোমার প্রেম বেড়ে উঠতো,
আজ মনের ক্ষতটা একবার দেখে যাবে দীপা?
যতবার মনে করবে আমার প্রয়োজন নেই,
ততবার আমাকে খুঁজে পাবে অপ্রয়োজনের দরকারে,
আমি ক্লান্ত এই মিথ্যে শহরের হঠকারিতায়,
আমি শ্রান্ত সমাজের এই ভেদাভেদ বৈষম্যতায়।
ভুলেও খুঁজতে যেও না আমাকে সুটবুট বাবুদের ভিড়ে,
দীপা, আজও আমি সেই ছেঁড়া পাঞ্জাবি ময়লা রুমালের দলে।।