বন্দি তিতলি
বন্দি তিতলি


বিছানায় শুয়ে আছে পরীর মত মেয়েটি
নাম তার তিতলি,
হাত গুলো ছাড়িয়ে চোখ পিটপিট করল সে
এখন সময়টা গৌধূলি।
কল্পনা করতে লাগল একদিন সে
প্রজাপতির মত উড়বে আকাশে,
কিন্তু জানে সে পারবে না তা
তার যে নেই দুই পা।
ছলছল চোখে সে দেখতে লাগল স্বপ্ন_
স্বপ্ন দেখা ভুল না তো কখনো,
যেতে চায় সে ছুটে বহু দূরে_
কিন্তু পারবে না সে
সে যে বন্দি চার দেয়ালে
এই বন্দি জীবন তাকে কখনো ছাড়বে না।
আগে বাবা বিকেলে আসত
তিতলির কপালে চুমু একে আদর করত,
তারপর হুইলচেয়ারে নিয়ে যেত বাইরে
ঘাসের চাদর,নীল আকাশ,পুকুর পাড় দেখাত।
তখন বলত তিতলি-"আমার আর কিছু চাই না যে"
এভাবেই যাচ্ছিল সময়ের নদী,
হঠাৎ একদিন বাবা কান্না চোখে
অফিস থেকে এল তিতলির কাছে,
বলল বাবার ট্রান্সফার হয়েছে অন্য জেলায়
কিন্তু বাবা তো থাকবে তার তিতলিরই কাছে।
অনেক কান্না করল তিতলি কিন্তু,
বাবা কে যে যেতেই হবে
ছলছল চোখে বাবা গেল চলে_
রেখে তিতলি আর মাকে একা রেখে।
এসব স্মৃতি ভেবে মনে হচ্ছে হাহাকার
প্রকৃতিটা তিতলি দেখবে একবার।
বলল সে,"মা,হুইলচেয়ারে বসাও না ,একটু বারান্দায় যাই।"
মা হুইলচেয়ারে বসিয়ে
চলে গেল নিজের কাজে।
কতোদিন বারান্দায় যায় না তিতলি
গাছ আর পাখি কত দিন দেখেনা,
আজ দেখবে সে প্রাণ ভরে।
তিতলি মনে মনে বলে,
"জানো,আমার বারান্দা থেকে
দুরের সেই পুকুর পাড় যায় দেখা
সেখানে ছেলে মেয়েরা ছুটে যায়
পাশের মাঠে হয় ফুটবল খেলা।
আর পুকুর পাড়ে বসে
কতো বন্ধুদেয় আড্ডা,
স্বপ্নচারীরা দেখে হাজারো স্বপ্ন_
এইসব আমার বারান্দা থেকে যায় দেখা
এসব দেখে মন আমার হয়ে যায় পুলকিত।
আমি এসব করতে পারব না জানি
তাই এসব দেখেই আমি মনে সুখ আনি।"
আজ বারান্দায় গিয়ে তিতলি দেখে,
পুকুর পাড় আর মাঠ পুরো ফাঁকা
এটি তো হবার কথা নয়
তার চোখ কি দিচ্ছে তাকে ধোঁকা?
মাকে ডেকে বলল সে-"মা সব খালি কেন?
ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি যেন।"
মা বলল,"জানিস,একটি ভাইরাস,
ছড়িয়ে গেছে পুরো দেশেই
এটিতে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই
নিচ্ছে অনেকের প্রাণ নিমিষেই,
নাম তার করোনা ভাইরাস।
এনেছে অভিশাপ আমাদের এই দেশে,
তাই তো এই ভাইরাসের ভয়ে
আজ সবাই ঘরে আছে শুয়ে,
প্রার্থনা করছে সবাই,যেন ভাইরাস চলে যায় ছেড়ে
সেই ক্লান্ত দিনগুলো যেন তাড়াতাড়ি আসে ফিরে।"
মা বলে সব কাজে দিল মন
আমাদের তিতলি ভাবল কিছুক্ষণ।
কি মজা!আজ থেকে সবাই তার মত বন্দী
তিতলির মনে বয়ে চলল খুশীর জোয়ার
কষ্ট সে পাবে নাতো আর
সবাই চাচ্ছে যেন সব হয়ে যায় ঠিক
কিন্তু আমাদের তিতলি,
সে প্রার্থনা করছে যেন
থেকে যায় এই অভিশাপ সবসময়।
তাহলেই তো সবাই থাকবে
ঘরে বন্দী, ঠিক তারই মত
বুঝবে এই বন্দি জীবনের বেদনা
কাঁদবে আমাদের তিতলি মামণির মত
আজীবন।