টিফিন পিরিয়ড
টিফিন পিরিয়ড
স্যার, এবার কি টিফিন টাইম?
সুজন তোকে কতবার বলেছি যে তুই এক দুই করে গুনবি যখন ক্লাস শেষ হবে । চারটে পিরিয়ড শেষ হলে তবেই জানবি এবার টিফিন টাইম। বুঝলি? যাকে বকলেও হাসে, মারলেও হাসে আর ভালো কোন কথা বললেও হাসে সে হল সুজন। ঘাড় নেড়ে সম্মতিসূচক হাসিটা দিয়েই দিল। ঠিক আছে, আজকের মতো ক্লাসটা এখানেই শেষ হল। তোমরা কিন্তু 'ভরদুপুরে' কবিতাটা মুখস্থ করে আসবে এই বলে বাংলা স্যার ক্লাস থেকে চলে গেলেন।
পরদিন আবার রুটিন অনুযায়ী ক্লাস শুরু হল। তৃতীয় পিরিয়ডে গেলেন ইতিহাস স্যার সুশোভনবাবু, খুবই রাগি। পড়ার মাঝে কেউ কথা বলুক তিনি পছন্দ করেন না। ক্লাস সিক্সের ক্লাস তিনি নেন না। রুটিনের ইতিহাস স্যার অনুপস্থিত থাকায় তাকেই নিতে হয়েছে। হঠাৎ করেই মাঝ পথে সুজন বলে ওঠে, " স্যার , এখন কি টিফিন টাইম? " সুশোভন স্যার তো রেগেমেগে ওকে উত্তম মধ্যম দিয়ে দিলেন।
পরদিন আবার বাংলা স্যার গেলে সবাই মিলে এক স্বরে বলে উঠলো - স্যার, সুজন খুব কান্নাকাটি করছিল গতকাল, ওকে ইতিহাস স্যার খুব মেরেছেন। বাংলা স্যার বুবাইয়ের মনে একটা খটকা লাগলো যে কেন ও টিফিন টাইমটার জন্য এত অপেক্ষা করে! তাহলে কি ও না খেয়ে আসে! ওকেই জিজ্ঞাসা করলেন কি রে তুই আজ খেয়ে এসেছিস স্কুলে? না স্যার। কেন? ও কিছু বলে না।
বাংলা স্যার রেজিস্টার খাতা বের করে ওর বাড়ির নম্বরটা নিয়ে ফোন করলেন সুজনের বাড়িতে। জানতে পারলেন, সেই কবে ওর বাবা ছেড়ে ওকে চলে গেছে। দুই ছেলেকে মানুষ করার জন্য সকালেই লোকের বাড়ি কাজে চলে যেতে হয়। কিছুই রান্না করা হয় না। প্রতিদিন স্কুলে মিড ডে মিল পায় বলে রোজ স্কুলে পাঠায় আর রাত্রিতে কাজ করে আসার পর যা একটু আধটু রান্না করে আর লোকের বাড়ি থেকে পায় এভাবেই দিন চলে। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
টিফিন টাইমে, কিরে সুজন আর একটু ভাত দিই, আর একটু ঘুগনি দিই। দিন স্যার, এক গাল হেসে সব ভাত খেয়ে সুজনের মাথায় হাত দিয়ে বাংলা স্যার চলে গেলেন।
