The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Subhankar Roy

Children Stories Classics Inspirational

4  

Subhankar Roy

Children Stories Classics Inspirational

টিন ভাঙা লোহা ভাঙা

টিন ভাঙা লোহা ভাঙা

5 mins
1.2K


■টিন ভাঙা লোহা ভাঙা■


সকাল পেরিয়ে দুপুর । গনগনে রোদ আর গরম হাওয়া । একটা গাছের তলায় দাঁড়াল শেখর । সাইকেলের হ্যান্ডেলে লটকানো ব্যাগে যে জল ছিল তা গলায় ঢালতেই গলা জিভ যেন ফোস্কা পরে যাওয়ার যোগাড় .. এক ঢোঁক খেয়ে জল টা রেখে দিল ব্যাগ এ । এখন আর কেউ টিন ভাঙা.. লোহা ভাঙার ডাক শুনে ছুটে আসে না, আগে আসত ..বড়ো থেকে ছোট ছেলে সবাই আসত,তখন সবাই কাগজ জমিয়ে রাখত,পুরানো খবর কাগজ..ভাঙা বালতি,তেলের শিসে সব নিয়ে আসত । এখন নিজের গলার স্বর নিজেরই কর্কশ লাগে ...


বাড়িতে তার মা আছে , আর তার বউ । ছেলে পুলে হয়নি । বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের কথা ভেবে বিয়ে টা করে ফেলে শেখর । তখন তার বয়স কুড়ি । এখন আঠাশ চলছে । পড়াশোনা করেনি সে , তাদের দিন আনতে পান্তা ফুরায় সংসার , পড়াশোনার সুযোগ হয়নি, তার মনে আছে সে একদিন তার বাবার কাছে বায়না করেছিল সেও স্কুল যাবে..নতুন জামা পরে । তার বাবা বলেছিল , স্কুলে নাকি পুলিশ আসে , ছেলে দের ধরে নিয়ে যায় ; তারপর তাকে মাঠে নিয়ে গিয়েছিল ..এক সবুজ মাঠ , খোলা আকাশ । ..দাঁড়া বাবা ,আস্তে চল ,পড়ে যাবি কাদা আছে , সেদিন শেখর ধানক্ষেতের আল ধরে মেঠো মাটির গন্ধ নিয়েছিল । কচি সবুজ ধানের এক আলাদা সুগন্ধ আছে । সে ছোট দুটো হাতে ধান ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগোচ্ছিল আর তার বাবা পিছনে হাসতে হাসতে - ছেলের পাগলামি দেখো এই বলে পাশের জমির চাষীদের দিকে তাকিয়ে হেসেছিল । সে অনেক দিনের কথা আজও মনে পড়ে , তার মনে করতে ভাল লাগে ..মনে করতে করতে যদি সারা জীবন কেটে যায় তবুও আচ্ছা ! সে স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চায় , কিন্তু পেটের খিদে তাকে জানায় বাড়িতে মা আর বউ আছে তারাও না খেয়ে আছে।

বিয়ের এক সপ্তাহ পরই একজন কে বলে কয়ে এই কাজ টা পায় , সে নিজেও জানে এতে কিছু হয়না , দিনে একশো টাকাও জোটে না । তবুও হন্য হয়ে ঘোরে , কিছু না পেলে নিজেই নালায় নর্দমায় হাতড়ে প্লাস্টিক খোঁজে ।


আজ সকাল থেকে বেরিয়ে কিছুই হয়নি , আর দাঁড়ালে হবে না , এগিয়ে যেতে লাগলো ..দুপাশে বড়ো বড়ো বাড়ি ..মাঝে গলি । কয়েক টা বকুল গাছ রাস্তার পাশে । ....এ টিন ভাঙা ..লোহা ভাঙা ,প্লাস্টিক ,কাগজ,মাথার চুল ... । কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো । তার গলাও একসময় খুব সুন্দর ছিল,সে খুব ভালো গান গাইত, বাবার সাথে সেই গান টা " হাওয়া মেঘ সরায়ে..ফুল ঝরায়ে ..ঝিরিঝিরি এলে বহিয়া " বাবা মুচকি হেসে বলত , আমার ছোট্ট কিশোর কুমার । সেই স্বর আর নাই , এখন কেউ বলে না কিশোর কুমার । এখন কথা বললে কর্কশ আওয়াজ বের হয় । পুরানো স্মৃতি মনে করে চোখে জল এলো । চোখ মুছে এগিয়ে চলল । কাল চাল শেষ হয়েছে , আজ চাল না নিয়ে গেলে রান্না চাপবেনা । এই গরমে সাইকেল যেন এগোচ্ছেনা , দর দর করে ঘাম দিচ্ছে । হটাৎ মনে হল কেউ যেন ডাকছে । পিছন ফিরে দেখল কেউ নাই । ভালো করে দেখলো একটা পাঁচ বছরের বাচ্ছা ছেলে জানালা দিয়ে ডাকছে । ..কাকু দাঁড়াও দাঁড়াও ..ও কাকু 

-হাঁ হাঁ দাঁড়াচ্ছি ..


বাচ্ছা টা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলল , এটা নেবে ! শেখর দেখল একটা ছোট্ট মত টিনের বাক্স । শেখর বলল - তুই টাকা নিয়ে কি করবি !! 

বাচ্ছা টা মাথা তুলে বলল - কাল বাড়িতে কালী পুজো তাই , বাজি কিনবো । বলোনা কত টাকা হবে !! দশ টাকা হবে !! তাহলে এক প্যাকেট ফুলঝুরি নেব ..

- কেন তোর বাড়ি থেকে দেবে তো ! 

- না মা মানা করেছে 

বাচ্ছা টা খুব মিষ্টি দেখতে , ফর্সা টুক টুকে গাল গুলো, তার যদি একটা ছেলে হত নিশ্চই এত বড় হয়ে যেত , এমন করে বায়না করত , তখন কি করে তার বায়না মেটাতো !! সে যেমন করে হোক , তার মনে পরে সে যখন ছোট ছিল পুজো তে বায়না করলে তার বাবা তাকে কাঁধে করে নিয়ে যেত ঠাকুর দেখাতে,প্রসাদ খাওয়াতো..

- কইগো বলো না , মা দেখলে বকবে ।

- দাঁড়া বাবা বলছি ..তার আগে একটু ঠান্ডা জল নিয়ে আয় দিকি ছুটে 

হম যাচ্ছি বলে এক ছুটে বাচ্ছাটি ঘরে ঢুকে গেল । শেখর সেই পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । টিনের বাক্স টা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখল , কি আছে এতে !! বাক্স টা একটু চাপ দিতেই খুলে গেল । সেটা খুলেই তার মুখ হাঁ হয়ে গেল , দুটো সোনার বালা । মাথা ঘুরে গেল তার , তার হাত কাঁপতে লাগল..ওখানেই বসে পড়ল সে । এর যে অনেক দাম , তাতে তার মায়ের চোখের অপারেশন হয়ে যাবে , তাতে কয়েক টা শাড়ি মায়ের আর বউএর জন্য হয়ে যাবে , তাতে ঘরের ফুটো চাল মেরামত হয়ে যাবে , তাতে কয়েক বস্তা ধান কেনা যাবে , অনেক টাকা অনেক । কি করবে সে , পালাবে এখন ! 

..ও কাকু এনাও জল ! 

চমকে উঠলো শেখর । জল টা এক ঢোঁকে সব টা খেয়ে ,মনে হল বুক টা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেল । শেখর বলল - তুই এটা কোথায় পেলি ?

- এটা ঠাম্মার ঘরে পড়েছিল মেঝে তে ..ও ঠাম্মার অনেক আছে টিনের বাক্স । বলো না কত হবে বলো না ...

ছেলে টা উৎসুক চোখে শেখরের দিকে চেয়ে রইলো , শেখর ইতস্তত হয়ে বলল - এর দাম ! এর দাম অনেক বাবু , আমি নিতে পারবো না রে , আমার কাছে অত টাকা নাই রে । তুই এটা রেখে দিয়ে আয় । কাউকে দিবি না,এর অনেক দাম 

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে শেখর থামলো , তার হাত কাঁপছে ।ছেলে টি ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলল - তাহলে আমার বাজি কেনা হবে না , নাওনা নাওনা .

শেখরের চোখে জল এল ,তার ছেলে হলে হয়ত একদিন এমনিই চাইত , আবদার করত ,কি করত সে ! তার গলা বসে এল , বলল - না বাবু আমি নিতে পারবো না , তুমি এটা রেখে এসো , তুমি অন্য কিছু নিয়ে এসো আমি নেব ।

ছেলেটি উৎসুক হয়ে বলল,সত্যি !! 

- হম, পুরানো খবরের কাগজ আনো নেব 

একটু পড়ে ছেলেটি আবার এল ,হাতে খবর কাগজের একটা ছেঁড়া পাতা,একটা পাতায় কি হবে কে বোঝায় এই ছেলে কে! অবুঝ ছেলে র কান্ড দেখে কি করবে শেখর বুঝে উঠতে পারলো না । ছেলে টি বলল - এতে কত হবে কাকু !! এক প্যাকেট ফুলঝুরি হবে !! 

- হা হবে, অনেক হবে 

পকেটে দশ পনেরো যা ছিল তার হাতে দিল ,আর ছেঁড়া কাগজ টা পকেট এ রাখলো । বেশ ছেলেটি , ছোট ছোট হাত পা , কেমন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে । 

- আচ্ছা তবে বাজি কিনবে , সাবধানে পোড়াবে 

- হ্যাঁ হ্যাঁ 

বলে খুশিতে লাফাতে লাফাতে ঘরে চলে গেল ।শেখর সেই দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলল । ..এ টিন ভাঙা ..লোহা ভাঙা .. ডাকটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল দূর থেকে দূরে ।

             


Rate this content
Log in