Nandini Dasgupta

Children Stories Classics Fantasy

3  

Nandini Dasgupta

Children Stories Classics Fantasy

সোনালী তারার আলোটা

সোনালী তারার আলোটা

2 mins
198


" এএএইইই ! আরেকটা কাপ ভেঙেছিস? তোর মাইনে থেকে কিন্তু দশ টাকা কাটা গেলো !" এই শুনে চমকে উঠল দশ বছরের রঘু। " দয়া করে কাটবেন না বাবু ! "পঞ্চানন বাবু আবার গর্জন করে উঠলেন, " আবার মুখে মুখে তর্ক হচ্ছে ? আমার কিন্তু ট্যামপার টা খুব হাই !" রঘু যদিও জানত যে কথাটা টেম্পার হবে, তবুও ভয়ে সে পঞ্চানন বাবুকে ঠিক করে দিলনা ।বারবার সে ভেবেছিল কাজ ছেড়ে দেবে, কিন্তু না , তার বোনেদের ইচ্ছা তাকে পূরণ করতেই হবে। রোজ সকালবেলা সে হোটেলে যায় কাজ করতে। সারাদিন টেবিলে টেবিলে অজস্র কাপ প্লেট দেওয়া নেওয়া করবার পর, ছুটে বাড়ি গিয়ে কিছু খেয়ে, আবার যায় ইভনিং স্কুলে। আর এক সপ্তাহ কাজ করলেই যথেষ্ঠ টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। সেদিন বিকেলে রঘু চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে ঢুকলো একটা খ্রীষ্টমাস ট্রি বিক্রি করা দোকানে। কিরকম গাছ যেন চেয়েছিল ওর বোনেরা? " লম্বা আকার, পাতার রং ঝকঝকে সবুজ !" বলেছিল চার বছরের রুমি। " পাতায় পাতায় বরফ, তার সঙ্গে এক বাক্স সাজানোর জিনিস -- বল, ঘন্টা, রাংতা, আলোর সারি, পরী, আর দাদা, একটা সোনালী তারা আনতে ভুলবি না!" বলেছিল ছয় বছরের রাণী। বাবার কাজের কারখানা বন্ধ হয়ে যাবার পরে, তিনি রিকশা চালান।


মা পাঁচ বাড়িতে কাজ করেন। রঘুর ছোট্ট বোনেরাও বুঝেছে যে মা বাবার কাছে আবদার করে কোনো লাভ হবেনা। তাই তারা রঘুর কাছেই চেয়েছিল।" কাকু , এই গাছটা আর এই এক বাক্স সাজানোর জিনিসের দাম কত?" উত্তর শুনে তো রঘু হতবাক! একশ তিরিশ টাকা?! সে তো জোগাড় করতে পারবে মাত্র একশ টাকা! রঘু বলল ,"এক সপ্তাহের জন্য দয়া করে ওটা বিক্রি করবেন না! আমি এসে ওটাই কিনব । " " দেখছি, এখন কেটে পড়!" বলল দোকানদার। সারা সপ্তাহে সে মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে অদৃশ্য হয়ে যেত। শেষে একদিন পকেট ভরা টাকা আর বুক ভরা সাহস নিয়ে ঢুকল সে দোকানে, তার বোনেদের আশাপূরণ করতে। " কাকু, খ্রীষ্টমাস ট্রি আর সাজের জিনিসের বাক্সটা কিনতে এসেছি। মনে আছে আমি গত সপ্তাহে এসেছিলাম? "" তুই কে? বড় গাছ চাইছিস? তোকে বড় গাছ দেওয়া যাবেনা। ছোট গাছগুলোর থেকেই বেছে নে!" সেই রাত্রে , ফুটপাথের পাশের ছোট্ট ঘরটি আনন্দে এবং আলোয় জ্বলে উঠল। রানী, রুমি আর রঘু সারা সন্ধ্যে ছোট্ট গাছের পাশে বসে অবাক চোখে দেখতে লাগলো। কি আশ্চর্য সেই গাছের সৌন্দর্য। ওই গাছেরই আলোতে ঝকঝক করে উঠল সবার হৃদয়। বাড়ন্ত রাতের অন্ধকারেও টিমটিম করে জ্বলতে থাকল খ্রীষ্টমাস ট্রির মাথার সোনালী তারাটি। 



Rate this content
Log in