সান্তাক্লজ
সান্তাক্লজ


"অ্যাই তুবড়ি, বড়দিন মানে জানিস?"
-"হ্যাঁ, বুল্টি দিদি বলেছিল, আজকে ঘুমানোর আগে গাছে যদি মোজা ঝুলিয়ে রাখিস, তাহলে রাতের বেলা ঐ যে একটা বুড়ো লোক আছে না, যে লাল জামা পরে আসে...সে এসে কিছু দিয়ে যায়।"
-"তাআআআই?"
-"যা চাইবো তাই দেবে?"
-"হ্যাঁ রে, যা চাইবি..... রাত্রিবেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে যায়, সেটাই রেখে যায় মোজাতে।"
-"কিন্তু আমার ইস্কুলের মোজাটা তো ফুটো।ফটকা, আজকের জন্য তোর মোজাটা ধার দিবি?"
-"ধুউউউউর, আমার তো মোজা ই নেই। চটি পরে ইস্কুল চলে যাই। মা এখন যাদের ঘরে কাজ করে সেখানে আমার বয়সী কেউ নেই, তাই এবার শীতে একটা পুরানো সোয়েটারও পেলাম ন-"চল, এবারে বরং ঐ সাদা দাড়িওয়ালা বুড়োটার কাছে আমরা একজোড়া করে নতুন মোজা চাই।"
সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রীতে ঝুলন্ত সক্সের মধ্যে মেয়ের পছন্দের টফি গুলো যত্ন করে ভরে রাখল রিয়া। সকালে উঠেই মেয়ে আগে খুঁজবে সান্তা তাকে কি দিল। ল্যাপটপে মগ্ন স্বামী অমর এর দিকে একবার তাকিয়ে রিয়া ভাবল, সান্তা যদি তাকেও কিছু গিফ্ট দিতো, তাহলে সে অমরের এই ব্যস্ত জীবন থেকে তার নিজের জন্য অন্তত একটা ঘন্টা চেয়ে নিতো.....।
আগামীকাল ক্রিসমাস উপলক্ষে চারিদিক যখন আলোয় ঝলমল করছে, বিদেশে বসে নিজের বানানো ওয়াটস্অ্যাপ গ্রুপটায় স্কুলের বন্ধুদের সাথে জমিয়ে চ্যাট শুরু করলো সুদীপ। একসাথে ক্লাস করা, খেলা, টিফিন খাওয়া,এক একজন স্যারের এক একটি বিশেষ নাম...কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে ঐ স্কুলটায়।
"ইস্....যদি সান্তা ফিরিয়ে দিতে পারতো সেই স্কুল লাইফটা! কথাটা ভেবে নিজের মনে হেসে উঠলো সুদীপ।
সন্ধ্যেবেলা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে টিভি দেখতে দেখতে নবীন বাবু তার স্ত্রী মিনতি দেবীকে বললেন, "আমাদের ছোটবেলায় এসব সান্তা ছিলো? কি জানি ছিলো হয়তো, আমি জানতাম না!"
-"আমার তো বেশ মনে পড়ে আমি আর ভাই দুজনে মিলে ঝুলনে ডেকরেশন করতাম। এখন বাচ্চারা বাড়ি সাজাচ্ছে সান্তার জন্য:সান্তা এসে নাকি আজ রাতে তাদের জন্য গিফ্ট রেখে যাবে, বেশ মজার তাই না? আচ্ছা সান্তা যদি তোমায় কিছু দিতে চায় তুমি কি চাইবে?"
-নবীনবাবু একটু ভেবে বললেন, "আমি সান্তাকে বলবো আমার শৈশবটা ফিরিয়ে দিতে। আর তুমি কি চাইবে?"
-নবীনবাবুর হাতটা ধরে মিনতি দেবী বললেন, "জানি, এ সংসারের নিয়ম অনুযায়ী সবাইকেই একদিন চলে যেতে হয়। আমি সান্তার কাছে শুধু এই টুকুই চাইবো, আমরা যেন একসাথেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারি।"