নারী
নারী
লেখিকাঃ ইসরাত জাহান
বিবাহের অর্থ যখন জানতাম না তখন আমার মামা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। মা বাবা হারা এক সন্তানকে কেই বা লালন পালন করতে চাইবে? সেই ভেবে কেবল ৬ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। আধা পাকা চুলে যাকে আমি বাবার বয়সি ভাবছিলাম এতদিন, সে আসলে আমার বর ছিল! যে কিনা সুযোগ পেলেই আমার চুলের মুঠি ধরে আচ্ছা মত মার ধর করতো। কখনো বা খেতে দিত না। তাও সব চুপ চাপ সহ্য করে যায়। কারন কাউকে বলে যে লাভ নেই। সকলে বলে পুরুষ মানুষ একটু আধটু শাসন তো করবেই। সময় একটু একটু করে ফুরিয়ে এলো।
এখন বয়স আমার আঠারো! রান্না সেরে বর কে খেতে দিয়েছি। বরের মন মেজাজ কেন যেন খারাপ আজকে। তরকারি তে লবন একটু কম হওয়ায় আমার গালে কষে এক চড় বসিয়ে দিলো। ছিটকে গিয়ে দরজার সাথে গিয়ে বারি খেয়ে পড়ে গেলাম। যখন চোখ খুল্লাম দেখলাম এখনো আগের জায়গায় পড়ে আছি। মাথা টা চিন চিন করে ব্যাথ্যা করছে। শরীর দূর্বল হয়ে গিয়েছে। কপাল কেটে অনেকখানি রক্ত পরেছে। আমার বর আমাকে হসপিটালে ও নিলো না! মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠে পড়লাম। ২ দিন হলো পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটি এসেছে। প্রতিদিন সকাল বিকাল কেমন যেন অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাই ওদের বাসা থেকে। যেন কোনো পাগলের আর্তনাদ,গোঙানির শব্দ।
আজ গেলাম দেখতে আমাকে দেখে এক ভদ্র মহিলা একটু ইতস্তত করে ঘরে ঢুকালো। আমি এই শব্দের রহস্য তার কাছে জানতে চাইলে আমাকে এক রুমে নিয়ে দরজা খুলে এক বুড়ো মহিলা কে দেখালো। পরনে তার ময়লা আধছেঁড়া শাড়ী।পুরো শরীর ময়লায় এবং শিকলে বাঁধা। চুল গুলো উসখুস। চিৎকার দিয়ে কি যেন বলছে। অপর মহিলাটি বললো- এ আমার বড় আপা। তার কন্ঠ ভেজা।
আমি - তার এই অবস্থা হলো কি করে?
মহিলা- তার একটি মাত্র মেয়ে ছিলো খুব আদরের।হঠাৎ একদিন এক খারাপ লোক তাকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে লুকিয়ে রাখে। আমরা অনেক কষ্টে তার খোজ পাই তাকে বাসায় আনি। সে মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। আপা তার সাহস হয়ে দাড়ায়। তবে এই খারাপ সমাজ তাকে বাঁচতে দেয় না প্রতিনিয়ত কথার তীব্র আঘাতে তাকে আরো ভেঙে দেয় এবং সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাকে হারিয়ে আমার আপা নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারে না এমন হয়ে যায়। কত চিকিৎসা করিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। চোখ মুছতে মুছতে বললো মহিলাটি।
তার কথা শুনে বুক টা কেঁপে উঠল। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার ৩ বছরের ছোটো মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাকে আমি আরো আঁকড়ে ধরলাম। এভাবে প্রতিনিয়ত নারীরা অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে। কবে বদলাবে এই সমাজ? কবে মেয়েরা মন খুলে বাঁচতে পারবে? কবে মেয়ে হলে মা বাবা মুখ কালো করবে না? কবে আর ধর্ষণ হবে না? ,আর কারো নিপিড়ন এর স্বীকার হতে হবে না?
এই প্রশ্নের উত্তর আজো অজানা!
