চরণামৃত
চরণামৃত
আজ শ্রাবনী মেলার শেষ দিন। বৈদ্যনাথের মন্দিরে তাই আজ ভীড় উপচে পড়েছে। ৮ বছরের গোপাল, মায়ের হাত ধরে, আজ তিন দিন এই জনসমুদ্রে গা ভাসিয়ে দাঁড়িয়ে। কাল তো মা কেঁদেই ফেলেছিল। ছেলের পারমায়ুর জন্য চুল মানত করেছেন। গোপালের মনটাও খারাপ। চুলের জন্য নয়, চরণামৃতর জন্য। ওর খুব পছন্দের জিনিস। ঠান্ডা ঠান্ডা, মিষ্টি মিষ্টি। ভিড়ের গোত্তা খেতে খেতে দুজনে প্রায় মন্দিরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে ধুনোর গন্ধ আর কাঁসরের আওয়াজ। গোপাল জিভে ভেজা ভেজা মিষ্টি স্বাদটা অনুভব করলো যেন। ইশ, চরণামৃতটা যে কখন হাতে আসবে!
এদিকে আকাশ কালো করে এসেছে। গোপালের বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে। কিন্তু মন্দিরের ভেতরে থাকার সময়েই যদি এক পশলা হয়ে যায়, তাহলে মজাটাই মাটি। গোপাল মনে মনে বাবা বৈদ্যনাথের সামনে আর্জি পেশ করল। ‘চরণামৃত আর বৃষ্টি দুটোই যেন পেয়ে যাই ঠাকুর!' কিন্তু আজ বোধহয় বাবার মন খারাপ। কিংবা গোপালের ভাগ্য। বাবার সাক্ষাৎকার ২-৩ মিনিটের বেশি বরাদ্দ ছিল না কারুর জন্যই। কোনোরকমে যদিও বা হাতটা এগোতে পেরেছিল, ভীড়ের ঠেলায় চরণামৃত ফস্কে গেল। তারপর চোখের পলকে মন্দিরের বাইরে। গোপালের চোখে জল এসে গেল। বাবা এত নিষ্ঠুর? হঠাৎ গোপালের ন্যাড়া মাথায় কি পড়ল। ছুঁয়ে বুঝলো বৃষ্টির ফোঁটা। গোপাল উপরে তাকাতে দ্বিতীয় ফোঁটা ওর মুখে। ঠান্ডা ঠান্ডা, মিষ্টি মিষ্টি। ঠিক যেন চরণামৃতের মতন। ঠাকুর তাহলে তার কথা শুনেছেন ।