বাতায়ন
বাতায়ন


হাসপাতালে আজকে মনিমালা দেবীর শেষ দিন। হাঁটুর সার্জারির পরে প্রায় ২০ দিন এই প্রাইভেট রুমে নজরবন্দি ছিলেন। চলা ফেরা নিষেধ। জীবনের গন্ডিটা এই ছোট ঘরটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের জগতের সাথে যোগসূত্র ছিল একমাত্র ওই দক্ষিণের বাতায়ন। টি-ভি পর্দার মতন রাত দিন চেয়ে থাকতেন ওই চৌকো জানালাটার দিকে। বিকেলবেলায় একদল কচি কচি ছেলেমেয়েরা এসে জড়ো হতো মাঠে। একটি প্রাচীন অশ্বত্থ গাছের নীচে। শুরু হতো হৈ-চৈ, খেলাধুলা। এই সময়টার জন্যই সারাদিন মনিমালা দেবী পথ চেয়ে বসে থাকতেন। পুঁচকেগুলোর হৈ-হুল্লোড়ের ডাকে ফিরে পেতেন নিজের ছেলেবেলা।
সমীরকে বলেছেন আজ কিছু মিষ্টি নিয়ে আসতে। ওই বাচ্চাগুলোর জন্য। এই কদিন ও
দের সাহচর্য না পেলে হয়ত পাগলই হয়ে যেতেন। ওরা জানেনা কিন্তু তিনি জানেন। ওদের এই চেঁচামেচির মূল্য কতখানি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে না গিয়ে মনিমালা দেবী বাঁ দিকে ঘুরলেন। হাসপাতালের দেওয়াল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে মাঠ শুরু। এখন গোধূলি। হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চাগুলো মাঠে এসে পড়বে। মনিমালা দেবী এগিয়ে গেলেন অশ্বত্থ গাছটার দিকে। পায়ের কাছে ঘাসের জঙ্গল ক্রমশ বেড়ে উঠেছে। মনিমালা দেবী বাক্স হাতে দাড়িয়ে রইলেন। আজ বোধহয় আর তারা এলো না। এদিকে আলো কমে আসছে। মনিমালা দেবী হাল ছেড়ে ফেরার পথ ধরলেন। এগিয়ে চললেন গাড়ির দিকে। পেছনে ঘন ঘাসের মাঝে অশ্বত্থ গাছের নীচে গা ঢাকা দিয়ে শুয়ে রইলো পাঁচটি ছোট ছোট কবর।