Animesh Gupta

Others

2.3  

Animesh Gupta

Others

অন্তরঙ্গ

অন্তরঙ্গ

2 mins
10.3K


পাড়ার লোকে বলে কবির সঙ্গে মণিমালার সম্পর্কটা নাজায়েশ, অবৈধ । কবি তা ভাবে না । এখন আর অনেক কিছুই ভাবে না কবি । সংসারের চাকায় বিজবিজ করছে অনটনের মরচে । বৌ মরেছে, ছেলেমেয়েরা কবেই বেঁচেছে পালিয়ে। কোম্পানীর লোক এসে কেটে দিয়ে গেছে ইলেক্ট্রিক লাইন। আয় নেই তাই বিল শোধবার দায়ও নেই, যা আছে তা হল ক্ষিদে, টনক নড়িয়ে দেওয়ার মতো ক্ষিদে । এখন অন্ধকারে পায়া ফাটা নড়বড়ে টেবিলের ওপর রোজ মুড়ির বাটি, কাঁচা লঙ্কা আর পেঁয়াজ নিয়ে বসে থাকে কবি । তার কাঁচাপাকা দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলে এখানে ওখানে লেগে থাকে ফ্যাকাশে রঙের মিয়োনো মুড়ি । মাথার মধ্যে কেমন সব বিস্ফোরণ হয় আজকাল, গুলিয়ে যায় সব কিছু । কবিতা ছেড়ে গেছে অনেক দিন হল । এখন প্রেম, প্রকৃতি, পুজো... সব রকমের বৈচিত্র্য যেন এক হয়ে মিশে যাচ্ছে মাথার মধ্যে কোথাও ।

 

 

যখন দিন ছিল, মণিমালা গতরে খাটত কবির সংসারে । তার মনে হত কবি তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে উদাসীন । একদিন গোধুলি শেষের নরম লালচে আলোয় যেন হঠাৎই আবিষ্কৃত হল মণিমালা । কবির সামনে তার স্থূল শরীর কেমন মাংসল, মেদ উপচে পড়ছে কোমর ছাড়িয়ে দুদিকে, ঠোঁটের দুপাশে শুকিয়ে ওঠা পানের লাল দাগ । কবির মনে হল এক মূর্তিমতী আহ্বান যেন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে দীর্ঘদিন । দোষটা সেই আসন্ন সন্ধ্যার কি না জানা গেলনা, তবে মণিমালা স্বামী খেদানো মেয়েমানুষ, দুর্বল কবিকে দেখে সেইসময় তার মধ্যেও কিছু একটা হল । শরীরের কোথাও যেন বান ডাকল আর এতদিনের অভ্যাসে পরে থাকা সিঁদুর নিয়েই কবির শরীরে মিশে গেল সে । 

 

সে বেশ অনেকদিনের কথা । এখন এই মাঝবয়সী শরীর রাখার জন্য তাকে আরো অন্য কাজ খুঁজতে হয়েছে, আর তা খরচ করার জন্য এক অভ্যাসে সে এখনো মাঝে মাঝে কবির কাছে আসে সন্ধের টলটলে অন্ধকারে । আজ যখন দরজা ঠেলে ভেতরে এল মণিমালা, চাপা অন্ধকারে কবি ঠাহর করে উঠতে পারছিলনা করুণা, স্নেহ, মায়া, প্রেম, প্রকৃতি আর পুজোর মধ্যের ব্যবধান । আলুর চপ বা সিঙ্গাড়াও জোটেনি আজ, তীব্র ক্ষিদে পাক দিয়ে উঠছে মাথায় । বসে থাকতে থাকতে মা’র কথা মনে পড়ছিল কবির । মা’র সব রান্নার স্বাদগুলো তার জিভ বেয়ে গলা আর পেটের কাছে ঘোরাফেরা করছিল । দরজা ঠেলে ঢুকে আসা প্রায় শিথিল অঙ্গের মণিমালাকে দেখে ছোট্ট ছেলের মতো অস্থির হল কবি, আর স্পষ্ট দেখতে পেল সন্ধেটা কেমন আঁধার-গুঁড়ো হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে তার আর মণিমালার মাথার ওপর ।

 

টলতে টলতে এগিয়ে এসে দুহাতে মণিমালার শরীরটাকে এক আশ্লেষে আঁকড়ে ধরে কবি বলতে থাকল,   -' মণিমা, মণিমাগো... একটু মুড়ি মেখে দেবে তেল কাঁচালঙ্কা দিয়ে !’


Rate this content
Log in

More bengali story from Animesh Gupta