Bitan Mitra

Children Stories Horror

4.0  

Bitan Mitra

Children Stories Horror

সে কি মৃত ?

সে কি মৃত ?

9 mins
371



বৈশাখ মাস প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তার মধ্যে আবার লোডশেডিং আমি বাড়ির উঠোনের ধারে একটি আম গাছের তলায় চেয়ারে বসে একটা ভুতের গল্পের বই পরছি, অবিশ্যি ভুতের গল্প শোনা বা পড়া দিনের বেলায় মানায় না এই বিষয় টি রাতের বেলায় চমকপ্রদ তবুও সময় কাটা তে আমার একমাত্র অবল্ম্বন এই বই তবে হ্যা প্রেমের গল্প, রাজনীতির গল্প, এবং উপন্যাস এগুলোর থেকে অমার কাছে ওই রহস্য রমাঞ্চ অর্থাৎ গোয়েন্দা কাহিনী যেমন ফেলুদা, ব্যোমকেশ এবং শারলক হোমস আর ভুতের গল্প বেশ ভালো লাগে যদিও টিভি আর মোবাইল ফোন এ গল্প দেখার থেকে আমার মনে হয় বইয়ের পাতায় গল্প পড়ে এবং প্রত্যেক টা ঘটনা নিজের মত করে মনে কল্পনা করে ভাবতে বেশ ভালো লাগে।


যাইহোক গল্প পড়তে পড়তে হঠাৎ দেখি আমার বাড়িতে অজয় এসে হাজির হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি পাঁচটা বাজে অজয় সাইকেল টা রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর কোনো কথা না বলেই আমার হাত থাকা বই টা নিয়ে তিন থেকে চার সেকেন্ড মতো বইয়ের কভারের ওপর চোখ গুলিয়ে বই টা ওর হাতে রেখেই বলল 


"চল ঘুরে আসি বাড়িতে বসে থাকতে আর ভালো লাগছেনা" 

আমি বললাম 

"কোথায় যাবি আর যাওয়ার জায়গাটা আছেই বা কোথায় ? এর থেকে একটা কাজ করি আমি দাবা নিয়ে আসছি "


আমার কথা শেষ না হতেই অজয় বলল

"ধ্যাৎ একঘেয়েমি লাগে আর তাছারা তুই আর দাবা ভাই আমার সাথে খেলতে পারবিনা বুঝলি তার চেয়ে বরং চল গঙ্গার পারে যাই গরম পড়েছে খুব গঙ্গার পারে ঘণ্টা দুয়েক বসে থাকি"


আমি আর কথা বাড়ালাম না অগত্যা বললাম "তুই দাঁড়া আমি রেডি হয়ে আসছি "


এরপর দুজনে রাস্তার মোড়ে এসে পৌছাতেই পিছন থেকে ডাক দিলো সুবীর বলে, সাইকেল থামিয়ে পিছনে ফিরে দেখি সুমন দৌড়তে দৌড়তে আমাদের দিকে আসছে, এরপর আমাদের সামনে এসে আমাকে বললো।

"আরে আমিতো তোর বাড়িতেই যাচ্ছিলাম" আমি বললাম "যাবি ?

কোথায় যাস তোরা" বলল সুমন, বললাম গঙ্গার পারে তুই যাবি ? 

বলল ''হ্যাঁ যাব তো কিন্তু আকাশের কি পরিস্থিতি সেটা কি খেয়াল করেছিস"

হ্যাঁ সত্যি তো আকাশে মেঘ করেছে এতক্ষণ তো খেয়ালই করিনি মনে হয় বৃষ্টি হতে পারে সে যাই হোক যা গরম পড়েছে তাতে বৃষ্টি হওয়া অবশ্য একটু দরকার তবে ওখানে থাকার জায়গা তো আছে এমন তো না যে ফাঁকা জায়গায় ওখানে, কোন না কোন একটা দোকানে ঢুকে বসে থাকব কিন্তু বেরিয়ে যখন পড়েছি একবার হলেও গঙ্গার পাড়ে ঘুরে আসব, বললাম 

 "গত দু'দিন ধরে এই একই টাইমে এক জিনিস ঘটনা ঘটছে মেঘ গুরু গুরু করে ডাকছে কিন্তু বৃষ্টি হছেনা"


 "তাহলে চল যাওয়া যাক" বলল অজয়


আমাদের মিনিট পনেরো লাগলো গঙ্গার পাড়ে আসতে আমরা শ্মশানের পাশে একটি ঘাট যার নাম স্টিমার ঘাট সেখানে এসে দাড়ালাম, গঙ্গার পাড়ে আজকে বেশ ভালোই জোরে হাওয়া বইছে বেশ সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর ঠান্ডা করে দিচ্ছে আজকে গঙ্গার পাড়ে সেরকম কোনো লোক দেখছিনা, আমাদের ডান দিকে একটু দূরে মাচার ওপরে দুটো লোক বসে আছে আর এদিকে দুটো গরু ঘোরাফেরা করছে এখানে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে লোকজন কম হয়তো মেঘলা আকাশ দেখে সবাই ফিরে গেছে আমরা তিনজনেই তিনটে পাথরের উপর বসলাম, এতক্ষণ ধরে মেঘ মাঝে মাঝে গুরু গুরু গর্জন করে ডাকছিল কিন্তু মেঘের গর্জন যেন এইবার অতিরিক্ত শুরু হয়ে গেল, গঙ্গার ওপারে আকাশে কালো মেঘ ছেয়ে গেছে , জনশুন্য জায়গাটি আজকে খুবই ভালো লাগছে আমরা তিনজনে বসে গল্প করছি এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে বৃষ্টিও টিপটিপ করে পরা শুরু করেছে। অজয় বলল চল রে আর বসা যাবেনা বৃষ্টি পড়ছে এবার যাওয়া যাক । আমরা উঠে পড়লাম এবং বাড়ি দিকে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই জায়গাটিতে আর একটাও লোক নেই আমাদের ডানদিকে দূরে যে লোক দুটো বসে ছিল তারা অনেকক্ষণ আগেই চলে গিয়েছে শুধু আমরা তিনজনেই বসে আছি।


আমরা সবে শ্মশানের পাশে এসেছি আর সেই মুহূর্তে ঝমঝম করে জোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেল আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই আজকে সমস্ত দোকানপাটও খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে এদিকে দুটো চায়ের দোকান আছে তার মধ্যে একটি দোকানের ছাউনি বেশ বড় আমরা তৎক্ষণাৎ সেই ছাউনির তলে গিয়ে দাড়ালাম, আমরা অনেকটা ভিজে গিয়েছি চারিদিক থমথমে এদিকে কোন বাড়িঘর নেই সামনের দিকে ধানক্ষেত পাটক্ষেত এবং সরষে ক্ষেতে ভরা আর আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার পিছনে শ্মশানের বড় পাঁচিল অর্থাৎ পাচিলের ওপারে শ্মশান।


এখন চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না এমনকি আমরা একে অপরের মুখ স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি না, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে পুরো পরিবেশটা দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এত তীব্র বেগে ঝড় হচ্ছে যে আমাদের সামনে থাকা সারি সারি কলা গাছ গুলো দুমড়ে দুমড়ে ভেঙে পড়ছে, হাওয়ার প্রচন্ড দাপটে আমাদের ছাউনি ও যেন উরে চলে যাবে মনে হচ্ছে আমাদের সামনে ধানক্ষেতের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় নারকেল গাছ গুলো যেন মট মট করে ভেঙ্গে পড়বে মনে হচ্ছে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আমাদের কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে প্রচন্ড হাওয়ার দাপট, ভয়ঙ্কর মেঘের গর্জন, টিনের ছাউনি তে জোরালো বৃষ্টির শব্দ আর তার সাথে বজ্রপাত এবং কাল ঘুটঘুটে অন্ধকার সব মিলিয়ে পরিবেশ টাকে খুব ভয়াবহ করে তুলেছে।


শ্মশানের পাশে এরকম ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের তিনজনেরই মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়েছে এত জোরে বৃষ্টি হচ্ছে যে তার শব্দে আমরা কেউ কারোর কথা সহজে শুনতে পাচ্ছি না আমরা একে অপরের সঙ্গে খুব চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে জোরে জোরে কথা বলছি

অজয় বলল "এই বৃষ্টি কখন থামবে তার কোন ঠিক নেই কি কুক্ষণে যে মেঘ দেখা সত্বেও আমরা আজকে এখানে এসেছিলাম"


সুমন বলল "আমি তো তোদের আগেই বলেছিলাম আকাশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয় এর থেকে ভালো হতো যদি আমাদের বাড়িতে বসে আড্ডা দিতাম এসে দেখলাম তো কেউ ছিলনা শুধুমাত্র আমরা তিনজনেই উপস্থিত ছিলাম এখন দেখ কেমন লাগে"


ওদের দুজনের কথা শুনে আমি কোনো জবাব দিলাম না শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকলাম প্রকৃতির এই ভয়াবহ খেলা, ঘন্টাখানেক হয়ে গেল আমরা এখানে আছি আর এখনো ঝড় থামেনি, হঠাৎ আমার নাকে একটা গন্ধ এলো খুব বিশ্রী একটা পোড়া গন্ধ। আমি সুমন আর অজয় কে বললাম

 "আচ্ছা ভাই তোরা কি কোন গন্ধ পাচ্ছিস মানে পোড়া গন্ধ"

সুমন উত্তর দিল "হ্যা ভাই আমি অনেকক্ষণ ধরে একটা পোড়া গন্ধ পাচ্ছি"


অজয় বলল ''হ্যাঁ আমিও গন্ধ টা পেলাম কিন্তু এই ঝড়ের জলের রাতে এরকম বিশ্রী গন্ধ আসছে কোথা থেকে"


আমি বললাম "গন্ধটা নিশ্চয়ই চামড়া পোড়া গন্ধ অথবা মড়াপোড়া কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এটাই যে শ্মশানে এখন তো কোন মরা পুরছেনা না এই বৃষ্টিতে, আর তার থেকে বড় কথা আমরা তো আজকে কোনো শ্মশানে মরা আসতে দেখিনি আর যদি মরা আগে এসে থাকে তাহলে আগে কেন আমরা গন্ধ পাইনি গন্ধটা হঠাৎ এখন কেন আমাদের নাকে আসছে" আমার কথা শুনে ওরা কোনো জবাব দিল না দুজনেই চুপ হয়ে থাকল, যাইহোক এই গন্ধটা কে নিয়ে বেশি কথা বললে মনের মধ্যে আরও কৌতুহল জন্মাবে আর এরা এমনিতেই একটু ভয়ও পেয়ে গেছে তাই এদের ভয়টা ভাঙানোর জন্য একটা গান শুরু করলাম, আমি জোরে জোরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গান করছি আর তার সাথে সাথে ওরাও আমার সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে, আমরা ওই বিশ্রী পোড়া গন্ধ টাকে পুরোটাই এড়িয়ে গেলাম, কিছুক্ষণ এইভাবে আমরা তিনজন মিলে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বেসুরো ভাবে গান করে চলেছি, হঠাৎ অজয় গান থামিয়ে আমার হাতটা চেপে ধরলো আর বলল "সুবীর ওই দেখ একটা লোক কিন্তু কি অদ্ভুত লাগছে দেখতে।


রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটি লোক হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে একটা লাঠির উপর ভর করে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় টা হল এই যে এই প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে এই লোকটি এখানে কি করছে লোকটির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না এবং শরীরটাও দেখা যাচ্ছে না লোকটাকে দেখে রুগ্ন মনে হচ্ছে রোগাসোগা একটি লোক কিন্তু বেশ লম্বা, লোক তার পরনে একটা চাদর আর ধুতি, চাদর দিয়ে পুরও শরীর সহ মুখটা ঢেকে রেখেছে আর তার হাতে একটা লাঠি আছে লোকটাকে দেখে যথেষ্ট বৃদ্ধ মনে হচ্ছে এবং সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ,আশেপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে তো কোন বাড়িঘর নেই যদি এই লোকটি এখানে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বাড়ি থাকবে কিংবা কোনো ঘর থাকবে কিন্তু হঠাৎ এই লোকটির আবির্ভাব হলো কী করে আর এত ঝড় জলের মধ্যে এই লোকটির এখানেই বা কি দরকার এই নিয়ে মনের মধ্যে আরও একটা কৌতুহল সৃষ্টি হল, লোকটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না ঘন ঘন বিদ্যুতের আলোয় লোকটি নজরে আসছিল, তার চলার গতি মন্থর, মাঝে মাঝে যখন বিদ্যুতের আলো দিচ্ছে তখনই তার আবির্ভাব হচ্ছে এবং তারপরে আবার যেন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে এর মধ্যেই আরেকটি বিপর্যয় হঠাৎ দমকা একটি বজ্রপাত হোলো আর সেই বাজের আগুন এবং ফুলকি এসে আমাদের সামনেই কিছুটা দূরে এসে পড়ল, আর সেই মুহূর্তেই আলোয় আলোকিত হয়ে গেল চারিদিক আর সেই আলোতে দেখতে পারলাম হঠাৎ কখন যে সেই লোকটি ঠিক আমাদের সামনে মাত্র চার হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সুমন আর অজয় বলে উঠল ভাই লোকটা কখন আসলো আর এখানে দাড়িয়ে আছে কেনো কি মতলব বলতো ?


আমরা একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু নিজেদেরকে সামলে নিয়ে আমি লোকটাকে প্রশ্ন করলাম

"আপনি কি কিছু বলবেন আপনি এই ঝরঝরে রাতে একা একা এই শ্মশানের ধারে কি করছেন আপনার বাড়ি কোথায়"

লোকটি বলল আমি এখানে থাকি


লোকটির গলার স্বর কর্কশ আর উনি এমন ভাবে কথা বলছে যেন কথা বলতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে, লোকটার চেহারা বর্ণনা আমি ঠিক দিতে পারছিনা কারন লোকটা পুরো গায়ের চাদর জড়িয়ে আছে আর তার মুখটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না যখন বিদ্যুতের আলো পড়ছে তখন যা দেখতে পাচ্ছি তা পুরো কালো কুচকুচে একটি মুখ, লোকটি আমাদের কাছে আসতেই সেই পোড়াগন্ধটা যেন আরো বেশি করে পাচ্ছি ।


তিনি বললেন "আমার নাম হারাধন আমার বাড়ি এখানেই আর এই যে তোমাদের সামনে এই ধানক্ষেত টা দেখছো এইটা আমার"

আমি মনে মনে বললাম লোকটা কি পাগল এরকম ভয়াবহ ঝড়ের মধ্যে উনি দেখতে এসেছেন যে উনার ধানক্ষেত কেমন আছে ।

সুমন এবার সাহস করে বললো "কিন্তু আপনার এরকম অবস্থায় এইভাবে আসাটা তো উচিত হয়নি তাই না আসুন আপনি এই চালার তলে আসুন আমাদের সঙ্গে আসুন কেননা যেইভাবে বাজ পরছে তাতে আপনার বাইরে দাড়িয়ে থাকাটা সুবিধার নয়"

লোকটি এবার হেসে উঠলো আর হাসতে হাসতে বললো মৃত্যু মৃত্যুর ভয় আমি পাইনা মৃত্যু একদিন আসবেই এই যে তোমরা এই চালার তলে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে সুরক্ষিত মনে করছ এটা অনেক বড় ভুল যদি মৃত্যু লেখা থাকে তাহলে তোমাদের এখানে মৃত্যু হতেপারে।

অজয় বলল "হ্যা এই ছাউনির তলে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সুরক্ষিত মনে করাটা ভুল ধারণা বাজ আমাদের এখানে পড়লে আমরা কেউই বাঁচবো না"

এখনো একইভাবে তিব্র বেগে হাওয়া বয়ে চলেছে এবং জোরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে আর ঘনঘন বজ্রপাত হচ্ছে।

আমি বললাম "তবু আপনাকে একটা নিরাপদ স্থানে দাঁড়াতে হবে নাহলে যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে জেভাবে বজ্রপাত হচ্ছে এবং বৃষ্টি হচ্ছে তা খুবই "

আমার কথা শেষ না করতে লোকটি হা হা করে হেসে উঠল এবং তার গায়ের চাদরটা সম্পূর্ণ খুলে ফেলল এবং তা দেখে আমরা সত্যিই আরো ভয়ে ভীত হয়ে গেলাম, লোকটির জীর্ণশীর্ণ চেহারা আর প্রত্যেকটা জায়গায় ক্ষত ক্ষত পোড়া দাগ এবং তার থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে আর সেই পোড়া গন্ধ সারা পরিবেশটাই ছড়িয়ে গিয়েছে।

এবং তার ফাটা ফাটা কর্কশ গলায় চিল্লাচিল্লিয়ে হো হো করে হাসতে হাসতে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

“ বিপদ কিসের বিপদ কিসের দুর্ঘটনা দেখো তাকিয়ে দেখো আমাকে সারা শরীর জ্বলছে আমি পুড়ছি আমার সারা শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে আমার শান্তি নেই নেই কোনো শান্তি „

এই ভাবে সে চিৎকার করতে থাকল আর্তনাদ করতে থাকলো হঠাৎ লোকটি আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন এতক্ষন ধরে যিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি হঠাৎ করে আমাদের সামনে আর নেই কিন্তু তার চিৎকার আর্তনাদ আমরা শুনতে পাচ্ছি অনেক দূর থেকে যেন ভেসে আসছে আমাদের কানে, সেই কথা আসছে অনেক অনেক দূর থেকে আবার একটি বজ্রপাত আর জোরালো শব্দ এবং বিদ্যুতের আলোয় পরিবেশটা আলোকিত হয়ে উঠল, কোথাও নেই সে লোক দূর দূর পর্যন্ত তাকে আর দেখা যাচ্ছে না যেন তার কোনো অস্তিত্ব নেই এই ভয়াবহ দৃশ্য আমরা সহ্য করতে পারলাম না তৎক্ষণাৎ আমরা সেই জায়গা থেকে পালিয়ে আসলাম ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে।

দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা কাছে একটি মন্দিরের সামনে এসে পড়লাম।

মন্দিরের ভিতরে গিয়ে দেখি একটি লোক বসে আছে এবং তাকে সমস্ত কথা করে বললাম এবং তারপর তিনি যা বলল তাতে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।

লোকটি বলল “উনার নাম হচ্ছে হারাধন দাস আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বাড়ি ফেরার পথে ওই মাঠের মধ্যে উনি বজ্রপাতে মারা যান অনেকেই ওনাকে দেখতে পেয়েছে, এরকম ঝরের রাতে যখন শ্মশানের দিকে পুরো নিস্তব্ধ হয়ে যায় তখন উনার অতৃপ্ত আত্মা সেখানে আসে „

ঝড় থেমে গিয়েছে কিন্তু বৃষ্টি এখনো পড়ছে আমরা বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় বসে থাকলাম

                         


Rate this content
Log in

More bengali story from Bitan Mitra