রুপকথার_আমি_শক্তিমান
রুপকথার_আমি_শক্তিমান
এখন মহামারী করোনার জন্য দেশ জুড়ে লক-ডাউন। এতদিন অত্যাবশ্যক পন্য ছাড়া সব বন্ধ ছিল। তবে গত সপ্তাহ থেকে কিছু অফিস খুলেছে। তাও রোটেশন করে যেতে হয়।
আজ যেমন রিকুর বাবা অফিস গেল।
রিকু ক্লাস-২ তে উঠেছে। নতুন ক্লাস ও হচ্ছে। কিন্তু সব অনলাইনে। সকাল ৮ টা থেকে সকাল ১১ টা।
বাড়িতে করোনা, পঙ্গপাল, আমফান আর চীনাদের লাদাখ আক্রমণ নিয়ে এত আলোচনা হয় যে সে সব কিছুই জেনে গেছে।
প্রত্যেকদিন ক্লাস হয়ে গেলে রিকু নিজের মতন খেলে বা টিভি দেখে।
আজ রিকুর অনলাইন ক্লাস নেই। বাবা কিছু হোমেটাস্ক দিয়ে অফিস চলে গেছেন। এসে দেখবেন।
মা সকালের জলখাবার দিয়ে বলে গেলেন তাড়াতাড়ি খেয়ে হোমেটাস্ক করো।।
অনেক্ষন রিকুর সাড়া শব্দ না পেয়ে মা রান্নাঘর থেকে এলেন।
দেখেন রিকু একটি খেলনা বন্দুক, মাথায় একটি টুপি পড়ে নিজে নিজে কথা বলছে একটি আয়েনার সামনে, মনে হচ্ছে যেন অভিনয় করছে।
মা আড়ালে দাঁড়িয়ে ছেলের কান্ড দেখছেন।
রিকুর কোন হেলদোল নেই, সে দিব্বি নিজের জগতে।
রিকু:. "মা জানেই না যে আমার কত কাজ। সব প্রবলেম আমাকে একাই সামলাতে হয়। আমি তো ম্যানেজার।"….
রিকু:.."ব্রুস আর কতক্ষণ?"
"বসে আছি সেই কখন থেকে"।
সায়েন্টিস্ট, 'ব্রুস-ব্যানার' করোনার ভ্যাকসিন বানাবার দায়িত্ব পেয়েছে।
রিকু:. অধৈর্য হয়ে "এখনো শেষ করতে পারলেনা"।
"আশা করেছিলাম আজই ভ্যাকসিনের পাঁচটা স্যাম্পেল হাতে পাব, তারপর ব্যাস, করোনা হওয়া"।
রিকু:.... "' কি 'ব্রুস'…..হলো??? "
'ব্রুস';.... "জাস্ট দু মিনিট!",
"তোমার সব সময় এত তারা কিসের??"
রিকু:... "আমায় কি খালি করোনা নিয়ে ভাবলেই হবে?"
" এই মাত্র খবর পেলাম চীনারা আমাদের আক্রমণ করতে আসছে সেই লাদাখ দিয়ে।"
" ভ্যাকসিনের স্যাম্পেলগুলো পেলেই সেগুলো 'হারমায়োনি', 'জিনি', 'লুনা', 'হ্যারি', 'রণ'কে সব ভাগ করে বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে ওরা আজ রাত্রের মধ্যেই 'ম্যাডাম পমফ্রে''এর হাতে ভ্যাকসিনগুলো তুলে দেয়।"
" বাকিটা উনি একটা বিশাল টিম তৈরি করে সবাইকে এই ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করার ট্রেনিং দেবেন এবং তিন দিনের মধ্যে স্যাম্পেলগুলো থেকে আরো ভ্যাকসিন বানিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য রেডি করবেন"।
'ব্রুস':.. "এই নাও তোমার পাঁচটা স্যাম্পেল আর পাঁচটা গাইড বই , এবার যা করার করো।"
"ওঃ হ্যা, সবাই যেন গাইড বই ভালো করে পড়ে নেয় ।" "বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলো আজকাল খুব ফাঁকি মারছে।" "অসুবিধে হলে মেসেজ করতে বলবে, বেশি যেন ফোন না করে'
"আমি এখন রেস্ট নেব। তুমি এখম এস। গুড-লাক্।"
রিকু:.."ওকে সব বুঝে গেছি" । " আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যে করোনাটা পালাবে"। " আর আমিও স্কুল যেতে পারব"।
রিকু:.. " একটা জরুরি কথা….. তোমায় হয়তো লাদাখ যেতে হতে পারে। তৈরি থেকো।"
'ব্রুস': "আবার লাদাখ!! এতদিন পর ছুটি পেলাম'।
রিকু:....... "আমরা সৈন্য"। " আমাদের ছুটি নেই'।
পরের দিন
(রিকু নিজেই সেটা ঠিক করে ফেলল ১০ মিনিট পর)
মিটিং চলছে । পরিচালনায় ম্যানেজার রিকু আর সাথে.....:ক্যাপ্টেন-আমেরিকা', 'সুপার-ম্যান:, 'থর', 'আইরন-ম্যান', 'ব্ল্যাক-উইডো', ও 'স্কারলেট-উইচ'।
রিকু:..., ঠিক করল আজই
'এভেঞ্জার্স' লাদাখ পৌঁছবে। চীনাদের কিছুতেই ভারতের মাটিতে পা রাখতে দেবে না। দরকার পড়লে 'ব্রুস' ও চলে আসবে।
রিকু:.. "এবার আমি একটু রেস্ট নি। করোনাটা শেষ পর্যন্ত পৃথিবী ছাড়বে।"
হঠাৎ ফোন
রিকু নিজেই ফোনের আওয়াজ করলো হাতে একটা পেন্সিল বক্স নিয়ে..
...... "ক্রিন".... "ক্রিন"....
রিকু.:... দেখলো 'হ্যাগরিড'এর ফোন …..খুশিতে ডোগমগ হয়ে…... " হ্যালো …... ''হ্যাগরিড'..... নিশ্চয়ই কোনো ভালো খবর দেবে"।
'হ্যাগরিড:'.... ..'কংগ্রাচুলেসন্স.... এখন আমরা করোনা মুক্ত হয়ে যাবো।"
কিন্তু দুটো খারাপ খবর আছে"।
রিকু:...... " আবার কি হলো?"
'এভেঞ্জার্স তো সবাই প্রস্তুত।"
'হ্যাগরিড':.... " না অন্য সমস্যা"
"এক....."ডক্টর স্ট্রেঞ্জ" জানালেন 'থ্যানশ- আমফান' বলে বড়ো সাইক্লোন আসছে। দুদিনের মধ্যেই। উনি অনুমান করছেন এতে অনেক মানুষের ক্ষতি হতে পারে।"
রিকু:.... অবাক হয়ে বলছে, "কি বলছ?" " আর দু নম্বরটা?"
'হ্যাগরিড'..... " আরো সাংঘাতিক"। "গতকাল রাত্রেই হঠাৎ দুষ্টু 'আমব্রিজ' কোটি কোটি পোকা, নাম 'পঙ্গপালt' দেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা সব গাছের ফল, ক্ষেতের ফসল এক নিমেষে খেয়ে ফেলছে।
তুমি কিছু করো।" " গুড লাক "
বলে হ্যাগরিড' চলে গেল।
চিন্তিত রিকু..... কাকে ডাকবে, আর কাকে কোন কাজটা দেবে বুঝতেই পারছে না।
''এভেঞ্জার্স লাদাখ সামলাচ্ছে।
অনেক ভেবে.... রিকু.... আর্জেন্ট মেসেজ পাঠালো....(পেন্সিল বক্সটা কে ফোন বানিয়েছে).''স্পাইডার-ম্যান' ও ' ক্যাপ্টেন- মার্ভেলl'কে
'স্পাইডার-ম্যান' ও ' ক্যাপ্টেনl-মার্ভেল' দুজনেই হাজির...... "বলো রিকু...... কি সমস্যা? "
রিক দুজনকেই, 'আমব্রিজ-পঙ্গপাল'এর কথা জানালো। আর সাহায্য চাইলো।
'স্পাইডার-ম্যান:'.... " এই ব্যাপারে এত চিন্তা করো না। আমি আমার জাল বিছিয়ে ওদেরকে আটকে দিচ্ছি এক্ষুনি"
'ক্যাপ্টেন-মার্ভেল'':..... " হমম, ওতেই কাজ হয়ে যাবে। আর যদি তাতেও না হয়, আমি তো আছি, আমার 'লেজার-রশ্মি' দিয়ে ওদেরকে সাবার করে দেবো"। "চল 'স্পাইডার-ম্যান' আর দেরি করবো না।" "গুড বাই রিকু"।
রিকু:.....কম্পিউটার দিয়ে দেখে নিলো লাদেখের অবস্থা। খুশি হলো এভেঞ্জার্স চীনাদের একদম ঢুকতেই দিলো না।
রিকু এবার অনেক ভেবে.... 'আইরন-ম্যান' কে ফোন করল.:.... ".হ্যালো.. 'আইরন-ম্যান' দারুন কাজ করলে তোমরা। আমি চাই সবাই ওখানে থাকুক আরও কয়েকদিন।
শুধু তুমি চলে এসো, কারন কাল বিকেলের মধ্যেই 'থ্যানশ-আমফান' বলে একটা সাইক্লোন নিয়ে আসছে। তাকে না আটকালে অনেক ক্ষতি হবে। আমি 'ব্রুস'কেও মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি। ও এখনই আসছে। তাড়াতাড়ি এসো।"
'ব্রুস:'..... "আমি এসে গেছি ...রিকু, সাথে 'ডাক্তার স্ট্রেঞ্জ'কেও নিয়ে এলাম যাতে উনি টাইমলি আমাদের আপডেট দিতে পারেন।
'স্পাইডার-ম্যান' এর ফোন এলো মাঝখানে:.....
. "হ্যালো রিকু, সব আমব্রিজ পঙ্গপাল'কে জালে আটকে ফেলেছি।"
"এবার 'ক্যাপ্টেন-মার্ভেলl' যা করার করবে। 'থ্যানশ-আমফান' কে আটকাতে আমিও আসছি।"
রিকু বেশ একটু নিশ্চিন্ত হওয়ার মতন ভাব করে পায়ের ওপর পা তুলে চেয়ারে বসল।
মা: আর না পেরে পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন একটু রাগ রাগ ভাব করে.. " এসব কি হচ্ছে সকাল বেলা পড়ার টাইমে, আর দুধটুকুও এখনো খাওনি"।
রিকু প্রথমে একটু থত মত খেয়ে ,বলল: " মা একটু ওয়াট করো 'থ্যানশ কে আটকাতে হবে"।
বলে মা হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসালো।
মা: " সে কে..?"
রিকু: " ওই সাইক্লোনটা"। "সবাই এসে গেছে"।
বলে সে আবার শুরু করলো এবং আরো উত্তেজিত হয়ে, কারণ সে এখন একজন দর্শক (মা) পেয়েছে।
রিকু:.."সাইক্লোন আটকাতে সবাই হাজির।'
সে অনেক লাফালাফি করে যুদ্ধ করতে লাগলো কারণ
'থ্যানশ-আমফান' সময়ের একটু আগেই চলে আসাতে রিকুর ঝামেলা হলো।
সে নিজেই মা কে বলছে:....
"যদিও তেমন কিছু ক্ষতি হয়নি কারণ ওদের সাথে ' এবার 'সুপার শক্তিমান রিকু' আছে আর তাই সব
এখন আন্ডার কন্ট্রোল"
রিকু:...: ," জানো মা এভেঞ্জার্স চীনাদেরকে এমন ভয় দেখিয়েছে যে ওরা আর ভারতে ঢুকবেই না বলে জানিয়েছে।"
রিকু বেশ গর্বের সাথে হেসে বলল: "আমি এখন ওদের হলিডেতে পাঠিয়েছি, এখন ওরা যে যার বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছে।......."
.মা:.... "এবার বুঝলাম বইয়ের দিকে তাকিয়ে কি ভাব?"
"এই আবোল তাবোল না ভেবে দুধটুকু খেয়ে পড়তে বসো।"
"জোরে জোরে পড়ো, যেন আমি রান্নাঘর থেকে সব শুনতে পাই। না হলে আজ বাবা আসুক সব তোমার আজগুবি গল্প বলতে হবে।
এই বলতে বলতে মা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
ব্যাচারা রিকু .....দুধটুকু খেয়ে পড়তে বসলো, আর মনে মনে বললো,
"এত কিছু করে সব সামলে দিলাম, মা একটা 'থ্যকন্স' ও দিলো না"।
মা... রান্না করতে করতে তাঁর class-2 এ পড়া, বীর পালোয়ান ছেলের অভিনয় আর আজগুবি চিন্তা গুলি ভাবছেন আর হাসছেন।