Arijit Ojha

Children Stories Horror Tragedy

3.5  

Arijit Ojha

Children Stories Horror Tragedy

রাতের পাখি

রাতের পাখি

3 mins
830


জুলাই মাস,বাইরে ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। অদূরে গির্জার ঘন্টা ঢং ঢং করে জানিয়ে দিল বারোটা বেজে গেছে।

সদাশিব ডাক্তার বসেছিলেন নিজের পড়ার ঘরে। এই বাদলার দিনে সকাল-সন্ধে রোগীর চাপে খবরের কাগজ দেখার সময়ই করে উঠতে পারেন নি। এখন তাই বসেছেন কাগজটা নিয়ে। পাতা ওল্টাতেই চোখে পড়ল,পরের পাতার এক কোনায়, কেউ লাল কালি ফেলে দিয়েছে। ফলে সেই অংশের খবরটা পড়াই যাচ্ছে না। শুধু "দুর্ঘটনা ", “মৃত্যু” এরকম কিছু টুকরো টুকরো

কথা উদ্ধার করতে পারলেন। খবরের কাগজ দেখতে দেখতে আর বর্ষার ভেজা হাওয়ায় সবে একটু তন্দ্রামত এসেছিল, তখনই হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে একটু হকচকিয়ে গেলেন সদাশিববাবু।

“এত! রাতে আবার কে এল?” 

খানিকটা বিরক্তির সাথেই, গেলেন দরজাটা খুলতে। দরজা খুলতেই একরাশ হিমেল হাওয়া, যেন ঝাপিয়ে পড়ল ঘরে। মেঘের ফাঁক খুজে বেরিয়ে আসা ভাঙা চাঁদের আলোতেও, সামনে দাঁড়ানো মুর্তিটাকে চিনতে এতটুকু অসুবিধা হল না সদাশিবের। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে তার বহুদিনের বন্ধু পরেশ। “কিরে? বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবি নাকি”? 

পরেশের কথাতেই চমক ভাঙল তার। 

 “আরে আয় আয় , তা এত রাতে কি মনে করে ?”

পরেশ ঘরে ঢুকলে, দরজা বন্ধ করতে যেতেই বাধা দিল সে,

“শোন দরজা বন্ধ করতে হবে না, আর তোর ওবুধের বাক্সটা এক্ষুনি গুছিয়ে নে, আমার সাথে একবার যেতে হবে।”

“এত রাতে? কোথায়?”

"আর বলিসনা, আমাদের পাড়ার এক জ্যাঠামশাই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর কাছেপিঠে ভালো ডাক্তার বলতে তো তুই, তাই আর কি। "

সদাশিববাবু আশ্চর্য না হয়ে পারলেন না। 

 “তাই বলে তুই এত রাতে বৃষ্টি মাথায় করে...”

তাকে আর কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই পরেশ তার ওষুধের বাক্স নিয়ে বেরিরে পড়ল। রাস্তায় যেতে যেতে পরেশের তাড়া আর উৎকঠা দেখে সদাশিববাবু আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। 

“সত্যি ! এই পরোপকারের ভূত এ জন্মে আর তোর ঘাড় থেকে নামবে বলে মনে হয় না”। 

এরপর বার কয়েক কথা বলার চেষ্ঠা করেও ওপাশ থেকে কোন প্রত্যুত্তর না

পেয়ে সদাশিববাবুও চুপ করে গেলেন। বর্ষার জলকাদায় হাঁটতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। তার উপর আবার সাপের ভয়, তবুও দীর্ঘদেহী পরেশ যে গতিতে হাঁটছিল, তাতে তার সাথে তাল রাখতে রীতিমত দৌড়াতে হচ্ছিল সদাশিব ডান্তারকে। কিছুক্ষণের মধো পরেশদের পাড়া এসে গেল। পরেশ তাকে রোগীর বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে, “তুই বা, আমি একটু আসছি," বলে কোথায়

যে সরে পড়ল তার আর পাত্তাই পাওয়া গেল না। ভারী রাগ হল সদাশিববাবুর পরেশের প্রতি। 

রোগীর বাড়ির দিকে এগোতেই তাদের একজনের সাথে দেখা হল রাস্তাতেই। সদাশিব ডাক্তারকে দেখে যারপরনাই অবাক হয়ে গেল রোগীর বাড়ির লোকেরা।তবুও তাকে পেয়ে তারা যেন হাতে চাঁদ পেল। সদাশিব ডাক্তারও কম অবাক হননি। ভাবলেন পরেশের যা স্বভাব, সে হয়তোরোগীর বাড়ির লোকেদের না জানিয়েই তাকে ডাকতে গিয়েছিল। সত্যিই রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ। তার উপর আবার এই বর্ষার সময় ঠাণ্ডা লেগে হাঁপানির টানটাও বেড়ে গিয়ে রোগীর অবস্থা বেশ সঙ্গীন করে তুলেছে। তবুও ঘন্টা তিনেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি কিছুটা আয়ত্তে এল। রোগীর অবস্থার একটু উন্নতি হওয়ার সদাশিব ডাক্তার যখন বেরোলেন রোগীর বাড়ি থেকে, তখন ভোর হয়ে এসেছে। বৃষ্টিও গেছে থেমে। সারারাত্রি আর একবারও পরেশের দেখা পাননি, তাই খানিকটা অবাকই হলেন। 

তবু সারারাতের পরিশ্রম আর মানসিক ক্লান্তিতে পরেশের বাড়িতে যাওয়ারও ইচ্ছে হল না। বর্ষার জল কাদা ভেঙে প্রায় ক্রোশ দুয়েক পথ হেঁটে যখন সদাশিববাবু বাড়ি পৌঁছালেন, তখন সূর্য উঠে গেছে। শ্রান্ত শরীরে নিজের পড়ার ঘরের চেয়ারে বসে জিরোলেন খানিকটা। কখন নিজের অজান্তেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন কালকের খবরের কাগজটা। পাতা ওল্টাতেই দারুন অবাক হয়ে গেলেন তিনি। কালকের সেই কালি লেগে থাকা অংশটা একদম পরিস্কার হয়ে গেছে। বেশ বিভ্রান্ত মনেই ওখানকার খবরটা পড়তে লাগলেন সদাশিববাবু। 

'গতকাল সন্ধ্যেবেলায় পঞ্চানন তলার মোড়ে, লরির ধাক্কায় প্রাণ হারান বছর 

 তিরিশের এক যুবক। নাম পরেশ রায়, বাড়ি বকুলতলা..' 

আর পড়তে পারলেন না সদাশিব ডাক্তার। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এল তার। খবরের কাগজটা খসে পড়ল হাত থেকে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Arijit Ojha