নরক গুলজার
নরক গুলজার
আজ থেকে বহুকাল আগের কথা।
এক দেশে এক দরিদ্র বামুন বাস করত। ভিক্ষে সিক্ষে করে যা জুটতো তাতে তার আর ব্রাহ্মণীর কোনো রকমে চলত।
এই নিয়ে ব্রাহ্মনীর সাথে বামুনের রোজ ঝগড়া হত। একদিন ঝগড়া এত তুমুল হল যে ব্রাহ্মণী ঝাঁটা হাতে তেড়ে এল। বামুন রাগে দুঃখে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সে মনে মনে ঠিক করল যদি কোনদিন বড়লোক হতে পারে তাহলেই বাড়ি ফিরবে না হলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে । এই জীবন আর রাখবে না।
এখন বামুন একটা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। সে একবার এগোচ্ছে আবার পিছোচ্ছে। সে ঝাঁপ দিতে পারছে না।
বামুনের হঠাৎ নজরে পরলো একটা লোক গাছের নিচে বসে আছে আর গাছের উপর একটা ফাঁস ঝোলানো।
বামুন লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। বামুন লোকটাকে বলল " কি ভাই এখানে কি মতলবে এসেছো?"
লোকটা বিরক্ত হয়ে দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল " যে মতলবেই আসি তাতে তোমার কি দরকার?"
বামুন বলল " তুমি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইছো তাই না।"
লোকটা বলল " সব যখন বুঝতেই পারছো তবে জিজ্ঞাসা করছ কেন?"
বামুন বলল " ভাই আমিও একই কারণে এখানে এসেছি কিন্তু পারছি না। আমি যতবারই নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছি ততবারই আমার ছেলে মেয়ের মুখগুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমিতো ভাই অভাবের জ্বালায় আর বৌএর মুখ ঝামটার জ্বালায় আত্মহত্যা করতে এসেছি। তুমি কেন আত্মহত্যা করে মরতে চাও।"
লোকটা বলল " আমারও ভাই তোমার মত একই অবস্থা। অভাবের জ্বালায় আর বৌএর জ্বালায় টিকতে পারছি না।
আমার গ্রামে একটা ছোট মুদির দোকান আছে। সেখানে খুব একটা খদ্দের হয় না। সবাই বড় বড় মুদির দোকানে যায়। ছোট দোকানে কেউ আসতে চায় না।
কিন্তু ভাই আমাদের দ্বারা আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। আত্মহত্যা করা এত সহজ নয়। এইসব করতে গেলে বুকের পাটা চাই।
তার চে বরং এক কাজ করা যাক আমরা দুজন শিব ঠাকুরের উদ্দেশ্যে তপস্যা করি। তিনি দেখা দিলে আমরা দুজনেই বড়লোক হবার বর চেয়ে নেবো।
আগেকার দিনে তো লোকজন তপস্যা করে ভগবান থেকে কত বর আদায় করে নিতো। আমরা পারবো না কেন।"
বামুন বলল " ঠিক আছে তবে তাই করা যাক কিন্তু শিবঠাকুর আমাদের দেখা দেবেন তো?"
মুদি বলল " কয়েকদিন তপস্যা করলেই শিব ঠাকুর আমাদের বাপ বাপ বলে দেখা দেবেন আর বর দিয়ে চলে যাবেন।"
বামুন বলল " তা তপস্যা করতে কোথায় যাব?"
মুদি বলল " শুনেছি শিব ঠাকুর হিমালয়ের কাছা কাছি থাকেন। তাই আমরা হিমালয় গিয়ে তপস্যা করবো।"
তারা দুজন হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হল হাঁটা পথে। অনেকদিন ধরে তারা হাঁটতে লাগল। অবশেষে অনেক গ্রাম শহর পেরিয়ে তারা হিমালয় পৌঁছালো। সেখানে একটা বনের ভিতর একটা গুহায় তারা আশ্রয় নিল। তারা এই বনের একটি নির্দিষ্ট জায়গা বেছে নিল তপস্যা করবার জন্য।
তারা রোজ তপস্যা করতো। ক্ষিদে পেলে তারা আসে পাসের গ্রাম থেকে চাল ডাল ভিক্ষে করে এনে রান্না করে পেটপুরে খেত। তারপর দুপুরে টানা ঘুম দিয়ে বিকেলে উঠে আবার তপস্যা করত। তেষ্টা পেলে তারা ঝর্ণার জলপান করত বা বনের কোন গাছ থেকে মিষ্টি পাকা রসালো ফল পেরে সেটা খেয়ে তারা তেষ্টা মেটাতো।
এই ভাবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেল।
একদিন বিকেলে তারা ঘুম থেকে উঠে তাদের সামনে আগুন জ্বেলে বেশ মন দিয়ে তপস্যা করছিল। হঠাৎ তারা একটি মেয়েছেলের কন্ঠস্বর শুনতে পায় " তোমরা কারা তোমরা এইসব কি করছো?"
তারা চোখ মেলে দেখে তাদের সামনে একটি কিশোরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটি বলল " তোমরা কারা তোমরা এইসব কি করছো?"
তারা মেয়েটিকে বলল " আমরা মহাদেবের তপস্যা করছি।"
মেয়েটি তাদের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল " আমি একজন পরী। আমি অনেকদিন ধরেই তোমাদের এইসব কান্ড কারখানা লক্ষ করছি। তোমাদের দ্বারা তপস্যা টপস্যা কিছু হবে না। এই ভাবে কি তপস্যা হয়? তার চে বরং এক আমি তোমাদের একটা জীনিষ দিচ্ছি এটা দিয়ে তোমরা যেখানে খুশি সেখানে উড়ে যেতে পারবে। এটা রাখ এটা রাখলে তোমাদের উপকার হবে।"
এইকথা বলে পরীটা তাদেরকে একটা লাল কাপড় দিল।
বামুন আর মুদি কাপড়টার উপর উঠে বসল। বামুন কাপড়টাকে দক্ষিণ দিকে যেতে বলল। কাপড় তাদের নিয়ে দক্ষিণ দিকে যেতে উড়ে যেতে লাগল।তারা আকাশের উপর থেকে লোকজন, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট দেখতে পাচ্ছিল। সব কিছু খুব ছোট ছোট দেখাচ্ছিল। অনেক দুর উড়ে যাবার পর তারা উপর থেকে একটি উদ্দ্যান দেখতে পেল।
তারা কাপড়টাকে বলল এখানে তাদের নামিয়ে দিতে। নামার পর তারা উদ্দ্যান থেকে বের হয়ে বড় রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তারা বড় বড় দালান বাড়ি ঘর আর লোকজন দেখতে পেল। তারা বুঝতে পারল তারা কোনো বড় রাজ্যে চলে এসেছে।
বামুন একটা লোককে বলল " ভাই রাজপ্রাসাদটা কোন দিকে? আমরা রাজার সাথে একটু দেখা করতে চাই।"
লোকটা বলল " তোমাদের তো আগে কোনোদিন দেখিনি। তোমরা কি বিদেশী না কি? তা রাজপ্রাসাদের খোঁজ করছো কেন রাজকন্যাকে বিয়ে করার মতলব না কি।"
বামুন বলল " রাজকন্যাকে বিয়ে করতে যাব কেন আমাদের দুজনেরই বৌ আছে। আমরা কিছু টাকা পয়সা ভিক্ষে করবার জন্য রাজার সাথে দেখা করতে চাই। তা তুমি হঠাৎ রাজকন্যাকে বিয়ে করার কথা বললে কেন।"
লোকটা বলল " তোমরা বিদেশী তাই বোধহয় জান না। এই রাজ্যের রাজকন্যা শর্ত দিয়েছে যে লোক ডাইনিদের দেশ থেকে সোনার ময়ূর এনে দিতে পারবে রাজকন্যা তাকেই বিয়ে করবে তা সে রাজপুত্রই হোক, মন্ত্রীপুত্র সেনাপতিপুত্রই হোক বা কোন সাধারণ মানুষই হোক।
কত দেশের রাজপুত্র আরও কতলোক এই রাজ্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করার লোভে ডাইনিদের দেশে সোনার ময়ূর আনতে গেছে। তারা কেউ আর ফিরে আসেনি। হয়ত ডাইনিরা তাদের ধরে গরু ছাগল বানিয়ে দিয়েছে তারা হয়ত ডাইনিদের দেশে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"
বামুন বলল " আমরা ঠিকই সোনার ময়ূর এনে দিতে পারব। তুমি ভাই এবার বল রাজপ্রাসাদটা কোথায়।"
লোকটা বলল " সোজা গিয়ে ডানদিকে চলে যাও রাজপ্রাসাদ দেখতে পাবে।"
বামুন আর মুদি রাজার সাথে দেখা করে বলল " আমরা ডাইনিদের দেশ থেকে সোনার ময়ূর এনে দিতে পারব কিন্তু আমরা রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চাই না। আমাদের কিছু টাকাপয়সা দিলেই আমরা খুশি।"
রাজা বলল " তোমরা যদি ডাইনিদের দেশ থেকে সোনার ময়ূর এনে দিতে পার তাহলে আমি তোমাদের প্রচুর সোনার মোহর পুরস্কার দেবো।"
বামুন আর মুদি আবার সেই উদ্দ্যানে গেল। তারা চারিদিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল অন্য কোনো মানুষ আছে কি না। যখন তারা দেখল চারিদিকে কোনো মানুষজন নেই তারা সেই লালকাপড়টা বিছিয়ে সেটার উপর বসে সেটাকে বলল তাদের ডাইনিদের দেশে নিয়ে যেতে।
কাপড়টা তাদের নিয়ে সো সো করে উপরে আকাশের দিকে উড়ে গেল তারপর ডাইনিদের দেশের উদ্দেশ্যে উড়ে যেতে লাগল।
ডাইনিদের দেশে পৌঁছে তারা উপর থেকে ডাইনিদের দেখতে পেল। কি ভয়ঙ্কর দেখতে ডাইনিদের। তাদের সবার চুল খোলা, বড় বড় গোল গোল লাল চোখ আর তারা সবাই একটু কুঁজো হয়ে হাঁটে। এত উপর থেকে দেখেও সব বোঝা যাচ্ছিল।
তারা সোনার ময়ূরটাকে দেখতে পেল ডাইনিদের রানীর প্রাসাদের একদম চুড়ায়।
বামুন লাল কাপড়টাকে বলল তাদের ডাইনিদের রানীর প্রাসাদের চুড়ায় নিয়ে যেতে। লাল কাপড়টা সেখানে পৌঁছাতেই মুদি কাপড়টার উপরে বসেই ময়ূরটাকে জাপটে ধরল তারপর কাপড়টাকে বলল সেই উদ্দ্যানে নিয়ে যেতে।
লাল কাপড়টা তাদের দ্রুত সেই উদ্দ্যানে নিয়ে গেল।
এরপর তারা রাজপ্রাসাদে পৌঁছে রাজাকে সোনার ময়ূরটা দিয়ে দিল।
রাজা রাজকন্যাকে ডেকে সেই ময়ূরটা তার হাতে দিল।
রাজকন্যা ময়ূরটার পায়ে সোনার শিকল এটে সোনার দ্বারে বেঁধে দিল।
রাজা খুশি হয়ে বামুন আর মুদিকে বলল " আমি তোমাদের এক বস্তা করে সোনার মোহর পুরস্কার দেবো।"
তারা বলল " আমরা কিছুদিন পরে এসে আপনার কাছ থেকে পুরস্কারটা নিয়ে যাব। আমরা আরও কিছুদিন নানান দেশ ভ্রমণ করতে চাই।"
রাজা বলল " বেশ তবে তাই হবে।"
বামুন আর মুদি আবার সেই উদ্দ্যানে গেল। তারা ভাল ভাবে চারিদিকে দেখল কোনো মানুষজন আছে কি না। যখন তারা দেখল আসে পাশে কেউ নেই তারা লাল কাপড়টা বিছিয়ে সেটার উপর বসল।
বামুন বলল " দক্ষিণ দিক তো দেখা হয়ে গেছে এবার পশ্চিম দিকে যাওয়া যাক।"
বামুন কাপড়টাকে পশ্চিম দিকে নিয়ে যেতে বলল।
কাপড়টা সো সো করে তাদের নিয়ে আকাশের দিকে উঠতে লাগল আর পশ্চিম দিকে যেতে লাগল ।
কিছুদুর যাবার পর তারা উপর থেকে একটা ফলের বাগান দেখতে পেল। সেই বাগানের গাছগুলোতে বড় বড় পাকা রসালো নানা রকমের ফল ধরে ছিল। সেই ফলগুলো দেখে তাদের খুব লোভ হল।
তারা কাপড়টাকে বলল এই ফল বাগানে নামিয়ে দিতে। কাপড়টা তাদের সেই ফল বাগানে নামিয়ে দিল।
তারা সেই ফল বাগানে নেমে একটা গাছের উপর উঠে পাঁকা ফল পেরে খেতে লাগল।
হঠাৎ পিছন দিক থেকে একটা বিকট লোমশ হাত তাদের জাপটে ধরল। সেই হাতের আঙ্গুলে ছিল বড় বড় নোক।
তাদের ধরে বগলে পুরে সেই লোমশ হাত ওয়ালা ব্যক্তি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
বামুন বলল " তুমি কে ভাই? আমাদের এই ভাবে ধরেছে কেন?"
ব্যক্তিটা বলল " আমি একজন রাক্ষস। রাক্ষস রাজা তোমাদের গরম তেলে ভেজে খাবেন তাই তোমাদের ধরে আমি তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।"
বামুন বলল " কেন আমরা কি দোষ করেছি?"
রাক্ষসটা বলল " আহা দোষ করতে যাবে কেন। আমাদের রাজা মশাই মানুষের মাংস খেতে খুব পছন্দ করেন তাই তোমাদের ধরে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।"
এই কথাগুলো বলে রাক্ষসটা একটা বিরাট অট্টালিকার ভিতর প্রবেশ করল।
রাক্ষসটা বামুন আর মুদিকে নিয়ে অট্টালিকার ভিতর প্রবেশ করতেই তারা দেখতে পেল অনেকগুলো রাক্ষস মহাভোজ করছে। তারা এটাও বুঝতে পারল অট্টালিকাটা একটা রাক্ষসপুরী।
তারা দেখতে পেল একটা বিরাট আকারের করাইতে তেল গরম করা হচ্ছে আর সেই গরম তেলে বিভিন্ন পশু পাখি ও মানুষের দেহ ফেলে দওয়া হচ্ছে। রাক্ষসগুলো সেই গরম তেল থেকে দেহগুলো তুলে কড়মড়িয়ে তাদের মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে। চারিদিকে থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
রাক্ষসগুলো খাচ্ছে আর মহাউল্লাসে চিৎকার করে করে নাচছে।
একটা রাক্ষস আবার করল কি সে একটা ঘোড়ার দেহের নিচের অংশ পেট থেকে দু পা পর্যন্ত গরম তেল থেকে তুলে নিয়ে কামড়ে খেতে লাগল। কাপড় দিতেই ঘোড়ার দেহের নিচের অংশের পেটটা থেকে নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে নিচে পরে গেল সেটা দেখে অন্য একটা রাক্ষস এসে সেই নাড়ি ভুঁড়ি গুলো তুলে খেতে লাগল।
রাক্ষসগুলো যেন আজ মহাউৎসবে মেতে উঠেছে।
রাক্ষসদের কান্ড কারখানা দেখে বামুন আর মুদির মনে হল রাক্ষস গুলো আজ নরককে যেন গুলজার করে তুলেছে।
এইসব দেখে বামুন আর মুদি ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেল।
রাক্ষসটা বামুন আর মুদিকে নিয়ে একটা বিরাট কক্ষে প্রবেশ করল। তারা সেখানে দেখল অন্য একটা বিরাট আকারের করাইতে তেল গরম করা হচ্ছে।
কক্ষের মধ্যে একটা সিংহাসনে একজন রাক্ষস বসে আছে তার পরনে দামি রাজপোশাক, মাথায় বহু রত্ন খচিত রাজ মুকুট আর তার চেহারাটা খুব ভয়ঙ্কর। কক্ষের একপাশে দুজন রাজপোশাক পরা কিশোর বয়সি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দেখে মানুষ মনে হচ্ছে।
কক্ষটাকে চারিদিক থেকে বিকট চেহারার সব রাক্ষস পাহারা দিচ্ছে।
রাক্ষসটা বামুন আর মুদিকে বগল থেকে নামিয়ে বলল " এই যে দেখতে পাচ্ছ যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তিনি হলেন আমাদের রাক্ষস রাজা আর ওই যে দুজন কিশোর ছেলেকে দেখতে পাচ্ছ তারাও তোমাদের মত মানুষ।
রাক্ষস রানী কচি ছেলেদের মাংস খেতে খুব পছন্দ করেন তাই তাদের ধরে আনা হয়েছে।
রাক্ষস রানী অন্দরমহলে আছেন।
ওই যে করাইটা দেখতে পাচ্ছ সেটাতে তেল গরম করা হচ্ছে। তেল গরম হলেই তোমাদের সেই করাইতে ফেলে দওয়া হবে তারপর রাক্ষস রাজা সেখান থেকে তুলে তোমাদের মাংস খাবেন।"
এই কথাগুলো বলে রাক্ষসটা বামুন আর মুদিকে সেই কক্ষে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে চলে গেল।
বামুন বলল " আর একটু পরেই আমাদের মরতে হবে সব শেষ হয়ে যাবে।"
মুদি বলল " এত ভয় পাচ্ছ কেন এখনো অনেক সময় আছে। লাল কাপড়টা তো আমাদের কাছেই আছে। আমি শুধু ভাবছি ওই বাচ্চা ছেলে দুটোকে রাক্ষসগুলোর হাত থেকে কিভাবে বাঁচানো যায়। একটা বুদ্ধি বার করতে হবে।"
এই কথাগুলো বলে মুদি হঠাৎ রাক্ষস রাজার একদম সামনে চলে আসে। সে রাক্ষস রাজাকে প্রণাম করে বলে " রাজামশাই এর জয় হোক। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান কারন আমরা আপনার মত একজন একজন মহান ব্যক্তির খাদ্যে পরিণত হয়ে আপনার পেটে যেতে চলেছি। আপনার কাছে শুধু একটা অনুরোধ মৃত্যু তো আমাদের হবেই শুধু মরবার আগে একবার ভগবানের নাম স্মরণ করে একটু পার্থনা করবার অনুমতি দিন।"
রাক্ষস রাজা বলল " ঠিক আছে কিন্তু যা করার তাড়াতাড়ি কর তেল গরম হয়ে আসছে আর আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।"
লাল কাপড়টা মেঝেতে বিছিয়ে বামুন আর মুদি সেটার উপর বসল। মুদি সেই কিশোর ছেলে দুটিকে উদ্দেশ্যে করে বলল " তোমরাও মানুষ তাই তোমাদের বলছি মরবার আগে একবার আমাদের সাথে বসে ভগবানের কাছে পার্থনা কর।"
প্রথমবার এই কথাগুলো শুনে তারা এল না। মুদি দ্বিতীয় বার আবার তাদের উদ্দেশ্য করে একই কথা বলল। এবার তারা এসে ওই লাল কাপড়ের উপর বসল।
মুদি লাল কাপড়টাকে উদ্দেশ্যে করে বলল " যেখানে এই দুজন কিশোর ছেলের দেশ সেখানে নিয়ে চল।"
লাল কাপড়টা সঙ্গে সঙ্গে সো সো করে উপরে উঠে তাদের নিয়ে আকাশে উড়ে গেল।
ওই দুই কিশোর ছেলে আসলে হল তাদের নিজেদের দেশের রাজপুত্র ও মন্ত্রীপুত্র। তাদেরকে অনেক দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
সেই দেশের রাজা নিজের পুত্রকে ফিরে পেয়ে বামুন ও মুদিকে বলল " আপনাদের জন্য আমি আমার পুত্রকে ফিরে পেয়েছি। আমি আপনাদের দুবস্তা করে সোনার মোহর পুরস্কার দেবো।"
বামুন আর মুদি দুই রাজা থেকে এত সোনার মোহর পেল যে এখন তাদের সাত পুরুষ বসে খেতে পারবে।
-----------
