একটি কাক ও টিয়াপাখির মধ্যে বন্ধুত্বের কাহিনী।।
একটি কাক ও টিয়াপাখির মধ্যে বন্ধুত্বের কাহিনী।।
2 mins
4
এক গ্রামের এক কোণায় ছিল একটি বড় আমগাছ। সেই গাছে বাসা করত এক বুড়ো কাক। সে ছিল একা, অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান। কাকের গাছে জীবনের অভিজ্ঞতা ছিল অনেক।
কাকের পাশের গাছে বাসা বাঁধল এক রঙিন টিয়া পাখি। টিয়াটি ছিল নতুন, সুন্দর গলার অধিকারী এবং অনেক কথা বলত। তার শেখা কথা ছিল – “নমস্কার!”, “কেমন আছো?”, “আম দাও!” ইত্যাদি। গ্রামবাসীরা তার কথা শুনে হাসত, তাকে ভালোবাসত, ফল-মূল দিত। সে দ্রুত সকলের প্রিয় হয়ে উঠল।
অন্যদিকে কাককে কেউ তেমন পাত্তা দিত না। অনেকে তাকে অপয়া মনে করত। কাক নিঃশব্দে নিজের মতো থাকত। টিয়া মাঝে মাঝে কাককে খোঁচা দিত –
“কাক দা, তোমার তো কেউ কথা শুনে না! তুমি কিছু শেখো না কেন?”
কাক শুধু হেসে বলত, “সব সময় মুখের কথা নয়, কাজে বোঝাতে হয়।”
দিন চলতে থাকল। হঠাৎ একদিন দুপুরে গ্রামে আগুন লেগে গেল। বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন আতঙ্কে দৌড়ে পালাতে লাগল। পাখিরাও উড়ে যেতে লাগল।
টিয়া ভয়ে বাসা ছেড়ে উড়ে গেল। কিন্তু কাক ছিল শান্ত। সে উপর থেকে দেখতে লাগল পরিস্থিতি। তখন সে দেখতে পেল, আগুনের মাঝখানে এক ছোট ছেলে আটকে পড়েছে। কেউ সাহস করে তার কাছে যেতে পারছে না।
কাক এক মুহূর্ত দেরি না করে পুকুরে উড়ে গেল, ঠোঁটে করে জল আনল, আগুনে ফেলে দিল। আবার গেল, আবার আনল। তার এই চেষ্টা দেখে কিছু মানুষ সাহস পেল। তারা বালতি নিয়ে এসে আগুন নেভাতে শুরু করল।
অবশেষে সেই ছেলেটিকে বাঁচানো গেল। সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
পরদিন সবাই কাকের প্রশংসা করতে লাগল। তারা বলল –
“যাকে এতদিন অবজ্ঞা করেছি, সেই-ই আজ আমাদের রক্ষা করল!”
টিয়া দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। সে খুব লজ্জা পেল। পরদিন সকালে সে কাকের কাছে এসে বলল –
“দাদা, আমি ভুল করেছি। তুমি সত্যিই মহান। আমি শুধু মুখে কথা বলি, তুমি কাজে দেখিয়ে দিলে।”
কাক মুচকি হেসে বলল, “শুধু বলা নয়, কাজে প্রমাণ করাই সত্যিকারের শিক্ষা।”
এরপর থেকে কাক ও টিয়া পরস্পরের ভালো বন্ধু হয়ে গেল। টিয়া শিখল শুধু কথা বললেই হবে না, কাজে লাগার মতো কথা বলা শিখতে হবে। আর কাক তাকে শেখাতে লাগল পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া।
---
গল্পের শিক্ষা:
কাউকে তার রঙ বা গলা দেখে বিচার করা উচিত নয়
বুদ্ধি, সাহস ও সহানুভূতি একজনকে সত্যিকারের মহান করে তোলে
কাজই আসল পরিচয়
ভুল বুঝলে তা মেনে নিয়ে নিজেকে সংশোধন করা উচিত
