The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

SOURITRA BANERJEE

Others

4.9  

SOURITRA BANERJEE

Others

এক দাদু ও তার নাতির কাহিনী

এক দাদু ও তার নাতির কাহিনী

6 mins
2.9K


    (১)

"দাদু আজ কে জিতবে বলো দেখি?"

সকালবেলায় দাদুর ঘরে বসে জলখাবার খেতে খেতে মুচকি হেসে ছোট্ট সৌর প্রশ্নটা ছুড়ে দিলো তার দাদুর দিকে। দাদু তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে আনন্দবাজারে খেলার পাতায় গৌতম ভট্টাচার্য্যের প্রতিবেদন পড়ছিলেন,

-'আজ বিকেলে সেঞ্চুরিয়ানের মাঠে ভারত পাকিস্তানের মহারণ'।

চোখ থেকে কাগজটা নামিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে নাতির কোর্টেই বলটা ঠেলে দিলো দাদু,

"তোর কি মনে হয়? কে জিতবে?"

সৌর বিজ্ঞের মতো বুক ফুলিয়ে জবাব দিলো, "অবশ্যই ইন্ডিয়া।"

-"কি করে বুঝলি দাদুভাই ?"

-"কেন তুমি কি ভয় পাচ্ছ নাকি দাদু?" ফোকলা দাঁতে হিহি করে হেসে উঠলো ছোট্ট সৌর।

-"ওয়াসিম, ওয়াকারের সঙ্গে শোয়েব আখতার ছুটে আসবে বল নিয়ে। চিন্তা তো হচ্ছে রে।"

-"ধুৎ দাদু! তুমি বড্ডো ভীতু। আমাদের শচীন,শেহবাগ আছে, আমাদের গাঙ্গুলী আছে, দ্রাবিড়,যুবরাজ আছে। দেখবে না সব মেরে উড়িয়ে দেবে।আর তারপর জাহির খান বল করে ওদের মাথা ভেঙে দেবে।"


ক্লাস ফাইভের নাতির এহেন উত্তরে দাদুও হেসে ফেললো।


-"কিন্তু দাদুভাই তোমার যে আগামীকাল অঙ্ক পরীক্ষা?"

আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সৌর, "দাদু কাল রবিবার। মাংস খাবার দিন। কাল নো এক্সাম। এক্সাম তো ৩ তারিখ।"


ক্যালেন্ডারের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিয়ে দাদু বললো, "আচ্ছা আজ তো শনিবার। তাহলেও মাত্র ১টাই দিন মাঝে দাদুভাই..."

দাদুর কথা শেষ হতে না হতেই সৌর'র বাবা ঘরে এসে ঢুকলেন, তিনি অফিসের জন্য তৈরী হচ্ছিলেন, এবার বেরোবেন। সৌর'র দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন,

"কিরে কতক্ষন ধরে খাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি পড়তে বস। আমি বিকেলে ফিরে এসে কিন্তু অঙ্ক করতে দেবো , মনে থাকে যেন।"

তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

"বাবা আমি আসছি। সৌরকে বেশি খেলা মাথায় ঢুকিও না তো, নাহলে পরশুর পরীক্ষা ওর গোল্লায় যাবে।"


সৌর'র বাবা অফিসে বেরোনোর পরে ছোট্ট সৌর গুটি গুটি পায়ে পাশের ঘরে গিয়ে মায়ের কাছে বসলো অঙ্ক কষতে। পরশু দিন তার ক্লাস ফাইভের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এবং প্রথম দিনেই অঙ্ক পরীক্ষা। তার নিজের অবশ্য সেসব নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা নেই। ক্রিকেটপাগল সৌর'র মন তো পড়ে আছে আজকের ভারত -পাকিস্তান মহারণের দিকে।

আর এদিকে ক্রিকেট-নেশাড়ু দাদুকেও তো আজ ঘিরে ধরেছে ভারত-পাকিস্তান মহারণের উত্তেজনা! কাগজ থেকে চোখ না উঠিয়েই দাদু শুনতে পেলো পাশের বাড়ির টিভিতে ষ্টার আনন্দে খেলার খবর শুরু হয়েছে-


"আজ ১লা মার্চ, শনিবারে আরও একবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। সেঞ্চুরিয়ানের মাঠে আজ ভারতীয় সময়ে সাড়ে ৫টায় শুরু হবে এই দ্বৈরথ। ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী নাকি পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিস-কে মারবেন বাজি? বিশ্বকাপে পাকিস্তান এখনও ভারতকে হারাতে পারেনি। ভারত কি পারবে আজ জিততে?..."

           

                       (২)

দুপুরে খেয়ে উঠে একটু চোখটা লেগে গেছিলো দাদুর। টিভি চলার শব্দে ঘুম ভেঙে দাদু দেখে ঘড়িতে ৬টা বাজতে যায়। নাতি ঠিক সময়ে টিভি খুলে টিভির সামনে নাক সাঁটিয়ে বসে আছে।


-"এই দাদুভাই, অত সামনে থেকে টিভি দেখতে নেই, চোখটা খারাপ হবে, এদিকে আয় আমার কাছে এসে বস।"

একলাফে সৌর ধমাস করে দাদুর বিছানায় উঠেই বলে উঠলো,

"দাদু পাকিস্তান আগে ব্যাট করছে দেখেছো? ওই সঈদ আনোয়ার বেটা খুব মারছে !"

দাদু চশমাটা চোখে দিয়ে দেখে, সত্যিই তো, পাকিস্তান ভালো শুরু করেছে। তখুনি সৌর চেঁচিয়ে লাফ দিয়ে উঠলো,"আআআউউউউট...."

জাহিরের বলে তৈফিক উমর বোল্ড। পাকিস্তান ১১ ওভারে ৫৮-১। আর তখনই গেটের আওয়াজ।


দাদু সৌরকে বললো,"নে খোল, তোর বাবা এলো।"

একটু মনটা খারাপই হয়ে গেলো সৌর'র। বাবা একটু দেরিতে এলে ভালো হতো। বাবা এসে গেল মানেই আর খেলা দেখা হবে না। পড়তে বসতে হবে।

পাশের ঘরে গিয়ে বইটা নিয়ে বসেও সৌর'র মন তো পরে টিভির দিকে। মা রান্নাঘরে।আর বাবা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হচ্ছে। তখনকারদিনে স্মার্টফোন থাকলে সৌর ক্রিকবাজ বা হটস্টার খুলে মোবাইল নিয়ে বসে পড়তো। কিন্তু তখন পাশের দাদুর ঘর থেকে ভেসে আসা টিভির ক্রিকেট কমেন্ট্রি-টাই একমাত্র ভরসা। তাও বাবা এসে ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে গেছে যাতে আওয়াজ কম আসে।কিন্তু দাদুকে কে সামলায়? একটা করে আউট হচ্ছে আর দাদু আনন্দে ও উত্তেজনায় হাততালি দিয়ে উঠছে, আর সৌর ছুটে যাচ্ছে কে আউট হলো দেখতে!

-"দাদু, ওই সঈদ আনোয়ারটা একটা দিকে খেলেই চলেছে গো। ওটাকে আউট করতে বলো না! গাঙ্গুলীকে বলো শেহবাগ-কুম্বলেকে বল না দিয়ে জাহির-নেহরাকে দিতে!"

দাদু ওইটুকু পুচকের এতো সুন্দর ক্রিকেট-বুদ্ধি দেখে খুব খুশি হয়েছিল।

-"দাঁড়া না, ঠিক আউট হবে বেটা।"


                                (৩)

পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৩ রান করে ইনিংস শেষ করেছে। আনোয়ার সেঞ্চুরি করে গেছে। দাদু তো মুখ গোমড়া করে বসে। এত রান তারা করে ওয়াসিম-ওয়াকার-আর শোয়েবকে সামলাতে কি পারবে ভারত? আবার এদিকে সৌরকে বাবা পাশের ঘরের দরজা বন্ধ করে অঙ্ক করাচ্ছে। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত ৯টা। ভারত ব্যাট করতে নেমেছে। একটার পর একটা অঙ্ক ভুল করছে সৌর আর বাবা যাচ্ছে রেগে, দিচ্ছে বকুনি। সৌর'র তো প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা! কে বোঝাবে বাবাকে যে সৌর এখন সেঞ্চুরিয়ানের মাঠে। শরীরটা এখন বন্ধ ঘরের মধ্যে থাকলেও তার মন তো ক্রিকেট মাঠে। 


শচিন আর শেহবাগ নেমেই কাট পুল আর ড্রাইভ লাগাতে শুরু করেছে। একটা করে বল বাউন্ডারি হচ্ছে আর দাদু হাততালি দিয়ে উঠছে, আর মনে মনে বলছে, আরে আজকের দিনে আমার দাদুভাইটাকে আর ধরে রাখিস না। আবার আপার স্কোয়ার কাট শচিনের, শোয়েবের বলে। এবার ছয়।


শেষে মা-ও এসে একটু বোঝাতে বাবা শেষমেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। এক দৌড়ে সৌর দাদুর বিছানায়। চোখ বড়ো বড়ো করে ছোট্ট সৌর চেঁচিয়ে উঠলো কিছুটা আনন্দে আর কিছুটা বিস্ময়ে,


-"এ কিগো? ভারত ৬ ওভারে ৫৫-২?"

দাদুও শুকনো গলায় উত্তর দিলো, "ভালোই মারছিলো বুঝলি, কিন্তু শেহবাগটা আউট হয়ে গেল আর পরের বলেই গাঙ্গুলিও।"

-"যাহ! এবার কি হবে? "

-"কাইফকে কে পাঠায় এখন বলতো ? দ্রাবিড়কে পাঠাতে পারলো না? গর্ধব গাঙ্গুলী.." বেশ রেগে দাদু চেঁচিয়ে উঠলো।

-"দাদু, দ্রাবিড় তো আজকাল পাঁচেই নাম।কাইফ ভালোই খেলবে দ্যাখো না। ন্যাটওয়েস্ট ফাইনাল মনে নেই দাদু? দ্রাবিড় আর যুবরাজ শেষে নেমে জেতাক না ..." দাদুকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলো সৌর, কথা শেষ হতে না হতে আবার বাউন্ডারি। এবার বোলার ওয়াকার ইউনিস। আবার আনন্দের সাথে সে বললো,

"দাদু, আজ তো শচিন রুদ্রমূর্তি ধরেছে গো! আজ শচিনই জিতিয়ে যাবে দেখো।" আনন্দে এক মুখ হাসি সৌর'র ।

-"হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে দাদুভাই। আজ মনে হচ্ছে আবার একটা শারজা-মরুঝড় দেখতে চলেছি!" এবার দাদুর মুখেও টেনশন উধাও। 


একটু পরেই একদিনের ক্রিকেটে ১২ হাজার রান পূর্ণ করলেন শচিন। কিন্তু তারপরেই শচিনের পায়ের পেশিতে টান ধরায় রানার হিসেবে শেহবাগ আবার মাঠে নামেন। উত্তেজনার পারদে গা সেঁকে নিতে একটু পরে বাবা-মাও চলে এসে বসে পরেছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে। ভারত এখন ১৭৭-৩। জয় থেকে মাত্র ৯৭ রান দূরে। শোয়েবের হাতে বল। শচিন ৯৮।

মা বলে উঠলো,


"শচিন ১০০-র কাছাকাছি এসে গেছে তো, টেনশন করছে। দেখ না পাকিস্তান এখন রান করতেই দিচ্ছে না শচিনকে।"

সবার চোখ টিভিতে আটকে। আবার একটা শরীর লক্ষ্য করে দুরন্ত গতিতে শর্ট বল। হুকটা ঠিকমতো হলো না শচিনের এবং পয়েন্টে ইউনিস খানের দুরন্ত ক্যাচ।

-"যাহ, বাঁধা সেঞ্চুরিটা মিস করলো!" আফসোসের সুরে বলে উঠলো দাদু।

-"ব্যাস এবার পাকিস্তান জিতে যাবে! " মজা করে সৌরকে রাগানোর জন্য বলে উঠলো বাবা।

কিন্তু সৌরকে ভয় দেখায় আজ কার সাধ্যি ? সে তো নিজেই প্রায় ব্যাট হাতে নেমে পড়েছে বলে। বাবার দিকে না তাকিয়েই সে বললো- 


"হ্যাঁ! এতো সোজা নাকি, এবার আমার ফেভারিট যুবরাজ আসছে। দেখবে কেমন ধুয়ে দেবে পাকিস্তানকে।"


ছোট্ট সৌর'র কথা বোধহয় সেদিন শুনতে পেয়েছিলো যুবরাজ সিংহ। এরপর আর একটাও উইকেট না খুইয়ে ২৮ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। যুবরাজ ৫৩ বলে ৫০ রান করে আর দ্রাবিড় ৪৪ রান করে দুজনেই অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ শেষ হয় প্রায় রাত সাড়ে ১২টা । বাবা-মা তো ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ছোট্ট সৌর দাদুর ঘরেই বসেছিল দাদুর সাথে। দুপুরেই সে মাকে বলে রেখেছিলো'


- "আজ রাতে কিন্তু আমি দাদুর সাথে শোবো আর খেলা শেষ হলে তবেই ঘুমোবো।"


সেদিন ম্যাচ জেতার পর দাদুর সাথে প্রায় রাত ২টো অবধি হৈ-হুল্লোড় করেছিল সৌর। ভারত ম্যাচ জেতার পরেই তিড়িং বিড়িং করে তার কি নাচ! প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সে নাচ চলেছিল! ৭৫ বলে ৯৮ রানের অমর ইনিংস খেলে সেদিন ম্যান অফ দি ম্যাচ নির্বাচিত হন শচিন টেন্ডুলকার। সেটা দেখার পরই ঘুমোতে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে, দাদুর কাছে আবদার সৌরোর - "দাদু, অ্যানুয়াল এক্সাম শেষ হলেই একটা এম আর এফ লেখা ব্যাট কিনে দিতে হবে আমায়!"


পুনশচঃ সেবার ভারত বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ভালোই ফল করেছিল সৌর। অঙ্ক পরীক্ষাও সে ভালোই দিয়েছিলো। আর পরীক্ষার শেষে সৌরোর দাদু তার আবদারও মিটিয়ে দিয়েছিলো।

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

More bengali story from SOURITRA BANERJEE