ব্রেকআপের পরে
ব্রেকআপের পরে
- ভেঙে পড়লেন কেন এতটা? মনকে শক্ত রাখুন, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
- যার মন থাকে সেই তো ভাঙে, শুধু যে নরম মন ভাঙে এমন তো নয়, শক্ত মনও ভাঙে।
- কিন্তু, তাই বলে এভাবে?
- ধরে নাও স্বভাবে।
- উত্তরটা এড়িয়ে যাচ্ছেন, আর মোটেই উচিত কাজ হয় নি এভাবে ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া।
- গুড়িয়ে গেলেই তো আর অস্তিত্ব মুছে যায় না, বরং ধুলার সাথে মিশে এক থেকে বহুর কাছে পৌঁছান যায় - আমিত্ব থেকে বহুত্বে পৌঁছনোর চেষ্টা বলতে পারো।
- উঠে দাঁড়াবেন না আবার? চেষ্টা করবেন নাএতটুকুও? ধুলায় মিশে থাকবেন নাকি বাকি জীবন?
- গুড়িয়ে গেছি বলে মন বিসর্জন দিই নি তো! খালি চোখে কি সব কিছু দেখতে পাওয়া যায়! বরং এই ভাল হল গুড়িয়ে গিয়ে - শরীর আর মন একাকার হল - আলাদা নয়। নিচ থেকে আকাশটা অনেক বড় দেখায়, তার বিশালত্বের কাছে আমি এক মানুষ - আমার একলার কাহিনী কত তুচ্ছ, সেটা টের পেতে শুরু করেছি।
- তাহলে আমরা যারা আপনার পাশে ছিলাম , তারা কীভাবে আপনার কাছে পৌঁছাব !
- মনের টানে, সত্যের টানে। দরকারে নয় - অনুভবে পৌঁছাবে।
- আপনি দেখতে চাইবেন আমাদের? বিশালত্বের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে আমাদের ভুলে যাবেন না তো!
- বহুত্বে একাত্ম হওয়া যায় না বলছ ! এক এক করে অনেকের সমষ্টির নামই বহুত্ব। বহুত্বের মধ্যে একের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় না, শুধু মনটাকে একটু বড় করে, কেবল একের দিকে না তাকিয়ে, অনেকের দিকে চোখ মেলে নতুন কত কিছু শিখে নিতে হয়। দৃষ্টি তো লুপ্ত হয় নি, অন্তর বজায় আছে - তাই দেখব তোমাদের - ধুলায় মিশে থেকেও।
- বড্ড ভয় করে আপনার কথা শুনে, কেমন যেন খুব দূরের মানুষ লাগছে আপনাকে এই ভেঙে পড়ার পর। আচ্ছা, মন ভেঙে গেলে মানুষকে কি সব হারাতে হয় , নাকি হারানোর পরে মন ভেঙে যায়!
- মানুষ যা হারায় তা হারানোর জন্য নির্ধারিত ছিল বলেই তা হারায়। একজন মানুষ যখন তার মনপ্রাণ জাগতিক অন্য একজনকে সমর্পন করে আর মনে করে যে এটাই চরম প্রাপ্তি তখন কিন্তু সেই মানুষ সম্পূর্ণ নয়, তবে সেই সময় সে তার অপূর্ণতা টের পায় না। যখন সেই সমর্পনের জায়গাটা সরে যায়, তখন ফাঁকা সময় ঘিরে ধরে চারপাশে আর মানুষের মন মুক্তি পায় - আর ঠিক তখন সে নিজের অপূর্ণতা উপলব্ধি করতে পারে। ভাঙন একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যা কিছু অপূর্ণতা তাকে পূরণ করার জন্যই তো এই ভাঙনের দরকার।
- আচ্ছা, আপনার মনে রাগ হয় না, ক্ষোভ হয় না? এই যে এতগুলো বছর পরস্পরের সাথে থেকেও এক অন্যকে বুঝতে পারলেন না, মনের মিল হল না দুজনের - বেরিয়ে আস্তে হল সম্পর্ক ছেড়ে ! কত সময়, কত চেষ্টা শেষমেশ নষ্ট হল। ওনার প্রতি আপনার অভিমান হয় না? কিছু বলতে ইচ্ছে করে না ?
- ছেড়ে তো আসতেই হয় সবাই কে একদিন - আগে অথবা পরে, স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক কারণে। ছেড়ে আসার কষ্ট কেন থাকবে না, অভিমান কেন থাকবে না ? তবে তাই বলে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখতে আর ইচ্ছে করে না। অতীতকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়াও করতে চায় না মন। যা কিছু স্মৃতি সেটা স্মৃতি হয়েই থাকে, তাকে আর আগামীতে টেনে আনতে চায় না মন।
- তাহলে কি আর কখনো বিশেষ কারুর সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবেন না ? চেষ্টা করবেন না একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবার !!
- স্বপ্ন খুবই অস্থায়ী, সেও তো ভাঙে - ঘুমের পরে। লোকে তবুও স্বপ্ন দেখে - না জেনে, না বুঝে দেখে আর ঘরও বাঁধে ! যেমন আমিও বেঁধেছিলাম। এখনও ঘর বান্ধব, কিন্তু দুজনের ঘর নয়; অনেকের ঘর - সবার ঘর। ধুলার ঠাঁই সর্বত্র, চাইলেও এড়াতে পারবে কি তাকে ? ?
- তাহলে আপনি এখন ভেঙে গুড়িয়ে ধুলায় মিশে যাওয়া বহুত্ববাদী ! এই আপনার পরিচয়।
- আমার একার নয়, এই আমাদের সবার পরিচয়। এর ঠিকানা কেউ আগে খুঁজে পায়, কেউ পরে। কেউ কেউ ছোট ছোট ভাঙনের পরে এই জীবনেই, কেউ কেউ একেবারে শেষ ভাঙনের পরে ফুলে ফুলে ঢেকে আগুনের তাতে শুদ্ধ হবার পর। এটাই সত্যি - চরম সত্যি এবং পরম প্রাপ্তি।