ভাঙনের শেষ পর্বে
ভাঙনের শেষ পর্বে


সবাই দেখল স্রেফ একটা ঝুলন্ত লাশ। সন্দীপ স্যার সুসাইড করেছেন।
******
স্থানীয় অভিভাকরা স্কুলটাকে ঘিরে রেখেছে। ক্রমাগত বিক্ষোভ চলছে। দুজন কনস্টেবল অদূরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে স্থানীয় দু একজন নেতাকেও দেখা গেল। সিভিক ভলেন্টিয়াররা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এস.আই ম্যাডাম আসবেন, এ.আই এমনকি ডি.আই স্যারেরও আসার কথা।
সন্দীপ স্যার।অবিবাহিত। বাবা মা মারা গেছেন। সপ্তাহের প্রথম থেকেই বেশ অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু কর্তব্য থেকে একটু সরবেন না। এ সপ্তাহে শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখান, ধরা পড়ে --দুটো কিডনিই নষ্ট । আজীবন নিজের সামান্য খরচা রেখে বাকিটা একটা অনাথ আশ্রমে দান করেন। ডাক্তারবাবু বলেছেন --"একটা ডোনার খুঁজুন আর বাইরে গিয়ে ভালো করে চিকিৎসা করান। চিন্তা করেন না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসম্ভব কিছুই না।না, উনি সে চিন্তা করেননি। উনি জানেন। কিন্তু এতগুলো টাকা! প্রাণের প্রিয় স্কুল! আর উনি মারা গেলে ওর উপর যারা নির্ভরশীল তাদের কি হবে। সারারাত মাথার মধ্যে কে যেন হাতুড়ি দিয়ে কয়লা ভেঙ্গেছে। সোমবার, ভোরের বাসে যথা সময়ে স্কুলে। ক্লান্তিতে বৃষ্টিতে ভেজা কাকের মতো চেয়ারে বসে ছিল। চোখগুলো সাতান্ন বছরের কংক্রিটের দেওয়াল ভেঙ্গে টেনে ধরছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটা ছবি সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। অজস্র লাইক, কমেণ্ট,শেয়ার। ভাইরাল।রাতের দিকে কয়েকটা টিভি চ্যানেলও। দেখি
পরদিন খবরটা ফলাও করে বেশ কয়েকটা নামী সংবাদপত্রে। স্কুলে উনাকে নিয়ে দুজন স্টাফ।স্কুলে এসে সন্দীপবাবু হতবাক। উনি আসতেই ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় বন্যার মতো চারদিক থেকে গালিগালাজ, দু একজন পাজ্ঞাবী ধরে টেনেও দিলো। কনস্টেবলদের একজন "ওই যে ঘুমন্ত জাহাজ এসেছে" বলে দুজনে কোনরকমে স্কুলে ঢুকিয়ে দিলো।স্কুলে আসতেই অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সী অন্য একজন সহকর্মী -- "স্যার আপনাকে কাল থেকে অনেক বার চেষ্টা করেছি ফোনে পায়নি...।" চোখে মুখে একরাশ উৎকন্ঠা দেখেও স্থিতিশীল সন্দীপবাবু-- "কেন কী হয়েছে?"
-- আপনি জানেন না! মানে কিছু শোনেনওনি!
--না তো। তুমিতো জানো এইবাসের মালিক আমার ছাত্র ছিল। তাই স্টপেজ না হলেও, আমায় স্কুলের সামনে ছেড়ে দেয়; যদিও আমি চাইনা-- হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি, আপনার সম্বন্ধেও সব জানি। অনেকের মতোই আপনি যে অনাথ বাচ্ছাকে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত পড়ানোর সব দায়িন্ত নিয়েছিলেন সেই অপূর্ব সরকার আমার ক্লাসমেট। উনি যতটা উত্তেজিত , সন্দীপবাবু ততটাই শান্ত--" তাই...অপূর্ব তোমার ক্লাসমেট?"
-- স্যার বাদ দিন। এদিকে কী হয়েছে জানেন?
-- না তো।কাল আমি একটু ব্যাস্ত ছিলাম। কিন্তু আমাকে নিয়েই কিছু সেটা আঁচ করতে পারছি।
-- আপনি তবু্ও এত শান্ত!
-- কারণ এটা আমার কাছে নতুন কিছু না...
-- স্যার সরাসরিই বলছি--আপনি নাকি কাল ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলেন। আপনি নাকি রোজ ঘুমান। ক্লাসের স্টুডেন্টরা নাকি বলেছে...
-- তুমি বিশ্বাস করো?
-- না।
--ছেলেদের সাথে কথা বলেছো? ওরা কী বিশ্বাস করে?
--না।
--ব্যাস। যাও ক্লাসে যাও। অনেক বেজে গেছে।