STORYMIRROR

Md Ariful Islam

Children Stories Children

4  

Md Ariful Islam

Children Stories Children

ভালো থেকো ফ্লোরা

ভালো থেকো ফ্লোরা

2 mins
1

সেপ্টেম্বরের ভোর। কুয়াশা মাখা সেই সকালে, যখন ঘড়ির কাঁটা ছয়টা পঁচিশ মিনিটে থেমে দাঁড়ালো, ঠিক তখনই আমার দাদার প্রাণ থেমে গেল। আমার বয়স তখন মাত্র ষোলো।


দুপুরে, পরিবারসহ, আমরা গ্রামে পৌঁছালাম। ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার ঢেউ আমাকে ঘিরে ধরল। চার বছর পর ফেরা, তাই কেউ আমাকে চিনতে পারল না। অথচ এক জোড়া ছোট্ট চোখ প্রথম দেখাতেই আমাকে চিনে ফেলল।


সে আমার ছোট কাজিন—তাবিয়া জান্নাত, যাকে আমি নাম দিয়েছি ফ্লোরা। বয়স মাত্র দশ, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট হলেও অদ্ভুত বুদ্ধিদীপ্ত, দুষ্টু, এবং একেবারে প্রাণবন্ত। ভাবছিলাম, এত ছোট সে হয়তো আমাকে চিনবে না, কথা বলতেও দ্বিধা করবে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আমার ধারণা ভেঙে পড়ল।


ফ্লোরা সারাদিন আমার সঙ্গী হয়ে উঠল। খেলার সাথি, বন্ধু—সবকিছুই। আমরা একসাথে রক-পেপার-সিজার খেললাম ষোল বার। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এর মধ্যে চোদ্দ বারই ও আমাকে হারাল। মাঝে মাঝে আমি যা করতাম, ও সঙ্গে সঙ্গেই নকল করত—আমাদের হাসি আর আনন্দ যেন অন্তহীন।

এক বিকেলে আমরা নদীর তীরে ঘুরতে বেরোলাম। ঈদগাহ মাঠে পৌঁছতেই ও বায়না ধরল— “ভাইয়া, তোমার কাঁধে উঠব।”

আমি ওকে কাঁধে তুলে কিছুক্ষণ ঘুরালাম। ছোট্ট এই ঘটনায় ওর মুখে ফুটে ওঠা উজ্জ্বল হাসি আজও চোখের সামনে ভাসে। শিশুসুলভ আনন্দ, যা হৃদয় স্পর্শ করে।

এরপর ঘটল আরেকটি মজার ঘটনা। আমাদের গ্রামে ছিল একজন হাফ-পাগল মানুষ, যার পোশাক ও অঙ্গভঙ্গি দেখে সবাই হেসে উঠত। আমি ফ্লোরাকে বললাম—

“যদি ঢাকায় আসো, তবে তোমাকে তিনটি গিফট দেব—একটা ঘড়ি, বেরুনের মতো পোশাক, আর সুন্দর ঝুটি বাঁধার ব্যান্ড।”

আমার কথা শুনে ওর হাসি যেন আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় মুহূর্ত হয়ে রইল।

কিন্তু আনন্দের দিনগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ৬ সেপ্টেম্বর, দাদার মৃত্যুর তৃতীয় দিনে আমাদের ঢাকায় ফেরা সিদ্ধান্ত হলো। যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, ওর মুখে আগের মতো উজ্জ্বল হাসি আর দেখা গেল না। কিছু না বললেও, তার চোখে ভেসে উঠেছিল এক দুঃখের ছাপ।

দুই দিনের সংক্ষিপ্ত এই সঙ্গ এত গভীরভাবে বেঁধে ফেলল যে ফিরে যাওয়ার সময় বুকের ভেতর হাহাকার জমে উঠল। মনে হচ্ছিল হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি। ছোট্ট বোনটা কিভাবে রেখে আসতে কষ্ট হচ্ছিল। শেষবার ওর দিকে তাকালাম, কষ্ট হবে বলে আর কথা বললাম না। এটাও বলতে পারিনি—

ভালো থেকো, ফ্লোরা।”


এই বিষয়বস্তু রেট
প্রবেশ করুন