Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Himangshu Roy

Drama

3  

Himangshu Roy

Drama

দাদু আর আমি

দাদু আর আমি

4 mins
11.9K


আজ হাটবার দাদু আর আমি বাজারে যাব। আমার দাদুর সাথে বাজারে যেতে খুব ভাল্লাগে। কত লোক আসে বাজারে ,আমি হাঁ করে চেয়ে থাকি। এইজন্য আমাকে সবাই বোকা ভাবে।সেদিন দেখলাম একটা মস্ত বড় লোক ইয়া বড় দু তিনটে চালের বস্তা একাই নিয়ে যাচ্ছে ,আমিতো একটা ছোট্ট চালের বস্তাই তুলতে পারি না । সেদিনচ চুপিচুপি তুলতে গিয়ে খুব ব্যাথা পেযেছিলাম আঙ্গুলে ,চালের বস্তাটাও পড়ে গিয়েছিল ।আমি তো পালিয়ে গিয়ে দিঘির ধারে বসে হাওয়া খাচ্ছিলাম,কেউ বুঝতেই পারে নি ।সকাল থেকেই বাজার যাব বলে হুটোপাটি করছি কিন্তু মামু যেতে দেবে না। আমিও গোমড়া মুখে বসে থাকলাম চুপ করে।দিদিমা মুড়ি দুধ কলা এনে দিল খাওয়ার জন্য ,আমিো জেদ করেছি যে আমাকে হাটে নিয়ে না গেলে আমি কিছু খাব না ।

-সনাতন খাবারটা খেয়ে নে দিদিমা বলল

-না আমি খাব না ।দাদুকে বল আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে ,তাহলে খাব

মামু বলল

- না না ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে না ।যে ভোঁদাই ছেলে বাজারে হারিয়ে দগেলে কি হবে ,সেদিন তো হারিয়ে গেছিলই, আমার এক পরিচিত দেখতে পেযেছিল বলে রক্ষে

আমি উচ্চস্বরে কান্না করতে শুরু করলাম

-আরে নিয়েই যাই না ,এত যেহেতু যাবার শখ।দাদু বলল

-দেখ বাবা নিয়ে যাচ্ছ যাও ,হারিয়ে গেলে তার দায়িত্ব কিন্ত তোমার

-আচ্ছা ঠিক আছে

-কিরে দাদু বাজারে কি হারিয়ে যাবি

-না দাদু,হারাব না

বলে ইয়া লাফ মেরে দিদিমার হাত থেকে খাবার নিয়ে খেতে লাগলাম,দিদিমা বলতে লাগল

-তোর দাদু তো সব কিছু ভুলে যায় আজ তুই বাজার করবি ঠিক আছে

-আচ্ছা দিদিমা,কি কি আনব?

-মাথায় দেওয়া তেল আনবি ,সাবান আনবি আর আয়না নিযে আসবি

-আগের হাটেই না আয়না এনে দিলাম দাদু বলল

-দুই হাট আগে এনেছিলা,তাছাড়া সেই আয়না কি আর আছে মাটিতে পড়ে ভেঙে যায় নি। আজ পাঁচদিন হল নিজের মুখ আয়নায় দেখি না।

-তোমাদের মেয়েদের একটী ব্যাপার বুঝি না ,তোমাদের কি চাওয়ার শেষ নেই আজ এটা নেই কাল ওটা নেই বলতেই তোমাদের জীবন শেষ।

দাদু বলল

এইশুনে দিদিমা চন্ডীর রুপ নিলেন আর দাদুও চুপ হয়ে গেলেন।

বিকেলবেলা ....আমি আর দাদু হাটে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি।মামু আগেই সাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে গেছে।দিদিমা দুটো পোষা মোরগ দিয়ে বলল এগুলো বেচে খরচপাতি নিয়ে আসিস,বাকি টাকার তুই যা ইচ্ছে হয় কিনে নিস

-আচ্ছা দিদিমা

দাদু আর আমি গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি ।কাঁচা রাস্তার উপর সদ্য পাথর ফেলা হয়েছে।রাস্তার ধারে সবুজ ঘাসেরা উঁকি দিচ্ছে।কিছু লোক রোয়া বুনতেছে।আমাদের পাশ দিয়ে একটা লোক ভ্যানে করে আলু নিয়ে যাচ্ছে,দাদু বলল

-কিরে শ্যামল ক বিঘে বুনলি?

-কাকা বুনলাম তো চার বিঘে এবার দেখা যাক ভগবান কি করেন

-ভালই হবে

-আচ্ছা কাকা ছেলেটা তোমার কি হয়?

-নাতি

-আচ্ছা দাদু নাতি মিলে আসো তাহলে ,আমি এগোই বলে লোকটা চলে গেল.

রাস্তাটা খুব এঁকেবেকেঁ তবে দূর থেকেই রাস্তার শেষপ্রান্ত দেখা যায।মনে হয় যেন কোনো বড্ডঅজগরের পেটের ভেতর দিয়ে হাঁটছি আর অজগরটা হাঁ করে বসে আছে।অজগরের হাঁ করা মুখটা যেন রাস্তার শেষপ্রান্ত

-দাদু ,আরে এই দাদু ,দাদুর কথায় সম্বিৎ ফিরল

একটা বড় লতানো গাছকে দেখিয়ে বলল

-এইখানে প্রনাম কর

আমিও টুক করে প্রনাম সেরে নিলাম বললাম

-দাদু আমাদের বাড়ির ঠাকুর তো টিনের চালের ভেতর থাকে ,এখানকার ঠাকুর বৃষ্টিতে ভিজে যায় না?

দাদু হাসতে থাকে

-দাদু ও দাদু বল না বৃষ্টিতে ভিজে এই ঠাকুরের জ্বর হয় না?

দাদু হাসছে

কাকা ও কাকা মুরগা দুইটা কততে দিবেন?

একটা লোক এসে মোরগদুটি ছিনিয়েই নিল প্রায়

দাদু বলল -দশ কুড়ি

- সাত কুড়ি হয় না লোকটা বলল

-না হবে না আমরা বাজারে বেচব বলে দাদু লোকটার হাত থেকে মোরগদুটি নিয়ে আমার হাতে দিল

-আচ্ছা দাদু দশ কুড়ি মানে কি আমি বললাম

- নামতা পারিস?

-পারি

-বলত কুড়ির নামতা বল

-কুড়ি এককে কুড়ি ,দুই কুড়ি চল্লিশ,তিন কুড়ি ষাট ,চার কুড়ি আশি ,পাঁচ কুড়ি একশো ....দশ কুড়ি দুইশ

-এইতো ভাল পারিস ,তার মানে দশকুড়ি কত টাকা বল তো?

-দুইশ

-এবার বুঝলি?

-হুম

-বাজারে গিয়ে দাম বলবি দশ কুড়ি আর আট কুড়ির নীচে দাম বলবি না বুঝলি?

-আচ্ছা দাদু

বাজারে পৌঁছালাম আজকেও অনেক লোক এসেছে।নদীর পাশে হাঁস মুরগির বাজার ।দাদু আর আমি সেখানে গেলাম।

কত রকমের মোরগ মুরগি সেখানে ,তার ইয়ত্তা নেই ,সাদা কালো বাদামি আরো অনেক রঙয়ের।কতকগুলো হাঁস দেখলাম আমার মত লম্বা ,দাদু বলল ওগুলোকো নাকি রাজহাঁস বলে।

শেষ পর্যন্ত আট কুড়ি টাকায় বিক্রি করলাম মোরগদুটোকে।তারপর দাদু আর আমি খরচাপাতি নিতে বড় রাস্তার দিকে চললাম।বড় রাস্তাটা বাজার থেকে অনেকটা উপরে, বালির বস্তায় পা রেখে উপরে উঠতে হয়।

-দাদু উঠতে পারবা ?আমি বললাম

-পারবো রে ,আমার হাতটা ধর বলে হাতটা এগিয়ে দিল দাদু। আমি আর দাদু একসঙ্গে উঠছি ।বড় রাস্তা আর দুই পা এগোলেই ,হঠাৎ দাদু র পা পিছলে গেল আর দাদু উপর থেকে গোত্তা খেয়ে নীচে পড়লেন ।

আমি চিৎকার করে উঠলাম -দাদু দাদু

কিন্ত নীচে দেখি দাদু নেই ,দাদু কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল

ঘামতে লাগলাম দরদর করে

একটা ধাক্কা হঠাৎ খেয়াল হল আমি বাসে বসে স্বপ্ন দেখছিলাম।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দাদুর চিতার পাশ দিয়ে যাচ্ছি।

দাদু ছিল আমার ছেলেবেলার গল্পকুটির,অজানা পৃথিবীকে কল্পনায় এনে দিত দাদু।সেই দাদু আজ আর নেই ,আজ ছয়বছর হতে চলল। আচ্ছা মানুষ কেন এত ক্ষীণকায়া হয়? কেনই বা ক্ষনিকের অতিথি হয়ে পৃথিবীতে আসে?

দাদুকে অনেক কিছু বলার আছে ,প্রশ্ন ফুরাবে না জানি । দাদুর সাথে দেখা হলে বলতাম

-দাদু আর একটিবার আয় না ক্ষণিকের অতিথি হয়ে কিন্ত কেউ ফিরে আসে না,কেউ না কেউ না।


https://kagjkalom.blogspot.com/2019/04/blog-post_78.html


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama