ক্ষুদ্র দান
ক্ষুদ্র দান
উফ্! আর পারা যায় না! এত রোদ আবার তার ওপর সকাল থেকে হেঁটে চলেছে রতন। তাও তো কিছুই মিললো না। কিছু চাইতে গেলেই সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় আবার তো কেউ বলে, " এইটুকু ছেলে এই বয়সে আবার ভিক্ষা করতে বেরিয়েছে! "
কিন্তু রতনও বা কি করবে! ওর জন্মের সময়ই তো ওর বাবা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। তার ওপর ওরা যেখানে থাকে ওখানে সবাই ভিক্ষা করেই পেট চালায়। তাই ওর মাও সেটাই করে। আবার এখন আরো বেশি পাবার আশায় রতন কেও একই কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। রতনের একটুকু ভালো লাগেনা, সে চায় সে পড়াশোনা করবে অনেক বড় মানুষ হবে! কিন্তু মাকে কে বোঝায়! মা শুধু বলে যে ওরকম বড় মানুষ হতে গেলে বড়লোক হতে হয়। রতনও আর কিছু বলে না।
সকাল থেকে হেঁটে-হেঁটে পা ব্যথা হয়ে যাওয়ায় ফুটপাতের পাশেই বসে পড়ে সে। হঠাৎ সে দেখতে পায় তার থেকেও ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে ফুটপাতের পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার যাত্রীদের থেকে সেও রতনের মত ভিক্ষে চাইছে। কিন্তু কেউ যেন তাকে দেখতেই পায় না। উপেক্ষা করে চলে যায় সবাই। হঠাৎ রতনের কি খেয়াল হলো, সে তার পকেট থেকে পাঁচ-ছয়টা কয়েন তুলে নিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে। আর তার হাতে সে কয়েন গুলো রেখে দিলো। আর সেই ছোট্ট মেয়েটা ছোট্ট করে গ্লানির হাসি উপহার দিলো রতনকে। রতন বুঝতেই পারল না যে এই হাসির মধ্যেই তার নিজের চোখেই কখন জল এসে হাজির। আজ রতন উপলব্ধি করলো যে চাওয়ার লজ্জার থেকে দেওয়ার আনন্দ কতটা দামি।
এত ক্ষুদ্র দানের বিনিময়ে যে বিশাল আনন্দের মুহূর্ত পাওয়া যায় সেটা রতন কোনোদিন ভাবতেই পারেনি।