Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Sagarika Bhanja

Romance Tragedy Others

3  

Sagarika Bhanja

Romance Tragedy Others

নজরুল সহধর্মিণী দুখিনী প্রমীলা

নজরুল সহধর্মিণী দুখিনী প্রমীলা

4 mins
12.1K



ভালোবেসে সবার অমতে ধর্মীয় বাধা লঙ্ঘন করে বিয়ে করেছিলেন নজরুল ইসলামকে।তাঁর একমাত্র পরিচয় তিনি নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমীলা। এই নামটি আমাদের বিদ্রোহী কবি নজরুলের দেওয়া। আসল নাম আশালতা সেনগুপ্ত। ডাক নাম দোলন।বড়োরা সবাই আরো ছোটো করে ডাকতেন দুলি।

তিনি ছিলেন তাঁর পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী গিরিবালা দেবীর সন্তান। খুব অল্প বয়সে তিনি পিতাকে হারান।তারপর মা-মেয়েতে কাকার সংসারেই থাকতেন।লেখা পড়াতে ভালো ছিলেন। বড়ো হয়ে কয়েকটি কবিতাও লিখেছিলেন, গানও গাইতেন ভালো। 

যখন তিনি মাত্র তেরো বছরের কিশোরী তখন কয়েক দিনের জন্য নুরুদা ওরফে নজরুলের আবির্ভাব তাঁদের কান্দিপাড়ের বাড়িতে। তারপর নজরুল দৌলতপুরে চলে যান।কয়েক মাসের মধ্যে খবর এলো,নজরুলের বিয়ে।বিয়েতে দুলিরাও গিয়েছিল। কিন্তু বাসর হওয়ার আগেই ঘরজামাই থাকতে হবে এই শর্তের কথা জানতে পেরে বাঁধন ছাড়া নজরুল বিয়ে ভেঙে দেন।এরপর নজরুলের সাথে নার্গিসের দেখা ১৫ বছর পর।তখন তাদের আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এবং কবি আজিজুল হকের সাথে নার্গিসের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়।


‌কবি তাঁর 'ছায়ানট,পুবের হাওয়া,চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের অনেক কবিতা নার্গিসকে কেন্দ্র করে রচনা করেন।

নজরুলের গান,কবিতা,গল্প,বিদ্রোহ... আমাদের কাছে বিখ্যাত, কিন্তু নজরুল অসম্ভব সুন্দর মোহনবাঁশি বাজাতেন। সেই বাঁশির সুরেই মুগ্ধ হয়ে নার্গিস নজরুলের প্রেমে পড়ে ছিলেন।


সে যাক,নজরুল বাসর ভেঙে চলে গিয়েছিলেন দৌলতপুর থেকে কুমিল্লায় সেই রাতেই। পরের দিন কান্দিরপাড়ে চলে যান।সেখানে দুদিন থাকার পর কলকাতায় কাজের ডাক এলে কলকাতায় ফিরে যান।

এই দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই নুরুদা ওরফে নজরুল একেবারে মুষড়ে পড়েন।


এরপর মাঝে মাঝেই কলকাতা থেকে তিনি কান্দিরপাড়ে বেড়াতে আসতেন।এলে দুলির সাথে দেখা হতো।দুলির অর্থাৎ আশালতার তখনও চৌদ্দ বছর বয়স হয়নি। তাঁর জন্ম ১৩১৫ সালে ২৭-শে বৈশাখ। সেই কিশোরীর চোখে চোখ রেখে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন নুরুদা।তিনি একদিন দুলিকে একটি কবিতা উপহার দেন--"হে মোর রানী তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে "। সেবার কবি অনেকদিন কান্দিরপাড়ে থেকে গিয়েছিলেন।হিন্দুরা কুৎসা রটাতে শুরু করলে আবার কলকাতায় ফিরে যান। এরপর তাদের আবার দেখা হয় দুলির মামাবাড়ি সমস্তিপুরে।এরপর একদিন কবিতায় কি একটা লেখার অভিযোগে গ্রেফতার হন নজরুল। এক বছরের জেল হয় নজরুলের। ছাড়া পান পরের বছর (১৯২৩)।


 দুলি অপেক্ষা করেই থাকে।দেখা সাক্ষাৎ হয় কখনো কখনোও। এরপর স্হায়ীভাবে তাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। তাদের বিয়ে হয় পঁচিশে এপ্রিল(১৯২৪)।তারপর মাকে নিয়ে দুলি স্বামীর সাথে কলকাতায় চলে আসে।বিদ্রোহী কবি নিজের স্ত্রীর নাম রাখলেন প্রমীলা। কবিকে বিয়ে করার জন্য দুলির পরিবারের কেউ মেনে নিলেন না ওদের।বিয়েতে অনেক আইনের বাধাও ছিল।কারণ তখন আশালতার ষোলো বছরই পূর্ণ হয়নি।যাক বিয়ের পর আশালতা কতটা সুখী হয়েছিলেন জানা যায়নি।কারণ যে কটি তাঁর ছবি পাওয়া গেছে তাতে কোথাও বিন্দুমাত্র হাসির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।নজরুল তাঁকে কোনো কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গও করেননি।তবে 'দোলনচাঁপা' কাব্যগ্রন্থটি আশা করা যায় তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত। কারণ তাঁর ডাক নাম দোলন ছিল।


 তাঁর প্রথম সন্তান মারা যায় মাত্র চার মাস বয়সে।দ্বিতীয় সন্তান বুলবুলও মাত্র মাত্র তিন বছর বয়সে আকস্মিক ভাবে মারা যায়।কবির কাছে গান বাজনার জগৎ, কবিতার জগৎ,কল্পনার জগৎ ছিল। প্রমীলার কোনো বাইরের ও সামাজিক জগৎ ছিলনা,শুধু অন্তর্লোক ছিল। 


 সন্তান জন্মের পর দরিদ্র সংসারের খরচ আরো বেড়ে যায়।নজরুলের একমাত্র আয় ছিল কবিতা।তাতে সংসারের খরচ ঠিক মতো চলতো না।বিয়ের আগে যে সংসারে তিনি মানুষ হয়েছিলেন সেখানে এত দুঃসহ দারিদ্র্য ছিলনা।অনেক দিন প্রমীলাকে এ সংসারে অনশনে কাটাতে হয়েছে। নজরুলের বেহিসাবি জীবনযাত্রা তাঁকে আরো অনশনের মধ্যে ঠেলে দেয়।গান শেখাতে গেলে সেখানেই আহার নিদ্রা সেরে নিতেন।স্বামীর হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ায় প্রমীলাকে কত বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে। ফুটবল খেলতে গিয়ে সোজা কলকাতা আর সেখান থেকে ঢাকা চলে যেতেন।এই রকম উচ্ছ্বলতা,দায়িত্ববোধহীনতা স্ত্রীর পক্ষে যে কতটা যন্ত্রণা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতো তা কল্পনাতীত। মা গিরিবালা দেবী না থাকলে কি হতো যে কে জানে।


একেবারে প্রথম দিক ছাড়া স্বামীর ভালোবাসা তিনি কতটা পেয়েছিলেন সন্দেহ আছে। নজরুল ছিলেন প্রেমের কবি।অনেক নারীর সান্নিধ্যে এসেছিলেন তিনি এবং তাদেরকে তাঁর ভালোও লেগেছিল। ভালোও বেসেছিলেন কাউকে কাউকে। তাদেরকে নিয়ে তিনি অনেক গান কবিতা লিখেছেন। তিনি দুলিকে নিয়ে হয়তো কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু প্রমীলাকে নিয়ে কোনো গান বা কবিতা লেখেননি। 


এরপর ১৯৩০-৩১ সাল থেকে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এলো ক্রমশ। গ্রামফোন কোম্পানির জন্য গান লেখা, সুর দেওয়া,আবার সেই গান গায়ক-গায়িকাদের শেখানো বাবদ নজরুল অনেক টাকা পেতেন।বেতার ও মঞ্চের সাথেও তাঁর যোগাযোগ হয়।এই সময় তিনি একটি বড়ো গাড়িও কেনেন।

ঠিক এর পর থেকেই কবির বেহিসেবী বিলাসিতা ও অপরিমেয় অর্থব্যয় থেকে সংসারে আবার কালো মেঘ ঘনায়।১৯৪০ সাল আসার আগেই তিনি নিঃস্ব হয়ে যান।

১৯৩৮ সাল থেকে এক কঠিন অসুখ (ট্রান্সভার্স মাইঅলাইটিস)প্রমীলা দেবীর নিম্নাঙ্গে পক্ষাঘাত হয়।মা গিরিবালা ও স্বামী নজরুল তাঁর খুব সেবা যত্ন করেন।চিকিৎসা চলতেই থাকে, তবুও তিনি সুস্থ হননি।প্রমীলার দুঃখের জীবন চলতেই থাকে দুর্ভোগ আর অনিশ্চয়তার অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৪২ সালের গোড়ার দিকে রোগাক্রান্ত হলেন নজরুল। এই রোগে জুলাই মাস থেকে তাঁকে বাকরুদ্ধ ও অপ্রকৃতস্থ করে দেয়।এই সময় গিরিবালা দেবী খুব যত্ন করেছিলেন মেয়ে জামাইয়ের। এরপর হঠাৎই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান।কি দুঃসহ পরিবেশে প্রমীলা তাঁর অসুস্থ স্বামী ও দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে দিনযাপন করেছেন তা ঈশ্বরই জানেন।


এভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর। তারপর দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন প্রমীলা মারা যান।তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে। তাঁর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর কবরের পাশে জায়গা রাখা হয় তাঁর স্বামীর জন্য। প্রমীলা মৃত্যুর পরেও প্রতীক্ষা করে থাকেন তাঁর স্বামীর পাশেই থাকবেন।

১৯৭২ খ্রীস্টাব্দে ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে ফিরিয়ে আনা হয় বাংলাদেশে সপরিবারে। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে।

১৯৭৬ সালে নজরুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মসজিদের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।প্রমীলার সমাধির পাশে তাঁকে আর আনা গেলনা।প্রমীলা মৃত্যুর পরেও স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।কিন্তু হায় সে দেশে রয়ে গেলেন স্বামী আর দেশে প্রমীলা একা আজও হয়তো স্বামীর অপেক্ষায়। 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance