Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Snigdha Jha

Inspirational

3.5  

Snigdha Jha

Inspirational

জীবনমরুর প্রান্তে

জীবনমরুর প্রান্তে

7 mins
2.2K


"বাবা, মা কেমন আছেন?" 

"তুই একবার এসে দেখে যা। বারবার তোর কথাই বলছেন।"

"কিন্তু,এখন তো কোনমতেই সম্ভব হচ্ছে না,বাবা। একটা ইম্পর্ট্যান্ট প্রজেক্ট নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত আছি। তাছাড়া, তোমার জামাইও নিজের কাজে পাশের শহরে গেছে কয়েকদিনের জন্য। মাকে বোঝাও একটু।" 


চুপ করে থাকেন শেখরবাবু। মেয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে টুকটাক আরও দু/ চারটে কথা বলে ফোন কেটে দিল। তাঁরও আর কথা বাড়াবার বিশেষ আগ্রহ ছিল না। স্ত্রী শর্মিলা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ হয়ে প্রায় শয্যাশায়ী। একমাত্র মেয়ে বিদেশে চাকরীসূত্রে গিয়ে সেখানেই থেকে গেছে তিনবছর হয়ে গেল। একবছর পরই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল তাদের। জামাই তার থেকে বছরখানেক আগে সেখানে গেছিলো চাকরীতে ট্রান্সফার হয়ে। এখন তাঁর মনে হয় না যে তারা আর দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েও একবার দেখে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারে নি সে,এটা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি। অথচ এই মেয়েই মাকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারতো না। শর্মিলাও প্রচণ্ড মিস করছেন মেয়েকে। চাপা স্বভাবের জন্য স্বামীর কাছে তাঁর মনোভাব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও শেখরবাবু সেটা ভালোই বুঝতে পারেন।


"ঝিমলি ফোন করেছিল বুঝি?" বারান্দা থেকে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞেস করেন শর্মিলা। 

" হ্যাঁ...", বলেই একটা বই শেল্ফ থেকে টেনে নিয়ে জানালার পাশে রাখা ইজিচেয়ারে বসে বইয়ের পাতায় মুখ ডোবান শেখরবাবু। এই মুহূর্তে শর্মিলার মুখোমুখি হতে চান না তিনি। অনেক চিকিৎসার পরও শর্মিলা কিছুতেই সুস্থ হয়ে উঠছে না। ডক্টরের কথায় পেশেন্ট মানসিকভাবে চাইছেন না যে তিনি সেরে উঠুন। বাহ্যিক ওষুধের সঙ্গে সেটাও অত্যন্ত জরুরী। তাই ঝিমলির এখানে আসার ব্যাপারে এই এড়িয়ে যাওয়া সুর শর্মিলার কানে দিতে চান না তিনি, একেবারেই ভেঙে পড়বেন তাহলে।

তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তরে এবং হাবভাব দেখে আর কিছু না বলে শর্মিলা পাশ ফিরে চোখের জল লুকোবার চেষ্টা করেন। মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য বুক হু হু করে ওঠে। তিনি যেন আভাষ পাচ্ছেন যে আর বেশীদিন সময় তাঁর হাতে নেই। মেয়ের সাথে বুঝি আর দেখা হোলো না।

ঘড়ির দিকে তাকান শেখরবাবু... সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। ইদানীং রোজকার অভ্যেস যেন অ্যালার্ম দিয়ে তাঁর মগ্নতা ভাঙায়। শর্মিলাকে ওষুধ দেওয়ার সময় হয়েছে। মনের অস্থিরতা চাপা দেওয়ার জন্য বইটার আশ্রয় নিয়ে ধীরে ধীরে তাতেই মগ্ন হয়ে গেছিলেন তিনি। শর্মিলার কাছে এসে ধীরে মাথায় হাত ছোঁওয়ালে তিনি দু' চোখ মেলে তাকান ,চোখে হতাশার ঘন ছায়া। বুক মুচড়ে ওঠে তাঁর। 

" ওষুধ খেয়ে নাও। রাতের খাওয়ার সময়ও হয়ে এসেছে। এখানেই নিয়ে আসি দু'জনের খাবার।" 

খাবার গরম করে নিয়ে টি-টেবিলটা বিছানার কাছে টেনে আনেন। শর্মিলাকে উঠিয়ে পেছনে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেন, নিজে উঠে বসার ক্ষমতা টুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। চামচ দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকেন। আজ শর্মিলার খাওয়ার আগ্রহ নেই। কয়েক চামচ খেয়েই জলের গেলাসের দিকে হাত বাড়ান। ওনাকে খেয়ে নিতে বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়েন।


"না, তোমায় যেতে হবে না", জেদ ধরে ঝিমলি।

"সে কি রে! তোর বাবা তো রয়েছেন। মায়ের শরীর ভালো নেই, আমায় দেখতে চাইছেন। বুড়ো হয়ে গেছেন... কবে আছেন কবে নেই...। আমি তো আজ যাবো আর কাল বিকেলেই ফিরে আসবো। একটা দিনের তো ব্যাপার। তোর পরীক্ষা না থাকলে তোকে সাথেই নিয়ে যেতাম।" 

" কিন্তু, তুমি তো জানো মা যে তোমায় ছেড়ে একদিনও আমি থাকতে পারি না...মনখারাপ করে।"

" ওহ্, পাগলী একটা", জড়িয়ে ধরতে যান মেয়েকে শর্মিলা, "তোকে ছেড়ে আমিই বুঝি থাকতে পারি...", স্নেহে ছলছল করে ওঠেন তিনি।ঝিমলিকে ছুঁতে পারছেন না কেন... কাছেই তো রয়েছে... কিন্তু হাত বাড়ালেই মনে হচ্ছে যেন কত দূরে...ধরা ছোঁয়ার বাইরে! "ঝিমলি, কাছে আয় মা....... হাতটা বাড়া দেখি....."


পাশের খাটেই শোন শেখরবাবু। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে একেবারে চা বানিয়ে নিয়ে এসেই শর্মিলাকে ওঠাতে যান। একটা হাত অসহায় ভাবে এলিয়ে খাটের থেকে নীচে ঝুলছে। আলতো করে হাতখানি নিজের হাতে নিয়ে উঠিয়ে দিতে গিয়েই চমকে ওঠেন, এত ঠাণ্ডা কেন! পালস্ দেখতে গিয়ে তার নীরবতা তাঁকে স্ট্যাচু করে দেয়,আর বুঝি নড়তেও পারবেন না। এত তাড়াতাড়ি কিছু না বলেই তার শান্ত স্বভাব অনুযায়ী চুপচাপ চলে গেলেন শর্মিলা। 


"হ্যালো মামণি...." গলার স্বর আটকে যাচ্ছে... মেয়েকে কন্ট্যাক্ট করেন। জামাই সুদীপ্ত রিসিভ করে। খবর শুনে নিরুত্তাপ সুরে জানায় যে ঝিমলি একটু বাইরে গেছে,ফিরলেই তাকে কলব্যাক করতে বলবে।

ফোন পাশে রেখে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন শেখরবাবু। কতক্ষণ এভাবে বসেছিলেন খেয়াল করেন নি...ফোনের রিং শুনে যেন জেগে ওঠেন। 


"বাবা, হঠাৎ করে এমনভাবে মা চলে যাবেন ভাবিনি। যাইহোক,তুমি যা করণীয় করে নাও। জানি একা তোমার কষ্ট হবে, কিন্তু ভিসা টিসা এসব অনেক ঝামেলা পুরো করে যাওয়া মুশকিলই এখন। সাবধানে থেকো," ওদিক থেকে ঝিমলির আবেগহীন স্বর ভেসে এলো। 

শেখরবাবু ফোন সুইচ অফ করে দিলেন। 

এখানে কাছাকাছি কোন নিকট আত্মীয় নেই তাঁর। তাছাড়া,তিনি সবার সাথে বিশেষ মেলামেশাও করতে পারতেন না।চাকরী জীবনে অফিস আর বাড়ীর গণ্ডীতেই সীমাবদ্ধ থাকতেন। শর্মিলাই যা সবার সাথে মিলেমিশে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতো। রিটায়ার করার পর নিজের তৈরী ছোট্ট লাইব্রেরীতে সময় কাটানো এখন তাঁর প্রিয় শখ। অবশ্য সোশ্যাইটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও তাদের চাঁদা দিতে কার্পণ্য করতেন না। আজ এই বিপদের দিনে ক্লাবের ছেলেরা পরমাত্মীয় হয়ে সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল। 


"কি গো,বই মুখের সামনে রেখে কি ভাবছো? পড়ছো বলে তো মনে হচ্ছে না! "

"তুমি কি ভাবে বুঝলে যে না পড়ে এমনি এমনি কিছু ভাবছি!" 

"বাহ্ রে.... আমি তোমায় বুঝবো না তো কে বুঝবে! বড্ড একা হয়ে পড়েছো, তাই না? মেয়েও তো পর হয়ে গেছে সবদিক দিয়ে। একটা খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করে না, দেখে যাওয়া তো দূরের কথা! আমি সব বুঝতে পারতাম, কেবল তুমি যাতে কষ্ট না পাও তাই চুপ করে থাকতাম। কোন ডিস্কাসনে যেতাম না। আমার একটা কথা রাখবে, প্লীজ?" 

"তোমার কথা রাখি নি এমন হয়েছে কি কখনও! কিন্তু,ওই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কথা কেন বলছো, কাছে এসে বসো না। " 

মিষ্টি হেসে একটু চুপ করে থেকে আবার বলেন শর্মিলা, " তুমি প্রমিস করো আগে যে, আমি যা বলবো তাই করবে তুমি"।

"এখন এই বুড়ো বয়সেও অবিশ্বাস... প্রমিস করতে হবে! " হেসে তাকান শেখরবাবু স্ত্রীর দিকে।

"তাহলে তুমি আর একটা বিয়ে করে ফেলো। তোমার কষ্ট দেখে আমি মুক্তি পাচ্ছি না। মনে রেখো, কথা দিয়েছো।" 

"মুক্তি! " চমকে তাকান তিনি.....ঘুম ভেঙে উঠে বসেন বিছানায়।


জানালার দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখান দিয়ে চাঁদের আলো এসে তাঁর সারা শরীরে মায়াময় স্নিগ্ধতায় ছড়িয়ে পড়েছে। স্বপ্ন ছিল.... বিশ্বাস হচ্ছে না যেন! স্বপ্নের প্রতিটি কথা তাঁর মাথায় রিনরিন করে বেজেই চলেছে এখনও। প্রায় দু'বছর হতে চললো শর্মিলা আর নেই। তিনি কিন্তু সবসময় তাঁকে পাশেই অনুভব করে এতগুলো দিন কাটিয়ে দিলেন। তাঁর এখন বাহাত্তর আর পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন শর্মিলা। স্ত্রীর এই অকালে চলে যাওয়াতে ভেঙে পড়েছিলেন বেশ। সময় ধীরে ধীরে সইয়ে দিচ্ছে সব। তবে শারীরিক অক্ষমতা থাবা বসাতে শুরু করেছে। পাশে টেবিলে রাখা জাগ থেকে একগ্লাস জল ঢেলে খেয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। চারিদিকে যেন একটু আগে বলে যাওয়া শর্মিলার কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিছানায় এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ভাবতে থাকেন তাই নিয়ে। কখন ঘুম এসে যায় এর মধ্যে।


সকালে উঠেও কাল রাতের স্বপ্নের কথারা মাথায় নড়েচড়ে বেড়াতে থাকে। তাঁকে এ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। টেবিলে বসে কাগজ -কলম টেনে বিজ্ঞাপনের একটা খসরা বানিয়ে ফেলেন, " কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত বাহাত্তর বর্ষীয় বৃদ্ধের জন্য অনুর্দ্ধ পঞ্চাশের পাত্রী চাই। ইচ্ছুক ব্যক্তি নিম্নলিখিত নাম্বারে অথবা ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।"


পরের দিনের নিউজ পেপারে বিজ্ঞাপন বেরোনোমাত্র ফোনকলের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো। কখনও অভিভাবক, কখনও বা পাত্রী নিজেই ফোনে উৎসুকতা জাহির করতে লাগলো। বিকেলের দিকে এলো মেয়ের ফোন। এতদিনে বাবাকে মনে পড়ার কারণ বুঝতে না পেরে রিসিভার ওঠান শেখরবাবু।


" তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?!" সুনামী এসে আছড়ে পড়ে ওদিক থেকে। 

" কেন, তোর হঠাৎ একথা মনে হচ্ছে কেন?" সংযত সুরে প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

" আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে এক্ষুণি খবর পেলাম যে তুমি নাকি বিয়ের জন্য অ্যাড দিয়েছো নিউজ পেপারে! তাও আবার অল্পবয়সী মেয়ে চাই তোমার! কেন বলতে পারো? আর আমি কি তোমার কেউ নই? এখন তো যে তোমায় বিয়ে করবে তোমার সম্পত্তির লোভে করবে, সেটা ভেবে দেখেছো? আর নিউজ পেপারে অ্যাড দিয়ে এই বয়সে বিয়ে, ধন্যি করলে তুমি! আমার শ্বশুরবাড়িতে আর মুখ দেখাবার উপায় রইলো না।"

"আমার শরীর আর চলছে না। একা থাকার সাহস হারিয়ে ফেলছি, মামণি। তাই এই ডিশিসন নেওয়া।"

"একা থাকতে অসুবিধে হচ্ছে তো বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকতে পারো। আজকাল তো সবরকমের সুবিধে থাকে সেখানে। এদেশে তো সবাই তাই করে।" 

"তাহলে ধৈর্য ধরে আমার কথা শোন, প্রত্যেকটা পয়েন্ট ভেবে দেখিস", এবার কঠোর হলেন তিনি, 


(১) আলাদাভাবে তোর প্রাপ্য তোর নামে রেখে দিয়েছি,চিন্তা করিস না।

(২) অল্পবয়সী মেয়ে চাই এইজন্য যে সে আমার সেবাসুশ্রুষা আমার শেষসময় পর্য্যন্ত করে যেতে পারবে। বিয়ে মানেই সবসময় শরীরের মিলন নয়,মনের মিলনটাই আসল। আর তার জন্য চাই একটা ভালো মনের মেয়ে। বয়সের ডিফারেন্স এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এইজন্য আমায় ভালোভাবে বেছে নিতে হবে সঠিক মেয়েটি। আমি দীর্ঘদিন একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরী করেছি, মানুষ পরখ করার ক্ষমতা আমার ভালোই আছে মনে করি। 

(৩) তুই বলতে পারিস যে, একটা সবসময়ের জন্য কাজের মেয়ে রেখে নিলেই হয়। কিন্তু, আজকাল নানারকম শুনছি। অকারণ বদনাম রটতে পারে। বিয়ে করে নিলে সে ভয় থাকবে না।

(৪) বৃদ্ধাশ্রম মন্দ নয়, কিন্তু তাদের নিশ্চয় কিছু নিয়মশৃঙ্খলা থাকবে, তা মেনে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুই তো জানিস আমি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ, শেষজীবনে আর সেটা পোষাবে না।


ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ শুনে ফোন কেটে দেন শেখরবাবু। প্রিয়তমা শর্মিলাকে স্বপ্নে হলেও কথা দিয়েছেন। তাছাড়া,নিজের জীবনে ব্যক্তিগত সমস্ত ডিশিসন তিনি বরাবর দৃঢ়ভাবে নিজেই নিয়ে এসেছেন, আজও তার ব্যতিক্রম হবে না। 

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational