Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer
Become a PUBLISHED AUTHOR at just 1999/- INR!! Limited Period Offer

Darshan Sahoo

Romance Fantasy

0.6  

Darshan Sahoo

Romance Fantasy

অপুর প্রেম

অপুর প্রেম

4 mins
10.3K


কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমাদের অপু, ভালো নাম অপূর্ব রায়৷ আজ সে লোকাল প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছে। না, খুব বেশি দিন নয়, দু-তিন মাস হলো সে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। বয়সটা ঠিক কত তা অবশ্য জানা নেই, তবে আন্দাজ ছাব্বিশ সাতাশ এর বেশি হবেনা। চাকরিটা পেতে না পেতেই অপুর বাবা মা ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্রীর সন্ধানে নেমে পড়েছেন, যদিও তাতে অপুর চরম আপত্তি। তবে এই নয় যে বাবা-মা বিয়ে নিয়ে তাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না, কিংবা অপুর নিজেরই ওবিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই; আসল ব্যাপার হলো গে গত সাত-আট বছর ধরে অপু একটি মেয়েকে ভালোবেসে এসেছে, অপুর মনে-প্রানে সেই মেয়েটিই বিরাজমান। মেয়েটির নাম অনুরাধা,- অনুরাধা সেন।অপুরই এক সময়কার বান্ধবী, সবাই তাকে অনু বলে ডাকে। যেমন সুন্দর তার নাম তেমনি সুন্দর তার কথাবার্তা, তার ব্যবহার, আর তার চেহারার তো কোনো উপমা'ই হয় না। দুজনের প্রথম দেখা যখন ওরা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। আর প্রথমবারের দেখাতেই অনুর কালো-টানাটানা দুই চোখের মায়ায় আবিষ্ট হয়ে পড়ে অপু। কয়েক মুহূর্ত সে সব ভুলেটুলে কোনো এক অচেনা জগতে পাড়ি দিতে শুরু করে, আর সেই থেকেই অপুর তৃপ্ত দুটি চোখ অনুর মাঝেই বন্দি হয়ে পড়ে। এটাই জীবনের প্রথম প্রেম অপুর। অতি সাদাসিধে আর শান্ত-লাজুক স্বভাবের ছেলে অপু মুখ ফুটে অনুকে জানাতে পারেনি তার ভালোবাসার কথা। আজও সে অপুকেই ভালোবাসে, তার মুখের আদল ক্ষনে ক্ষনে অপুর চোখে হানা দেয়, ঘুমের মাঝে সে শুনতে পায় অনুর সুরেলা কন্ঠস্বর, শুনতে পায় তার হাসির শব্দ।

কোথা থেকে দুটি বছর গড়িয়ে যায়, অপুর অব্যক্ত ভালোবাসা অব্যক্তই থেকে যায়। দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইনাল এক্সাম হয়ে গেছে, স্কুল ছুটি, এবার শুধুই অপেক্ষার পালা। হ্যাঁ অপেক্ষা, তবে সে অপেক্ষা যে পরীক্ষার রেজাল্ট-এর জন্য, তা নয়; অপুর মনের মধ্যে চলছে অন্য কিছু। অনেক দিন হলো অনুর মুখ দেখেনি সে, যদিও স্বপ্নে অনু তাকে প্রত্যহ দেখা দেয়। আর তো মাত্র একটা মাস, তাদের স্কুল জীবনের অবসান ঘটবে, অপু নীরবে বসে ভাবে। সে মনস্থির করে,- রেজাল্টের দিনই অনুকে মনের কথা উজাড় করে জানিয়ে দেবে সে। কে জানে অনু কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সে কি আদেও তার ভালোবাসা গ্রহণ করবে....? এই সকল ভাবনার কুয়াশা ভিড় করতে থাকে তার চারিধারে। চাতকের মতো শুরু হয় তার অপেক্ষা আর দিন গোনা।

অবশেষে আসে সেই দিন; শুক্রবার, বেলা ১২টা। সবাই স্কুলে এসে হাজির, তবু চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করেও অনুর দেখা আর পায়না অপু। কিছুটা সময় এভাবেই গড়িয়ে যায়। একসময় অনামিকার মুখে শোনা যায় চরম এক দুঃসংবাদ,- অনুর বাবা নাকি আজ সকালে হঠাৎই heart Attack-এ মারা গেছে।

তারপর আর একটিবারও দেখা মেলেলি অনুর, সুদীপ্তা যে ফোন নম্বরটা অপুকে দিয়েছিল সেটা আজও বন্ধ। অপু যে কতো বার সেই নাম্বারে ট্রাই করেছে তার কোন হিসাব নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর অনুর মা অনুকে নিয়ে চলে গেছে মামাবাড়ি বহরমপুরে। অনু নাকি বাবার ইচ্ছা পূরণের জন্য নার্সিং পড়ছে। আজ সে বহু দূরে, ব্যাঙ্গালোর না কোথায় একটা বেশ।

সেদিন ছিল ৫ই সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস, অপুর দিনটা ভালোই কাটলো। সহ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে ঠাট্টা তামাশা আর খুদে বিচ্ছুগুলোর সাথে খেলাধুলো করে সন্ধ্যায় তার মনটা একটু যেন বেশিই ফুরফুরে লাগছিলো। বাড়ি ফিরে সে আরাম কেদারাটায় হেলান দিয়ে বসলো, হাতে সত্যজিৎ রায়-এর 'ফেলুদা সমগ্র'। হঠাৎ একসময় তার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। অপু সামনের টেবিল থেকে স্মার্ট ফোনটা তুলে এনে মুখের সামনে ধরে।তার চোখে-মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলো। সে দেখলো স্কুলজীবনের ঘনিষ্ঠ শিক্ষক গোপালবাবু তাকে একটা whatsapp গ্রুপে add করেছে, আর তারই notification এসে পৌঁছেছে এইমাত্র। অপু গ্রুপটার ভেতর ঢোকে, দেখে তার বেশ কয়েকজন প্রাক্তন বন্ধু রয়েছে সে গ্রুপে, আরও বেশ কিছু নম্বর যেগুলো অজানা। অপু একে একে dp দেখে, আর নামগুলো save করে নেয়। এভাবে সুদীপ, সঞ্জু, পিউ আরো খান চারেক বন্ধুকে নতুন করে আবিষ্কার করার পর হঠাৎ তার দেহে এক শিহরণ খেলে গেল; সে দেখল অনুর ছবি, অনুও তবে রয়েছে এই গ্রুপে। প্রথমটা খুবই উৎফুল্ল হলেও পরে না জানি কি কারণে মুষড়ে পড়ে সে। ছোট্ট দুই শব্দে সে অনুকে লিখে পাঠায়,- 

―"কেমন আছিস রে,চিনতে পারিস?" 

মিনিট খানেক বাদে ওপাশ থেকে উত্তর আসে,- 

―"আরে অপু...! তুই...! চিনতে আবার পারবোনা!কেমন আছিস?আমি তো বিন্দাস"। 

অপু লিখে দেয়,- "আমিও বিন্দাস আছি রে৷বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের পড়াচ্ছি, ওদের নিয়েই মেতে আছি৷" 

অনু কিছু বাঁকা হাসির স্টিকার পাঠিয়ে দেয় অপুকে। অপুর দুচোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে, হয়তো বহুদিন বাদে আবার অনুর সাথে কথাবার্তার সুখে, হয়তোবা অন্য কিছু।

কাঁপা কাঁপা হাতে type করে অপু,-"চাকরি পেয়ে তাহলে ব্যাঙ্গালোরেই শিফট্ হয়ে গেলি পাগলী!সে নয় ঠিক আছে,বন্ধুদের জন্য একটা পার্টিও রাখলিনা..?"

আরো বেশ কিছু লিখিত কথাবার্তা আর স্টিকারের ছোঁড়াছুড়ি চললো দুজনের মধ্যে। অবশেষে অপু সেই জমে ওঠা কথাবার্তায় ইতি টেনে দিয়ে জানালো,''O.k. best of luck৷ভালো থাকিস,এখন প্রচন্ড ব্যস্ত আছি রে, পরে কথা হবে bye...''

অপু হাতের মোবাইলটা দূরে সরিয়ে রেখে চোখ বুজলো। জানিনা হঠাৎ তার কি যে হয়ে গেল। রোদ মাখা আকাশটা যেন নিমেষেই কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। এভাবেই কয়েকটা মিনিট কেটে গেলো। অপু আরাম কেদারাটায় মাথা এলিয়ে ছাদের ঘুরন্ত পাখাটার দিকে চেয়ে রইলো, দুচোখে তার অশ্রু চিকচিক করে উঠছে। কিছুক্ষণ বাদে অপু তার বাম হাতের তালুটা হালকা ঘামে ভেজা মুখমন্ডলের উপর দিয়ে চালিয়ে নিলো, তারপর একটা ছোট্ট হাই তুলে ফোনটা চোখের সামনে আবার মেলে ধরলো। ফোনের স্ক্রিনে একটা সুন্দরী মহিলার ছবি ভেসে উঠলো, হ্যাঁ অনু,- অনুরাধা সেন। কি অপরূপটাই না লাগছে তাকে, বাল্যকালে যেমনটি ছিল তার চেয়েও ঢের সুন্দর। ঘন কালো দীর্ঘ তার চুল, পরনে ডাক্তারি পোশাক, সেই টানাটানা দুখানা চোখ, আর সবচেয়ে সুন্দর করেছে তার সিঁথির রাঙ্গা সিঁদুর। হ্যাঁ অনু আজ বিবাহিতা৷ওই যে পাশে কাঁধে হাত দিয়ে হাসিহাসি মুখে অনুর পাশে বসে, উনিই অনুর স্বামী। অপুর যেন কেমন একটা হয়ে গেল, দুচোখ জলে ভেজাতে গিয়েও ঠোঁটের ফাঁকে এক মৃদু সরল হাসি খেলে গেল। সে আনমনে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,-" অপূর্ব", তারপর আবার আরাম কেদারায় টান হয়ে শুয়ে চোখ বুজলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance