Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Siddhartha Singha

Fantasy

1  

Siddhartha Singha

Fantasy

মায়া-কাজল

মায়া-কাজল

5 mins
9.6K


কলিং বেল বাজতেই দরজার কাছে দৌড়ে গেল রিমি--- বাবা এসেছে বাবা এসেছে…

গোড়ালি উঁচু করে সামনের আঙুলগুলোর ওপর ভর দিয়ে লম্বা হয়ে নব ঘোরাল। দরজার একটা পাল্লা খুলতেই ও আঁতকে উঠল। চিৎকার করে দু’হাতে মুখ ঢেকে পিছন ফিরে দৌড়ে--- বাঘ বাঘ বাঘ...

দৌড় তো দিল, কিন্তু সে এখন যাবে কোথায়? ঘরে মা ছিলেন। মায়ের কোলের মতো নিরাপদ জায়গা আর কোথায় আছে! কিন্তু সেই মা-ই তো তাকে সাজাতে-সাজাতে হঠাৎ হরিণ হয়ে গেছেন।

বাঘের চেয়ে হরিণ অনেক ভাল। তাই ছুটে এসে সেই হরিণকেই জাপটে ধরল সে। তার পিছু পিছু ঢুকলেন সেই বাঘটা। জুতো না-খুলেই সোজা ঘরে ঢুকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, রিমি ও ভাবে দৌড়ে এল কেন?

--- তুমি এসে গেছ, দেখো না, সেই তখন থেকে... কথা শেষ করতে পারলেন না রিমির মা। গলা জড়িয়ে এল। জাপটে থাকা রিমির মাথায়-পিঠে হাত বোলাতে লাগলেন।

এর কাছ থেকে তার কাছ, তার কাছ থেকে ওর কাছে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ল রিমির খবর। যে তার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে, তাকেই নাকি সে কোনও না-কোনও জন্তুনজানোয়ার, পশুপাখির আদলে দেখছে।

আস্তে আস্তে রিমিকে দেখতে ভিড় জমতে লাগল বাড়িতে। এল পাড়াপড়শি আত্মীয়স্বজন। এমনকী তার বাবার অফিসের লোকজনও। বাবার অফিসের বসকে দেখে ওর মনে হয়েছিল, একটা ধূসর রঙের ঘোড়া। রাঙামাসিকে মনে হয়েছিল, পেখমমেলা ময়ূর। পাশের বাড়ির প্রিয় বন্ধু প্রিয়াকে মনে হয়েছিল প্রজাপতি।

কেউ কোনও কথা বললেই চোখ-মুখ কুঁচকে দু’হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরেছে কান। কারও কথা তার কাছে মনে হয়েছে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, কারও কথা কোকিলের কুহু কুহু, আবার কারও কথা মনে হয়েছে সাপের হিস্ হিস্... রিমির খাওয়াদাওয়া বন্ধ। ঘুম বন্ধ। বন্ধ করে দিতে হয়েছে স্কুলও। সারাক্ষণ কী একটা ভয়ে সে সিঁটিয়ে থাকছে। আর যত দিন যাচ্ছে, ততই তাকে দেখতে ভেঙে পড়ছে গোটা পাড়া। এ পাড়া সে পাড়া। ভিড় উপচে পড়ছে বাড়িতে। সামাল দেওয়া দায়।

রিমিকে তার মা একটা ঘরে সামলাচ্ছেন। ঘরটা রাস্তার ধারে। সেই ঘরের জানালায় টান টান করে টেনে দেওয়া পর্দা। পর্দাটা একটু খাটো। নীচের দিকে সরু একচিলতে ফাঁক, সেই ফাঁক দিয়ে ওকে দেখার জন্য কী হুড়োহুড়ি। যেন রিমিকে নয়, একটা আজব জীব দেখতে এসেছে ওরা।

এ বলছে হাওয়া লেগেছে। ও বলছে জিনে পেয়েছে। সে বলছে মসজিদ থেকে জলপড়া এনে খাওয়াতে।

রিমির মা ইতিমধ্যেই গঙ্গাজলের ছিটে দিয়েছেন কত বার, হিসেব নেই। স্নান করিয়েছেন বেশ কয়েক বার। ঠাকুরের আসনের ঘট থেকে ফুল নিয়ে সেটা ধুইয়ে খাইয়েছেন বার কতক। যে যা বলছে তা-ই করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।

অবশেষে ডাকা হল হরিপদ ওঝাকে। মেয়ে তখন ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়েছে। ওর দু’পাশে দু'-তিনটে করে বালিশ দিয়ে উঁচু করে দেওয়া হয়েছে। যাতে পাশ ফিরতে গিয়ে পড়ে না যায়। তাকে পাহাড়া দিচ্ছে মাসি পিসি মামি কাকি ছাড়াও পাড়ার মেয়ে-বউ-বুড়িরা। বয়স্ক দু'-চার জন পুরুষও রয়েছেন তাদের মধ্যে।

ফিসফাস কথায় আর শ্বাস-প্রশ্বাসে ঘরটা যেন কেমন হয়ে উঠেছে।

পাশের ঘরে তখন কেবল রিমির মা-বাবা আর হরিপদ ওঝা। চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনি জানতে চাইলেন, এটা কখন থেকে ওর শুরু হয়েছে?

এ ক’দিনেই একদম ভেঙে পড়া দিশেহারা রিমির মা বলতে শুরু করলেন--- ওকে স্নান করিয়ে এনে জামাকাপড় পরাচ্ছিলাম, তা জামাকাপড় পরানোর আগে পাউডার-টাউডার দিয়েছি। টিপ-ফিপ পরিয়েছি, তখনও কিছু না, চোখে কাজল দিতেই ও কেমন ভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর ও রকম চাহনি আমি কোনও দিনও দেখিনি। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ও এ-দিক ও-দিক তাকিয়ে বলল, হ… রি… ণ। সেই থেকেই ও আমাকে হরিণ দেখছে। বাবাকে বাঘ দেখছে। ওকে এটা দেখছে। তাকে সেটা দেখছে। রিমির মা বেশ গুছিয়েই কথাগুলো বললেন। 

--- ওই কাজল পরানোর পর থেকেই? ওঝা ফের প্রশ্ন করলেন।

--- হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।

--- ওটা কীসের কাজল? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন ওঝা।

---কীসের মানে… আসলে ওটা তো আমি পাতিনি। দিন কতক আগে এক বেদেনি এসেছিল। তার সঙ্গে কয়েকটা ঝাঁপি-টাপি ছিল। সাপ-টাপ ছিল। মা মনসার নামে সিধে চাইল। তা আমি একটু চাল, দু'-তিনটে আলু আর একটু সরষের তেলও দিলাম। ও শিকড়-বাকড় মাদুলি দিতে চাইছিল। আমি নিতে না চাওয়ায়, ঝোলা থেকে বাটির মতো দেখতে একটা সমুদ্রের ফেনা বার করল। কচুপাতা দিয়ে ঢাকা। সেটা থেকেই একটা ছোট্ট সামুদ্রিক ঝিনুকে করে তুলে আমাকে দিয়ে বলল, এই কাজলটুকু রাখো। রিমি তখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে। ওকে দেখিয়ে বলল, ওকে পরিয়ো। এ কাজল আর কোথাও পাবে না। বারো ভূতের মেলায় অপঘাতে মরা ডোম-কন্যার খুলিতে মাহেন্দ্রক্ষণে পাতা কাজল। এ কোথাও পাবে না গো, এ কোথাও পাবে না। এটা পরলে ওর চোখ খুলে যাবে। যার চরিত্র যেমন, ও তাকে সে রকমই দেখবে। তার গলার স্বরও সেই রকমই শুনবে। তখন কী আর বুঝেছিলাম যে, এ রকম হবে… শেষের কথাগুলো কেমন কেঁপে কেঁপে গেল। আঁচলের কোণ দিয়ে চোখের কোল মুছতে লাগলেন রিমির মা।

--- কোথায় সেটা? দেখি। ওঝা চাইতেই রিমির মা তাড়াতাড়ি উঠে গেল ড্রেসিং টেবিলের কাছে। বেদেনির দিয়ে যাওয়া কাজলের ঝিনুকটা ড্রয়ার থেকে বার করে এনে ওঝার হাতে দিল।

ওঝা ঝিনুকটা এ দিক ও দিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাল করে দেখতে লাগলেন। তার পর তিন বার ফুঁ ফুঁ করে বাঁ হাতে ঝিনুকটা ধরে ডান হাতের মাঝের আঙুল তিন বার কাজলে ঠেকিয়ে নিজের চোখে দিলেন। চোখে হাত দিয়ে হাত নামাবার সময়টুকুও পেলেন না। কয়েক বার পিটপিট করেই বড় বড় হয়ে উঠল তাঁর চোখ। একবার রিমির বাবার দিকে তাকালেন, একবার মায়ের দিকে। রিমির বাবাকে ওঝার মনে হল মোরগ। মাকে খরগোশ। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। ঝোলাঝুলি ফেলেই দ্রুত হাঁটা দিলেন সদর দরজার দিকে। যেতে যেতে বাঁ দিকের পাশের ঘরে চোখ পড়ল। লোক নয়, ওঝার মনে হল, গভীর জঙ্গল থেকে একটা-একটা করে জন্তু-জানোয়ার তুলে আনা হয়েছে এখানে। আর এক মুহূর্ত নয়, দরজা হাট করে খোলাই ছিল, বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দড়াম করে পাল্লা দুটো টেনে তির বেগে ছুট লাগালেন রাস্তায়।

ওঝার পিছু-পিছু ছুটে গেলেন রিমির বাবা। তার পিছু-পিছু রিমির মা। পাশের ঘরে ছিল যারা, দৌড়াদৌড়ি দেখে তারাও বেরিয়ে এল পথে। ওঝা ততক্ষণে অনেক অনেক দূরে চলে গেছেন। ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

ওঁর সঙ্গে ছুটে কি আর রিমির বাবা-মা পারবেন? কিছুটা গিয়ে ফিরে আসতে লাগলেন ওঁরা। আর ভাবতে লাগলেন, ওঝার হাতেই তো রয়ে গেল কাজলের সেই ঝিনুকটা। তবে কি এই কাজলটার জন্যই এত কিছু! এখন তো রিমি ঘুমিয়ে আছে। তা হলে কি আলতো হাতে আস্তে আস্তে করে ওর চোখের কোল থেকে মুছে দেবে কাজল?ভাবতে ভাবতেই রিমির ঘরের দিকে এগোতে লাগলেন ওঁরা। রিমির বাবার বুকে তখন কাঁটার মতো খচখচ করে বিঁধছে একটা সংশয়, ওঝার হাতের ওই ঝিনুকটা যদি পড়ে যায়, কিংবা ওঝা নিজেই যদি ফেলে দেয় ছুড়ে, আর সেটা কুড়িয়ে পেয়ে আবার যদি কেউ চোখে দেয়? তখন? 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy